ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব,
হাফেজী ভুলে যাওয়া মারাত্মক
অপরাধ। হাদিস শরিফে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
بِئْسَمَا
لأَحَدِهِمْ يَقُولُ نَسِيتُ آيَةَ كَيْتَ وَكَيْتَ بَلْ هُوَ نُسِّيَ
اسْتَذْكِرُوا الْقُرْآنَ فَلَهُوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنْ صُدُورِ الرِّجَالِ
مِنَ النَّعَمِ بِعُقُلِهَا
যদি কেউ এভাবে বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি তাহলে তা তার জন্য
খুবই খারাপ। বরং তাকে তো ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা কোরআনকে স্মরণ রাখ। কারণ কোরআন
মানুষের হৃদয় থেকে পা বাঁধা পলায়নপর চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও অধিক পলায়নপর। ছাড়া
পেলেই পালিয়ে যায় অর্থাৎ স্মরণ রাখার চেষ্টা না করলেই ভুলে যায়। (মুসলিম ১৭২৬)
রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
عُرِضَتْ
عَلَىَّ ذُنُوبُ أُمَّتِي فَلَمْ أَرَ ذَنْبًا أَعْظَمَ مِنْ سُورَةٍ مِنَ
الْقُرْآنِ أَوْ آيَةٍ أُوتِيَهَا رَجُلٌ ثُمَّ نَسِيَهَا
আমার উম্মাতের গুনাহসমূহ আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কোরআনের
কোন সূরাহ বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আর দেখি নি। (আবু দাউদ ৪৬১
তিরমিযী ১৯৭৬ ইবনু খুযাইমাহ ১৯১৬)
مَا من
امْرِئٍ يَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ ثُمَّ يَنْسَاهُ إِلَّا لَقِىَ اللّٰهَ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ أَجْذَمَ
যে ব্যক্তি কোরআন শিখে ভুলে গিয়েছে,
সে কিয়ামাতের দিন অঙ্গহানি অবস্থায়
আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে। (আবু দাউদ ১৪৭৪ মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ ১০/৪৭৮)
★তবে হাফেজি ভুলে যাওয়ার দ্বারা আসলে উদ্দেশ্য কি?
এ মর্মে ইসলামী স্কলারদের অনেক মতামত
রয়েছে।
‘ভুলে যাওয়া’ শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম আবু ইউসুফ রহ.
বলেছেন, المراد
بالنسيان : أن لا يمكنه القراءة في المصحف দেখে দেখে তেলাওয়াত করার
যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলা। (মাতালিব উলিন্নুহা ১/৬০৪)
কেউ কেউ বলেন, النسيان بمعنى ترك العمل لا نسيانه بعد حفظه এখানে ভুলে যাওয়া মানে কোরআনের তিলাওয়াত ও তার প্রতি ‘আমাল থেকে
বিরত থাকা। (আল ইস্তিযকার ২/৪৮৭)
হানাফী মাযহাব মতে কোন ব্যক্তি যদি তিলাতওয়াতই ভুলে যায়,
তাহলে তার জন্য হাদীসে বর্ণিত গোনাহের
অধিকারী হবে।
কিন্তু ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মতে মুখস্ত করা অংশ ভুলে গেলেই সেই
গোনাহের অংশিদার হবে। সতর্কতা স্বরূপ ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর বক্তব্যের উপর আমল করা উচিত
বলেই মনে হয়। তাই হাফেজ সাহেবগণ কুরআন মুখস্ত করার পর ভুলে যাওয়া থেকে সতর্ক দৃষ্টি
রাখা উচিত।
عن انس
بن مالك، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ” عرضت على اجور امتي حتى القذاة
يخرجها الرجل من المسجد وعرضت على ذنوب امتي فلم ار ذنبا اعظم من سورة من القران
او اية اوتيها رجل ثم نسيها ”
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সাওয়াবসমূহ (কাজের বিনিময়গুলো) আমার সামনে পেশ করা হয়েছে,
এমনকি কোন ব্যক্তি কর্তৃক মাসজিদ থেকে
ময়লা-আবর্জনা দূর করার সাওয়াবও। অপরদিকে আমার উম্মাতের পাপরাশিও আমাকে দেখানো হয়েছে।
আমি তাতে কুরআনের কোন সূরাহ বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আর দেখিনি।
[সূনানে আবূ দাউদ, হাদীস
নং-৪৬১]
. কোরআন পড়ে ভুলে যাওয়ার কয়েকটি অর্থ হতে পারে। ১. কোরআন তেলাওয়াত
শেখার পর তেলাওয়াত না করতে করতে পড়তে ভুলে যাওয়া; ২. হিফজ করার পর মুখস্ত পড়তে ভুলে যাওয়া;
৩. কোরআন তেলাওয়াত ও হিফজ করার পর
পড়া ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে কোরআনের কথা ভুলে যাওয়া এবং ৪. কোরআনের হুকুমসমূহ জানার পর
তা ভুলে যাওয়া। যেভাবেই ভুলে যাওয়া হোক তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
আপনার সব প্রশ্নের একত্রে উত্তর দেওয়া হচ্ছে। কোরআন আল্লাহর
কালাম। তাই প্রতিদিন নিয়মিত তেলাওয়াত করা, সাধ্যমতো হিফজ করার চেষ্টা করা ও কোরআনের বাণি জানার
চেষ্টা করা একজন মুসলমানের জন্য আবশ্যক। প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে প্রত্যেকদিন ৪/৫ পৃষ্ঠা করে হলেও সেই মুখস্থ পড়া
আবার আয়ত্ত্বে আনার চেষ্টা করতে হবে। এ চেষ্টা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যেতে হবে। বিগত
সময় কুরআন না পড়া বা না ধরার কারণে আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তিগফার করতে থাকবেন। আপনি
যদি এখন থেকে তাওবার পাশাপাশি নিয়মিত মুখস্থ পারাগুলো ইয়াদ করার চেষ্টা শুরু করে
দেন আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা আপনাকে মাফ করবেন। ইয়াদ ও তেলাওয়াতের মান ঠিক রাখার
জন্য আপ্রাণ চ্ষ্টো করতে হবে।