ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব:-
আরবিতে হুর শব্দটি হাওরা শব্দের বহুবচন। হাওরা শব্দটি স্ত্রীবাচক। সুরা আর রাহমানের
৭২ নম্বর আয়াতে হুর শব্দের বিশেষণ হিসেবে এসেছে ‘মাকসুরাত’। এই শব্দটিও স্ত্রীবাচক
বহুবচন। আর আরবি ভাষায় বিশেষণ ব্যবহৃত হয় বিশেষ্যের লিঙ্গ অনুযায়ী। সে হিসেবে বলা চলে, হুর একটি স্ত্রীবাচক শব্দ।
তদুপরি আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে হুরদের দৈহিক অবয়বের যেসব বিবরণ দিয়েছেন, তা নারীর অবয়বের জন্য শোভনীয়। যেমন, ‘তাদের করেছি কুমারি, সোহাগিনী,
সমবয়ষ্কা’ (সূরা ওয়াকেয়া: ৩৬-৩৭)। ‘মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সাফল্য, উদ্যান,
আঙ্গুর এবং স্ফীত স্তনবিশিষ্টা সমবয়সী বালিকা।’ (সুরা নাবা:
৩১-৩৩)
বর্ণিত আয়াতের আলোকে বলা যায়,
পবিত্র কোরআনে জান্নাত লাভকারীদের পুরস্কারের বিবরণ দিতে যেয়ে
আল্লাহ তাআলা যেসব হুরের কথা বলেছেন,
তারা হবে মানুষ সাদৃশ্য জান্নাতি নারী। সুতরাং পুরস্কারস্বরূপ
তাদের পাবেন একমাত্র জান্নাতি পুরুষেরা। এখন প্রশ্ন হলো, যেসব নারী জান্নাতে যাবেন,
তারা কী পাবেন?
সোজা উত্তর হচ্ছে,
নারীর বিষয়টি পুরুষের মতো করে খোলাখুলি আলোচনা কোরআন হাদিসের
কোথাও করা হয়নি। তবে কোরআন থেকেই দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত যে, যেসব নারী জান্নাতে প্রবেশের মহাসৌভাগ্য অর্জন করবেন; তাদের কোনো ইচ্ছা বা কোনো চাওয়া সেখানে অপূর্ণ থাকবে না। তারা সেখানে যা কামনা
করবেন,
দয়াময় প্রভু তাদের তা-ই দিয়ে তুষ্ট করবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চাবে এবং যা কিছু
তোমরা ফরমায়েশ করবে। এগুলো পাবে ক্ষমাশীল পরম দয়ালুর পক্ষ থেকে আতিথেয়তাস্বরূপ’ (সূরা
হা মিম সাজদা: ৩১)। আরও ইরশাদ হয়েছে,
‘সেখানে রয়েছে যা কিছু মন চায় এবং যা কিছুতে নয়ন তৃপ্ত হয়। তোমরা
সেখানে চিরস্থায়ী হবে।’ (সুরা যুখরুফ: ৭১)
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে,
উপরোক্ত আয়াতগুলো নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। নারীর জন্য
পুরুষের মতো আলাদা ঘোষণা নেই। আলেমদের মতে, এর কারণ সম্ভবত এমন- যৌন বিষয়ে দুনিয়াতে পুরুষরা
যথেষ্ট খোলামেলা। কিন্তু নারীরা প্রকৃতিগতভাবে রক্ষণশীল মনোবৃত্তির ও যথেষ্ট লাজুক।
পুরুষদের প্রাপ্তির আলোচনাকে যেমন বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে, নারীদের প্রাপ্তিকে তেমন বিস্তারিত আলোচনা করলে নারীরা চরম লজ্জায় পড়ে যেত কিংবা
বিব্রতবোধ করত। হয়ত আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীর সামনে নারীদের লজ্জায় ফেলতে চাননি, সবার সামনে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাননি- তাই নারীদের প্রাপ্তির বিস্তারিত
আলোচনাকে সযত্নে এড়িয়ে গেছেন।
আবার,
বয়স,
বুদ্ধি ও পরিবেশের ভিন্নতায় মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় ভিন্নতা থাকে।
একই মানুষের ৪ বছরের শৈশবের চাওয়া,
১২ বছরের বয়সসন্ধিক্ষণের চাওয়া, ২১ বছরের তারুণ্যের চাওয়া,
৪০ বছরের পরিণত বয়সের চাওয়া আর ৬০ বছরের বার্ধক্যের চাওয়া এক
হয় না। তেমনিভাবে নারীরা জান্নাতে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে গিয়ে কী চাইতে পারেন, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। তাই তাদের সব চাওয়া পূরণ করার ওয়াদাই যথার্থ।
আবার এমনও হতে পারে- পুরুষদের বেশি আসক্তি থাকে নারীদের প্রতি। এ কারণে কোরআনে
পুরুষদের জন্য হূরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নারীরা স্বভাবগতভাবে মনের মতো একজন পুরুষই
কামনা করে থাকেন,
পুরুষের মতো অসংখ্যজনকে তারা কামনা করেন না। তাছাড়াও তাদের আকাঙ্ক্ষার
বিষয় শুধু স্বামীর সঙ্গে কাটানো নয়,
বরং ফুল,
সৌন্দর্য,
সাজগোজ,
বেড়ানো কতকিছুতেই তাদের মন খুশি হয়। তাই নারীর জন্য একাধিক পুরুষ
স্বামীর কথা উল্লেখ করা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। বরং তারা যা চাবেন বা কামনা করবেন তা-ই
পাবেন বলে আল্লাহ তাআলার ওয়াদাই সবচেয়ে সুন্দর ও অর্থবোধক।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা না করলেই নয়। তা হলো- যৌনতৃপ্তি
কিন্তু জান্নাতের প্রধান প্রাপ্তি নয়। বরং জান্নাতের প্রধান আকর্ষণ হলো- আল্লাহ তাআলার
দিদার লাভ বা দর্শন। যা দুনিয়াবি অন্তরে উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না। জান্নাতে নারী-পুরুষ
সবাই অধীর আগ্রহে প্রতিটি মুহূর্তে অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকবেন- একটি স্বপ্নীল সময়ের
জন্য। সেই সময়টা হচ্ছে মহান মালিকের সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্ত। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্য কোনো কিছুই জান্নাতবাসীদের নিকট মহান আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে অধিক প্রিয়
হবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৬৭)
তথাপি জান্নাত-জাহান্নামের বিষয়ে দলিল ছাড়া শুধুমাত্র অনুমাননির্ভর হয়ে কোনো আলোচনা
করা অনুচিত। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং ইসলামি স্কলারদের অধিকাংশই যেখানে নীরব থেকেছেন, সেখানে আমাদেরও উচিত নীরব থাকা। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ঈমানের সঙ্গে
সৎকর্মে আত্মনিয়োগ করাই নারী-পুরুষ সকলের কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্ণ ঈমানের সঙ্গে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।
জান্নাতের অসংখ্য নেয়ামতরাজির সঙ্গে তাঁর দর্শন পাবেন—এমন মহাসৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
ভাই/বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত বিষয়গুলো আপনি কোন কিতাবে
পড়েছেন? অনুগ্রহ পূর্বক কমেন্টে রেফারেন্স দিলে ভালো হয়। বিষয়টি আমরা তাহক্বীক করে ফাইনাল উত্তর
দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।