ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
مَثَلُ الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ
اَمۡوَالَہُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ کَمَثَلِ حَبَّۃٍ اَنۡۢبَتَتۡ سَبۡعَ
سَنَابِلَ فِیۡ کُلِّ سُنۡۢبُلَۃٍ مِّائَۃُ حَبَّۃٍ ؕ وَاللّٰہُ یُضٰعِفُ لِمَنۡ یَّشَآءُ ؕ
وَاللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ
অর্থঃ যারা আল্লাহর পথে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম যেমন একটি শস্য দানা সাতটি
শীষ উদগত করে (এবং) প্রতিটি শীষে একশ’ দানা জন্মায়। ১৯৯ আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন
(সওয়াবে) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ।
উক্ত আয়াত তথা সূরা আল বাকারা ২৬১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ
রয়েয়ে যে,
এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে স্বীয় ধন-সম্পদ
খরচ করে সে বড়ই বরকত ও পুণ্য লাভ করে থাকে। তাকে সাতগুণ প্রতিদান দেয়া হয়। তাই বলা
হচ্ছে যে, যারা আল্লাহর পথে খরচ করে অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ পালনে,
জিহাদের জন্য ঘোড়া লালন-পালনে,
অস্ত্র-শস্ত্র কেনায়,
নিজে হজ্ব করার কাজে ও অপরকে হজ্ব
করানো ইত্যাদি কাজে ধন-সম্পদ খরচ করে থাকে তাদের উপমা হচ্ছে যেমন একটি শস্য বীজ এবং
প্রত্যেক বীজে উৎপন্ন হয়ে থাকে সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে উৎপন্ন হয় একশো শস্যদানা। কি মনোমুগ্ধকর
উপমা!একের বিনিময়ে সাতশো পাবে’ সরাসরি এই কথার চেয়ে উপরোক্ত কথা ও উপমার মধ্যে খুব
বেশী সূক্ষ্মতা ও পরিচ্ছন্নতা রয়েছে এবং ঐদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে,
সৎ কার্যাবলী আল্লাহ তা'আলার নিকট বৃদ্ধি পেতে থাকে যেমন বপনকৃত বীজ জমিতে
বাড়তে থাকে। মুসনাদই-আহমাদের মধ্যে হাদীস রয়েছে যে,
আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)
বলেছেন-যে ব্যক্তি নিজের উদ্বৃত্ত জিনিস আল্লাহর পথে প্রদান করে,
সে সাতশো পুণ্যের অধিকারী হয়। আর
যে ব্যক্তি নিজের জীবনের উপর ও পরিবারবর্গের উপর খরচ করে সে দশগুণ পুণ্য লাভ করে। যে
রোগগ্রস্ত ব্যক্তিকে পরিদর্শন করতে যায় তারও দশগুণ পুণ্য লাভ হয়। রোযা হচ্ছে ঢাল
স্বরূপ যে পর্যন্ত না তা নষ্ট করা হয়। যে ব্যক্তি শারীরিক বিপদ আপদ,
দুঃখ কষ্ট,
ব্যথা ও রোগে আক্রান্ত হয়,
ঐগুলো তার পাপসমূহ ঝেড়ে ফেলে। এই
হাদীসটি হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) সেই সময় বর্ণনা করেন যখন তিনি কঠিন রোগে ভুগছিলেন এবং
লোকেরা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী শিয়রে উপবিষ্টা ছিলেন। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস
করেনঃ রাত কিরূপ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ রাত্রি অত্যন্ত কঠিন অবস্থায়
অতিবাহিত হয়েছে। সেই সময় তার মুখমণ্ডল দেয়ালের দিকে ছিল। এই কথা শোনা মাত্রই তিনি
জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেনঃ আমার এ রাত্রি কঠিন অবস্থায় কাটেনি। কেননা,
আমি এই কথা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট
শুনেছি।' মুসনাদ-ই-আহমাদের আর একটি হাদীসে রয়েছে যে, একটি লোক লাগাম বিশিষ্ট একটি উষ্ট্ৰী দান করে। রাসূলুল্লাহ
(সঃ) বলেনঃ লোকটি কিয়ামতের দিন সাত কোটি লাগাম বিশিষ্ট উন্ত্রী প্রাপ্ত হবে।মুসনাদ-ই-আহমাদের
আর একটি হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বানী আদমের একটি পুণ্যকে দশটি পুণ্যের সমান করে দিয়েছেন এবং ওটা
বাড়তে বাড়তে সাতশো পর্যন্ত হয়ে যায়। কিন্তু রোযা,
আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'ওটা বিশেষ করে আমারই জন্যে এবং আমি নিজেই ওর প্রতিদান
প্রদান করবো। রোযাদারের জন্য দু'টি খুশী রয়েছে। একটি খুশী ইফতারের সময় এবং আর একটি খুশী তার
প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময়। রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তা'আলার নিকট মিশকের সুগন্ধি হতেও বেশী পছন্দনীয়।'
অন্য হাদীসে এইটুকু বেশী রয়েছে-রোযাদার
শুধু আমার জন্যেই পানাহার ত্যাগ করে থাকে। শেষে রয়েছে রোযা ঢাল স্বরূপ।'
মুসনাদ-ই-আহমাদের অন্য একটি হাদীসে
রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ নামায-রোযা ও আল্লাহর যিকির আল্লাহর পথে খরচ করার পুণ্য
সাতশো গুণ বেড়ে যায়। মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমের (রঃ) হাদীসে রয়েছে,
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
জিহাদে কিছু অর্থ সাহায্য করে, সে নিজে জিহাদে অংশগ্রহণ না করলেও তাকে একের পরিবর্তে সাতশো
খরচ করার পুণ্য দেয়া হয়। আর যদি নিজেও জিহাদে অংশগ্রহণ করে তবে একটি দিরহাম খরচ করার
বিনিময়ে এক লাখ খরচ করার পুণ্য দেয়া হয়।' অতঃপর তিনি (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করেন। এই হাদীসটি
গারীব।আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি। (আরবি) এই আয়াতের তাফসীরে লিখিত হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে যে,একের বিনিময়ে দুই কোটি পুণ্য পাওয়া যায়। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই এর হাদীসে
রয়েছে যে, যখন আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) দুআ করেন,-হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে আরও কিছু প্রদান করুন।'
তখন(আরবি) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ
(সঃ) পুনরায় এই প্রার্থনাই জানালে (আরবি) (৩৯:১০) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সুতরাং
বুঝা গেল যে, আমলে যে পরিমাণ খাঁটিত্ব থাকবে সেই পরিমাণ পুণ্য বেশী হবে। আল্লাহ বিপুল দাতা ও
সর্বজ্ঞাতা। তিনি জানেন যে, কে কি পরিমাণ পুণ্য লাভের হকদার এবং কে হকদার নয়।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
১. যাকাত দেওয়ার খাত সমূহের ক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলছেন,
إِنَّمَا
الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا
وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ
اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
যাকাত হল কেবল (১) ফকির, (২) মিসকীন (৩) যাকাত উসূলকারী ও (৪) যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের
হক (৫) এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে ও (৬) ঋণগ্রস্তদের জন্য (৭) আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং (৮) মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আত-তাওবাহ-৬০)
সুতরাং উপরে উল্লেখিত খাত ছাড়া অন্য কাউকে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। তবে নফল সদকা বা দান যে কাউকে
করা যায় বা দেওয়া য়ায়, মুসলিম-অমুসলিম ধনী-গরীব
এক্ষেত্রে সবাই সমান, সবাইকে দান করা যায়।তবে
ফরজ যাকাত তা শুধুমাত্র গরীব মুসলমানকেই দিতে হবে,অমুসলিমকে যাকাত দিলে
যাকাতই আদায় হবে না। নফল সদকা যদিও সবাইকে
দেওয়া যায়, তথাপি নেককার মুত্তাকি পরহেজগার লোক
দেখে দেওয়া উত্তম। প্রয়োজন, স্থান, কাল, পাত্র হিসেবে কোনো সময়
মাদ্রাসা- মসজিদে দান বেশি উত্তম হবে আবার কোনো সময় গরিবকে দান করা বেশি উত্তম হবে। যেই সময়ে যার প্রয়োজন বেশি,
সেখানে দেয়া উত্তম।
২. জ্বী না এতে গুনাহ হবে না। কারণ, এটি নিয়ত মাত্র।
সাধ্যনুযায় দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত।