আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
23 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (7 points)
আসসালামু আলাইকুম,
আমার একজন বান্ধবীর পক্ষ থেকে প্রশ্ন করছি,

তাকে প্রত্যেক মাসে শশুড়বাড়ি থেকে বাবারবাড়িতে আসতে হয়। তার বাবারবাড়ি থেকে শশুড়বাড়ির দুরুত্ব মোট প্রাই ৮০ কিলোমিটার। তারমধ্যে ৮ কিলোমিটার তার হাজবেন্ড এসে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়, এবং গাড়ি থেকে নামার পর তার বাবা এসে নিয়ে যায় ১০/১২ কিলোমিটার। গাড়ির দুরুত্ব থাকে ৬৫ কিলোমিটার, যেখানে সে একা থাকে। প্রাই ১ সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ অবস্থান করে, ১৫ দিনের বেশি থাকেনা। এখন তার প্রশ্ন হলো-


১। প্রতিমাসে যদি সে এভাবে বাবার বাসায় আসে, তাহলে কি এটা সফর হিসাবে গণ্য হবে?

২। সে কি বাবার বাসায় এসে কসর স্বলাত আদায় করবে?

৩। সে কি নফল স্বলাতাদি বা তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারবে?

৪। তার এভাবে যাতায়াত করাটাকি জায়েজ হচ্ছে? যেহেতু তার স্বামী এবং বাবা অনেকটুকু এগিয়ে দিচ্ছে এবং গাড়িতে থাকার স্থানটুকু(৬৫ কিলোমিটার) সে একা থাকছে।

1 Answer

0 votes
by (583,020 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান হলো ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) তে এক দিনের জন্য গেলেও পুরো নামাজ পড়তে হবে।
    
ব্যক্তি নিজের স্থায়ী নিবাসে গেলে কখনো মুসাফির হয়না। স্থায়ী নিবাস বলে এমন স্থানকে-“যেখানে ব্যক্তির বসবাসের জন্য স্থায়ী গৃহ থাকে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে যেখানে সর্বদার জন্য থাকার নিবাস হয়”।

শরীয়তের বিধান হলো কোন স্থানে গিয়ে সেখানে যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলেও কসর পড়তে হবে। বেশি দিন থাকার নিয়ত করলে কসর করতে পারবে না।

৭৮ কিলোমিটার হল সফরের দূরত্ব। এর কম নয়। সুতরাং কেউ যদি ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরের নিয়তে বের হয় কেবল সেই ব্যক্তি কসর পড়তে পার। এরচে’কম দূরত্বের সফরের জন্য কসর পড়া জায়েজ নয়।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

সেক্ষেত্রে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ কসর করতে হবে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,

وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ

‘আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের নামাজ কসর করাতে কোনো দোষ নেই।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১০১]

হাদিস শরীফে এসেছে,

عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ – ﷺ – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি  উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)

আরো জানুনঃ 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(১.২)
প্রশ্নে উল্লেখিত বোন যদি স্থায়ী ভাবে তার স্বামীর বাসাতেই স্বামী ও সন্তানাদি নিয়ে আজীবন থাকার নিয়ত করে,নিজের বাবার বাসায় সন্তানাদি নিয়ে আজীবন থাকার নিয়ত না করে, অর্থাৎ স্থায়ীভাবে স্বামীর বাসাতেই থাকার নিয়ত করে, সেক্ষেত্রে বাবার বাসায় এসে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে সে বাবার বাসায় কসরের নামাজ আদায় করবে।

তবে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি থাকার নিয়ত করলে সে ক্ষেত্রে সে কসরের নামাজ আদায় করতে পারবে না বরং তাকে পূর্ণ নামাজই আদায় করতে হবে।

আর যদি উক্ত বোন স্বামীর বাসাকে স্থায়ী বাসা হিসেবে গণ্য না করে বরং নিজের বাবার বাসাকেই স্থায়ী বাসা হিসেবে গণ্য করে, নিজের বাবার বাসাতেই সন্তানাদি নিয়ে আজীবন থাকার নিয়ত করে, সেক্ষেত্রে তার তো স্থায়ী বাসা বাবার বাসা।

আর কোন ব্যক্তি নিজের আসল বাড়িতে আসলে সে মুসাফির হয় না, তাই উক্ত বোন নিজের বাবার বাসায় আসলে মুসাফির হবেননা। তাই বাবার বাসায় তিনি কসরের নামাজ আদায় করতে পারবেন না।

তাকে সর্বক্ষেত্রে বাবার বাসায় পূর্ণ নামাজে আদায় করতে হব।

فى رد المحتار- (الوطن الاصلى يبطل بمثله) ( قوله إذا لم يبق له بالأول أهل ) أي وإن بقي له فيه عقار قال في النهر : ولو نقل أهله ومتاعه وله دور في البلد لا تبقى وطنا له وقيل تبقى كذا في المحيط وغيره (رد المحتار-كتاب الصلاة، باب صلاة المسافر، مطلب في الوطن الأصلي ووطن الإقامة-2/614)
সারমর্মঃ ওয়াতনে আসলিতে যদি স্থায়ী আর না থাকার নিয়ত করে,এবং  পরিবার সামানা যদি সেখানে আর না থাকে,তাহলে সেটা আর ওয়াতনে আসলি থাকবেনা। 
অন্যথায় সেটা ওয়াতনে আসলি হিসেবেই থাকবে।   

আরো জানুনঃ

(০৩)
হ্যাঁ, পারবে।
এতে কোনো সমস্যা নেই।

(০৪)
এক্ষেত্রে সফরটি দিনের বেলা হলে আর রাস্তা নিরাপদ থাকলে এটি তার জন্য জায়েজ আছে।
এতে কোনো গুনাহ হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...