ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব,
পরস্পরের মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা ইসলামের শিক্ষা।
সম্পর্ক বজায় রাখতে আমরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করি। এরমধ্যে একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ
একটি পদ্ধতি। সাক্ষাতের সময় প্রথমেই আমরা সালাম বিনিময় করি এবং মুসাফাহা করি। এ সম্পর্কে
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা করো,
এতে তোমাদের অন্তরে বিদ্যমান প্রতিহিংসা
ও বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে। একে অন্যকে হাদিয়া প্রদান করো,
এতে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে এবং শত্রুতা
ও ঘৃণা দূরীভূত হবে।’ (আবু দাউদ : ৫২১২)।
হজরত বারা বিন আযেব রা. বলেন, ‘পরিপূর্ণ অভিবাদন হল তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তোমার মুসাফাহা
করা।’-(আল-আদাবুল মুফরাদ ৯৬৭)
হাদিসে আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘দুজন মুসলমান যখন সাক্ষাতে মুসাফাহা করে,
তাদের হাতের বন্ধন মুক্ত হওয়ার আগেই
দুজনের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়।’ -(মুসনাদে আহমাদ : ৩/১৪২)
আল্লাহর রাসুল (সা.) এবং সাহাবায়ে-কেরাম নিয়মিত মুসাফাহা করতেন।
আবুল খাত্তাব কাতাদাহ রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-কে জিজ্ঞেস করলাম,
রাসূল সা.-এর সাহাবিদের মধ্যে কি মুসাফাহা
করার প্রথা ছিল। তিনি বলেন, হ্যাঁ। (বুখারি, ৬০৬৩)
আরেক হাদিসে হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত,
আল্লাহর রাসূল সা: বলেন,
এক ব্যক্তি বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল,
আমাদের মধ্যে থেকে কেউ তার ভাইয়ের
সঙ্গে কিংবা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার সামনে কি মাথানত করবে?
তিনি বললেন,
না। সে বলল,
তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দেবে?
তিনি বললেন,
না। সে বলল,
তাহলে কি তার হাত ধরে তার সাথে মুসাফাহা
করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তিরিমিজি, ২৭২৮)
নিয়ম হলো- দুই হাতে মুসাফাহা করা। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)
বলেন, (মুসাফাহার সময়) আমার হাতটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুই হাতের মধ্যে ছিল। (বুখারি,
হাদিস : ৫/২৩১১) আর মুসাফাহার সময়
এ দোয়া পড়বে— ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম।’ মুসাফাহার পর
হাত বুকে লাগানোর বিধান নেই, জরুরিও নয় বটে।
পুরুষদের মতো মহিলাদের জন্য পরস্পর মুসাফাহা করা সুন্নত। এই
সুন্নতের প্রচলন এবং প্রচার-প্রসার করা উত্তম কাজ। তবে পুরুষের জন্য নিজ স্ত্রী ব্যতীত
অন্য মাহরাম মহিলার সাথে মুসাফাহা থেকে বিরত থাকা ভালো। তবে কারণবশত কুমন্ত্রণা ও কুধারণা
থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা অবস্থায় শুধু মাহরামদের সাথে মুসাফাহার অনুমতি থাকলেও গাইরে
মাহরামের সাথে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ৪/২৬৬০,
আদদুররুল মুখতার ৬/৩৬৭
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
১. নারী ও পুরুষের ময়ানাকার
পদ্ধিতি একই রকম। মুয়ানাকা করার সুন্নত পদ্ধতি হলো একে অপরের ডান দিকের ঘাড়ের সঙ্গে
ঘাড় মেলানো। বুকের সঙ্গে বুক মিলে গেলে কোনো সমস্যা নেই। তবে মুয়ানাকা শুধু একবার করতে
হয়। তিনবার করার কথা হাদিস বা ফিকহের কোনো কিতাবে উল্লেখ নেই। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৯/৭৭)
মুয়ানাকা করার সময় এই পড়া
উচিত—আল্লাহুম্মা জিদ মুহাব্বাতী লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহি। অর্থাৎ
আল্লাহ আমাদের মধ্যে আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দিন। (জামেউস সুনান
: ১৫৯)
সুতরাং শুধু গালের সাথে গাল
মেলালে সুন্নাহ আদায় হবে না।
২. এমন ছোট বয়সের বাচ্চাদেরকে
হেকমতের সাথে কৌশলে বুঝিয়ে দিতে হবে অথবা তার দৃষ্টি ভিন্ন দিকে আকর্ষণ করার জন্য
চেষ্টা করতে হবে। তাকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। কারণ, এত ছোট বয়সে এ বিষয়গুলো
তাদের বোধগম্য হবে না এবং এগুলো তাদের সাথে
এই বয়েসে শেয়ার করাও উচিত না।
৩. জানাযা নামাযে সালাম ফিরানোর
সময় হাত কখন ছাড়বে- এ সম্পর্কে ফিকহবিদগণ থেকে দুই ধরনের মত রয়েছে। একটি মত হল, চতুর্থ তাকবীর বলার পর উভয় হাত ছেড়ে
দিবে এবং এরপর সালাম ফিরাবে। আরেকটি মত হল, উভয় সালাম ফিরানো পর্যন্ত হাত বেঁধে রাখবে।
সালাম ফিরানোর পর উভয় হাত ছেড়ে দিবে।
সুতরাং জানাযা নামাযে সালাম
ফিরানোর সময় উপরোক্ত যে কোনো পদ্ধতিই অবলম্বন করা যেতে পারে।
(খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫; আসসিআয়াহ ২/১৫৯; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/২৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৭-৪৮৮) আরো বিস্তারিত
জানুন:- https://ifatwa.info/34502/