পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভালো করে দেখে নিন, সে ইবাদতগুজার ও অনুগত স্বভাবের কিনা। সে সময়মতো নামাজ পড়বে এবং নফল নামাজ ও রোজার পাবন্দি করবে। কুরআন তিলাওয়াত করা ও মুখস্থ করার প্রতি আগ্রহী হবে। আবার সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলোও ঠিকঠাক আদায় করবে। এগুলো জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়া যেতে পারে পাত্রী দেখার সময়:
কতটুকু কুরআন মুখস্থ আছে?
নফল নামাজের মধ্যে কোনোটা পড়া হয় কি না? তাহাজ্জুদ বা ইশরাক?
জুমআর দিন সূড়া কাহফ পড়া হয় কি না?
.
সবগুলোর উত্তর 'হ্যাঁ'-ই হতে হবে, তা নয়। তবে এতে করে পাত্রীর দ্বীনদারির একটা আইডিয়া করা যাবে।
নবীজি (ﷺ) বলেন: 'যে নারী সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, রমযান মাসে রোজা রাখবে, নিজের সতিত্ব রক্ষা করে চলবে এবং স্বামীর অনুগত থাকবে, কিয়ামতের দিন তাঁকে বলা হবে, "তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে মন চায় সেদিক দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারো।"' (আহমাদ, ১৬৬১)
.
কোন একজন ব্যক্তিকে চেনার অন্যতম উপায় হলো তার বন্ধু/বান্ধবীকে চেনা। কারণ, মানুষ সে ধরনের লোককেই ফ্রেন্ড বানায়, যাকে সে ভালোবাসে এবং যার আচরণ ও চলাফেরায় সে মোটাদাগে সন্তুষ্ট।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— ‘ব্যক্তি তার বন্ধুর চালচলন অনুসরণ করে। সুতরাং, তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ করে,সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে!’’ (ইমাম তিরমিযী ২৩৭৮,আবূ দাঊদ ৪৮৩৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯২৭, হাদিসটি হাসান)।
সুতরাং, পাত্র/পাত্রী কাদের সাথে ঘনিষ্ঠ, সেদিকে খেয়াল করুন। তাদের খোঁজ নিন।
পাত্র/পাত্রী কোন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে সেই এলাকায় বা হোস্টেল, আবাসিক হল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জায়গাতে খোঁজ নিলে প্রকৃত অবস্থা অনেকটাই বুঝা যায়। কারণ, এসব স্থানে সে চাইলেও মুখোশ পরে থাকতে পারবে না। তার প্রকৃত অবস্থা লোকজন জানবেই। বিশেষ করে রুমমেট বা ক্লাসমেটদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম আলেম শাইখ ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: মেয়ের অভিভাবকের উপর ফরজ হচ্ছে- প্রস্তাব দেয়া ছেলের দ্বীনদারি ও চারিত্রিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া। যদি ভালো তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দিবে। আর যদি বিরূপ তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকবে। যদি আল্লাহ দেখেন যে, এই অভিভাবক শুধু দ্বীনদারি ও চারিত্রিক কারণে এই ছেলের কাছে বিয়ে দেয়নি তাহলে তিনি অচিরেই তার মেয়ের জন্য দ্বীনদার ও চরিত্রবান ছেলের ব্যবস্থা করে দিবেন।(শাইখ উসাইমীন (রহঃ) এর নুরুন আলাদ দারব ফতোয়া সংকলনে; বিবাহ/পাত্র নির্বাচন/প্রশ্ন নং-১৬ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৪০৫৪)
.
স্থানীয় মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন থেকে ধারণা নেওয়া।
পাত্রী চেনার ক্ষেত্রে খুব ভাল একটি উপায় হতে পারে, পাত্রীর মা। কারণ পাত্রীর চরিত্র দেখার আগে তার বাপ-মায়ের চরিত্রও বিচার্য।
বাবা-মা ও পরিবারের লোকদের সাথে পাত্র/পাত্রীর আচরণ ও সম্পর্ক যাচাই করতে পারলে, সেটি দিয়েও অনেক কিছু অনুমান করা সম্ভব, ইনশাআল্লাহ। কারণ, এই লোকগুলোর সাথে ব্যক্তির আসল চরিত্র প্রকাশিত হয়। তাই, এঁদের সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তি।’’ (ইমাম তিরমিযি হা/৩৮৯৫, দারিমী ২২৬০, ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৯৭৭; হাদিসটি সহিহ)
.
উমর (রা.)-সহ বিভিন্ন জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন, কয়েকটি সময় একজন ব্যক্তিকে প্রকৃত অর্থে চেনা যায়। সেগুলো হলো: (১). তার সাথে দীর্ঘ ও কষ্টকর সফর করলে, (২). তার সাথে লেনদেন করলে, (৩). তার সাথে রাগারাগি হলে এবং (৪). তার প্রতিবেশী হলে। এবার খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
কনে দেখার সময় সামনাসামনি বর এবং কনে একে অপরকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে। এগুলোর উত্তরের মাধ্যমেও ব্যক্তির ব্যাপারে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে যেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারে: জীবনের উদ্দেশ্য কী, বিয়ে কেন করতে চায়, আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ তার রাসূল ﷺ ফিরিস্তা আখিরাত, ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের বিশুদ্ধ আক্বীদা কেমন হবে? মাহরাম এবং নন-মাহরাম মেন্টেইন করে চলে কি না, সপ্তাহে কয় দিন কুরআন পড়ে, প্রতিদিন বারো অথবা দশ রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আদায় করে কি না, (কনের ক্ষেত্রে) স্বামীর আনুগত্যের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বামীর আনুগত্যের সর্বোচ্চ সীমারেখা জানে কি না ইত্যাদি।
প্রশ্নে উল্লেখিত মেয়েটি যেহেতু চেহারার পর্দা করে না, সুতরাং একথা বলা যায় যে সে এখনো পূর্ণ দ্বীনদার হয়ে উঠতে পারেনি। পূর্ণ পর্দাশীল নারী হতে পারেনি।