বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/5483/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,
পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণ করার সময় হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আ.
ও হযরত ইসমাঈল আ. আল্লাহ তাআলার দরবারে এ দুআও করেছিলেন যে, (তরজমা) হে আমাদের রব! তাদের নিকট তাদেরই মধ্য থেকে একজন
রাসূল প্রেরণ করুন,
যিনি তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পবিত্র
করবেন।- সূরা বাকারা : ১২৯
,
উপরোক্ত আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের তিনটি উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে :
এক. আয়াত পাঠ করা,
দুই. কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেওয়া ও
তিন. মানুষের স্বভাব-চরিত্রের তাযকিয়া করা।
,
তাযকিয়ার অর্থ হচ্ছে, বাহ্যিক ও আত্মিক অপবিত্রতা থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। বাহ্যিক অপবিত্রতার
অর্থ তো সাধারণ মুসলমানেরও জানা আছে। আর আত্মিক অপবিত্রতা হচ্ছে, কুফর, শিরক, গায়রুল্লাহর উপর ভরসা, ভুল আকিদা-বিশ্বাস এমনিভাবে অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ,
দুনিয়ার মোহ ইত্যাদি।
,
যদিও কুরআন ও হাদীসে এসব বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে, তা সত্ত্বেও তাযকিয়াকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর একটি স্বতন্ত্র দায়িত্ব সাব্যস্ত করে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কেবল পুঁথিগতভাবে কোনো বিষয়ের জ্ঞানার্জন দ্বারাই বাস্তব ক্ষেত্রে
ঐ বিষয়ের প্রয়োগ-পদ্ধতি জানা যায় না এবং তাতে পূর্ণতা অর্জিত হয় না। এর জন্য
প্রয়োজন কোনো মুরব্বির তত্ত্বাবধানে অনুশীলনের মাধ্যমে তাকে অভ্যাসে পরিণত করা।
তাসাওফ ও সুলূকের ময়দানে শায়খে কামেলের তরবিয়তের উদ্দেশ্য এটিই যে, তিনি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে
অনুশীলন করিয়ে তা অভ্যাসে পরিণত করান। আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির আদিকাল থেকে শেষ নবী
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মানুষের হিদায়াত ও
সংশোধনের জন্য দুটি ধারা অব্যাহত রেখেছেন : এক, আসমানী গ্রন্থসমূহের ধারা। দুই. তা শিক্ষা দানকারী রাসূলগণের ধারা। এ দ্বারা
জানা গেল যে,
মানুষের সঠিক শিক্ষা ও তরবিয়তের জন্য শুধু কিতাব বা শুধু
মুরব্বী যথেষ্ট নয়;
বরং একদিকে খোদায়ী দিকনির্দেশনা ও খোদায়ী বিধানের প্রয়োজন।
অপরদিকে একজন শিক্ষক ও মুরব্বীরও প্রয়োজন, যিনি শিক্ষা ও তরবিয়ত দ্বারা মানুষকে খোদায়ী হিদায়াত সম্পর্কে অবহিত করে তা
তাদের অভ্যাসে পরিণত করাবেন। কারণ, মানুষের প্রকৃত শিক্ষক একজন মানুষই হতে পারে। এ কারণেই ইসলামের সূচনা যেমন
একটি কিতাব ও একজন রাসূল দ্বারা হয়েছে, তেমনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও একদিকে পবিত্র শরীয়ত অপরদিকে আল্লাহ ওয়ালাগণের
ধারা অব্যাহত রয়েছে। পবিত্র কুরআনেও এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে।-তাফসীরে মাআরিফুল
কুরআন ১/৩৩২-৩৩৬
,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ [٦٢:٢
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত।
ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। {সূরা জুমআ-২}
,
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ [٨٧:١٤
নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে,যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে। {সূরা আলা-১৪}
,
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا [٩١:٩
যে নিজেকে শুদ্ধ করে,সেই সফলকাম
হয়। {সূরা শামস-৯}
,
★আত্মশুদ্ধির
উপায়ঃ
প্রথমত: নিজের গোনাহর ব্যাপারে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করুন।
কেননা আত্মশুদ্ধির প্রথম ধাপই হল, তাওবা। পবিত্র
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা।
আশা করা যায়,
তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন
এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সূরা আত-তাহরীম ০৮)
,
এজন্য ইমাম গাজালী রহ. মিনহাজুল আবেদীনে’ লিখেছেন, ‘অতপর হে! ইবাদতকারী তোমার উপর কর্তব্য হল তুমি আল্লাহর নিকট
তাওবা কর । তাওবার কারণে আল্লাহ তোমাকে তার আনুগত্য করা সহজ করে দিবেন এবং তোমার
নেক কাজ করার তাওফীক ও সৌভাগ্য লাভ হবে।’
,
দ্বিতীয়ত: আসলে আত্মশুদ্ধির এই পবিত্র সফরের মোড়ে মোড়ে
প্রয়োজন হয় একজন পূর্ণাঙ্গ (কামেল) শায়েখের সাহচর্য বা নির্দেশনা। কারণ আত্মিক
ব্যাধিগুলো চিহ্নিত করা যার তার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা এগুলো সাধারণত অতিসূক্ষ্ম ও
অস্পষ্ট হয়ে থাকে। অনেক সময় ব্যাধি বাহ্যতঃ ভালো গুণ বলে প্রতিভাত হয়। অথচ উভয়ের
মাঝে তারতম্য করা কঠিন। যেমন অহংকার ও দাম্ভিকতা হারাম। এটা সব ধরনের আত্মিক
ব্যাধির মূল উৎস,
যা থেকে মুক্তি লাভ খুবই জরুরি। অন্যদিকে আত্মমর্যাদাবোধ
একটা মহৎ গুণ। এ গুণ অর্জন করা অপরিহার্য। এই বৈশিষ্ট্য দুটি বাহ্যত একই রকম মনে
হলেও বাস্তবে উভয়ের মধ্যে বিরাট তফাৎ রয়েছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ দু’য়ের মাঝে
তারতম্য করার শক্তি সবার নেই। এ ক্ষেত্রে কোনো কামেল বুজুর্গের সান্নিধ্য কিংবা
নির্দেশনাই সঠিক সমাধান।
,
সুতরাং জীবনের জন্য এবং হৃদয় ও আত্মার জন্য একজন রাহবার এবং
পথপ্রদর্শক গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখবেন, মোম থেকে মোম আলো গ্রহণ করে এবং প্রদীপ থেকে প্রদীপ প্রজ্বলিত হয় এটাই হলো
চিরন্তন সত্য। এ জন্য একান্ত কর্তব্য হলো, আল্লাহর জমিনে যে কোনো স্থানে আল্লাহর কোনো মুখলিস বান্দাকে আপনি খুঁজে পেলে
সেই নেক বান্দাকে আপনার পথপ্রদর্শকরূপে গ্রহণ করুন। তার নির্দেশিত পথে জীবন গঠন
শুরু করুন। অবশ্য পথপ্রদর্শক নির্বাচনের পূর্ণ স্বাধীনতা আপনার রয়েছে।
,
যেহেতু প্রবৃত্তির
ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধির জন্য একজন শায়খ বা মুরব্বির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, তাই ইসলামি-শরিয়তে নেককার ও ওলামায়ে কেরামের সংসর্গ
অবলম্বনের প্রতি জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অসৎ সঙ্গ বর্জনের জন্যও
কঠোরভাবে নির্দেশ করা হয়েছে।
,
যেমন পবিত্র কোরআনে
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ
‘যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে।’ (সূরা লোকমান ১৫)
,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।’ (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)
আরো বিস্তারিত
জানুন- https://ifatwa.info/5483/
,
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
,
জ্বী হ্যাঁ, তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধি
একই জিনিস। উপরের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আরো বিস্তারিত
জানুন- https://ifatwa.info/5483/