আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
23 views
in সালাত(Prayer) by (22 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম, আমার কয়েকটি বিষয় জানার ছিল

১. আমি আত্মীয়র বাসায় যাই বেশ কিছুদিন আগে। সেখানে অল্প কয়েকদিন থাকার নিয়ত ছিল কিন্তু বিভিন্ন কারণে মুসাফিরের সময় ১৫ দিন পার হয়ে যায় কিন্তু এতদিন থাকার নিয়ত ছিল না পরে থাকার মেয়াদ আস্তে আস্তে বেড়েছে, এমন অবস্থায় আমরা কোছর পড়েছি ১৫ দিন পার হওয়ার পরেও। এই নামাজ গুলো কি হয়েছে?

২. সেখান থেকে এসে গ্রামের বাড়ি না এসে নতুন ভাড়া বাসায় আসছি। উল্লেখ্য আমরা আত্মীয়র বাসায় যে কয়দিন ছিলাম এরমধ্যে আবার বাবা মা নতুন ভাড়া বাসায় পার হন গ্রামের বাড়ি ছেড়ে। আমরা ঢাকা থেকে নওগাঁ সরাসরি এই বাসাতেই আসছি এবং এখানেই থাকা শুরু করব। এখন আমরা কি মুকিম হয়ে গিয়েছে? উল্লেখ্য আমরা বলতে আমি এবং আমার স্ত্রী। আমি আবার কালকে ঢাকা যাবো তো এখন আমি কি মুকিম সম্পূর্ণ নামাজ ই পড়বো? আমার গ্রামের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি আবার খুব কম দূরত্বে যার জন্য আমরা সেখানে গেলেও সম্পূর্ণ নামাজ পড়ি কিন্তু এখন যদি এই নতুন ভাড়া বাসা থেকে ১৫ দিনের আগেই শ্বশুর বাড়ি যাই তাহলে কি মুসাফির হবো আমরা? যেহেতু ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যেখানে আমরা স্থায়ী ভাবে থাকতাম সেখানে না যেয়ে নতুন ভাড়া বাসায় আসছি তাহলে কি করণীয়?

আরেকটা বিষয় আমার প্রতি সপ্তাহে ঢাকা যেতে হয় তো এখানে তো পূর্ণাঙ্গ ১৫ দিন হয়তো থাকা এখনই আমার জন্য হবে। তাহলে আমার নামাজের বিধান কি হবে?? যেহেতু ঢাকা থেকে সরাসরি গ্রামের বাসা না যেয়ে নতুন বাসায় আসছি এবং এখানে স্থায়ী থাকব তবে এক টানা তো ১৫ দিন হচ্ছে না।
উল্লেখ্য নতুন ভাড়া বাসার দূরত্বও শশুর বাড়ী থেকে কাছেই এবং গ্রামের বাড়িও ভাড়া বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয় কাছেই।

৩. সিদ্ধ ডিমের দোকানে দেখা যায় মগে অল্প পরিমাণ পানি থাকে সেখানেই খোসা সহ ডিম চুবায় আবার সেটা ছিলে আরেকবার সেই পানিতে চুবায়। অনেক সময় ডিমের গায়ে ময়লা লেগে থাকে ডিমের গায়ে ময়লা মানে তো হাস বা মুরগীর বিষ্ঠা যেটা নাপাকী। তাহলে এই ডিম খাবার বিধান কি? অনেক দোকানেই দেখা যায় যারা ডিম ভেজে বিক্রি করে এক পানিতেই সব করে ভেজা হাতে ডিম ভাঙ্গে ডিমের গায়ে তো বিষ্ঠা লেগে থাকে এগুলোর বিধান কি?

৪. স্ত্রীর সাথে মাঝে মাঝে কথা বলার সময় উত্তেজনাবশত হালকা কিছু বের হয় স্বচ্ছ পানির মত। মাঝে মাঝে অল্প উত্তেজনায় ও বের হয় অনেক সময় পায়জামায় লাগলে বুঝা যায়না, অনেক সময় অল্প পরিমাণ লেগে যায়, এটা কি পরিমান লাগলে কোন সমস্যা নেই? এটা পরিমাপ করার কোনো উপায় আছে?? নাজাসাতে খফিফা যেটা তিন ভাগের এক ভাগ বলা হয় এটা একটি বিস্তারিত ভাবে বললে ভালো হয় এর দাড়া আসলে কি বুঝানো হয়েছে?

1 Answer

0 votes
by (583,020 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
শরীয়তের বিধান হলো শরয়ী সফরের দূরত্বে কোন স্থানে গিয়ে সেখানে যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলে কসর পড়তে হবে। ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন থাকার নিয়ত করলে কসর করতে পারবে না।

৭৮ কিলোমিটার হল সফরের দূরত্ব। এর কম নয়। সুতরাং কেউ যদি ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরের নিয়তে বের হয় কেবল সেই ব্যক্তি কসর পড়তে পার। এরচে’কম দূরত্বের সফরের জন্য কসর পড়া জায়েজ নয়।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

সেক্ষেত্রে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ কসর করতে হবে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,

وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ

‘আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের নামাজ কসর করাতে কোনো দোষ নেই।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১০১]

হাদিস শরীফে এসেছে,

عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ – ﷺ – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি  উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)

আরো জানুনঃ 

যদি আপনি পনেরো দিন বা তার চেয়ে বেশি  থাকার নিয়ত না করেন,বরং আজ কাল যেকোনো মুহুর্তে আপনার চলে যেতে হবে,এমনটি যদি হয়,তাহলে আপনি এই অবস্থায় যতদিন এখানে থাকবেন,মুসাফির হিসেবে কসরের নামাজ আদায় করবেন।

যদি এমন হয় যে কাল চলে যাবো বা পরশু চলে যাবো,নিয়ত যদি নির্দিষ্ট না থাকে, এইভাবে যদি কয়েকমাসও অতিবাহিত হয়ে যায়,তাহলেও ব্যাক্তি কসর এর নামাজ আদায় করবে।

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ

أو دخل بلدة ولم ينوها) أي مدة الإقامة (بل ترقب السفر) غدا أو بعده (ولو بقي) على ذلك (سنين) إلا أن يعلم تأخر القافلة نصف شهر كما مر.
(قوله: أو دخل بلدة) أي لقضاء حاجة أو انتظار رفقة.
(قوله: ولم ينوها) وكذا إذا نواها وهو مترقب للسفر كما في البحر لأن حالته تنافي عزيمته."
(باب صلوة المسافر، ج:2، ص:126، ط:ایچ ایم سعید)

সারমর্মঃ
যদি এমন হয় যে কাল চলে যাবো বা পরশু চলে যাবো,নিয়ত যদি নির্দিষ্ট না থাকে, এইভাবে যদি দুই বছরও অতিবাহিত হয়ে যায়,তাহলেও ব্যাক্তি কসর করবে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নের বিবরন মতে তো আত্মীয়ের বাসা যদি আপনার বাসা হতে ৭৮ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দূরত্বে হয়,সেক্ষেত্রে এভাবে কসর নামাজ আদায় করা ঠিক হয়েছে।
সমস্যা নেই।

(০২)
ঢাকা থেকে নওগাঁয় আপনি যে ভাড়া বাসায় সরাসরি উঠেছেন,এটা যদি আপনাদের নিজ গ্রাম বা নিজ শহরের মধ্যে না হয়ে থাকে, আর এখানে যদি আপনি ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি থাকার নিয়ত না করে থাকেন, এবং এটিকে যদি আপনি স্থায়ী নিবাস হিসেবে মনে না করে থাকেন, সেক্ষেত্রে এখানে আপনারা (আপনি ও আপনার স্ত্রী) কসর নামাজ আদায় করবেন।
 
এমতাবস্থায় যদি এই নতুন ভাড়া বাসা থেকে ১৫ দিনের আগেই সরাসরি শ্বশুর বাড়ি যান, আর শ্বশুর বাড়ি যদি আপনাদের নিজ গ্রামে না হয়ে থাকে, এবং শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি থাকার নিয়ত না করে থাকেন, তাহলে আপনি সেখানে কসর নামাজ আদায় করবেন।

আপনার স্ত্রী যদি আজীবনের জন্য আপনার বাসায় থাকার নিয়ত করে অর্থাৎ আপনার বাসাকে স্থায়ী নিবাস হিসেবে ধরে নেয়, বাবার বাসাকে স্থানীয় বাস হিসেবে না ধরে, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উল্লেখিত শুরুতে তিনিও তার বাবার বাসায় গিয়ে কসর নামাজ আদায় করবেন।

(০৩)
এক্ষেত্রে সেউ সিদ্ধ ডিম বা ভাজা ডিমে মুরগির বিষ্ঠা না পাওয়া গেলে সে ডিম খাওয়া যাবে।
তবে এরকম অস্বস্তিকর পরিবেশ হতে ডিম না খাওয়াই সতর্কতা।

(০৪)
এক্ষেত্রে তো ওযু অবশ্যই ভেঙ্গে যাবে। এবং কাপড়ে সেই নাপাকি লাগলে সেই কাপড়ও অবশ্যই নাপাক হয়ে যাবে।

তবে এখন কথা হল যদি সেই কাপড়ে এক দিরহাম থেকে কম লাগে এমতাবস্থায় সেই কাপড়ে নামাজ আদায় করা যাবে।

আর যদি এক দিরহাম বা তার চেয়ে বেশি লাগে সেক্ষেত্রে সেই কাপড়ে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে না।

উল্লেখ্য সব ছুরতেই উক্ত কাপড়টিকে পাক করা আবশ্যক।

এক দিরহাম বলতে বর্তমান ৫ টাকার কয়েন সমপরিমাণ।

এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (22 points)
ঢাকা থেকে নওগাঁয় আপনি যে ভাড়া বাসায় সরাসরি উঠেছেন,এটা যদি আপনাদের নিজ গ্রাম বা নিজ শহরের মধ্যে না হয়ে থাকে, আর এখানে যদি আপনি ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি থাকার নিয়ত না করে থাকেন, এবং এটিকে যদি আপনি স্থায়ী নিবাস হিসেবে মনে না করে থাকেন, সেক্ষেত্রে এখানে আপনারা (আপনি ও আপনার স্ত্রী) কসর নামাজ আদায় করবেন।

হযরত ২ নাম্বার উত্তর যেটা দিয়েছেন সেখানে কিছু জিনিস সংযোজন করতাম। আমার গ্রামের বাড়ি থেকে নওগাঁ নতুন ভাড়া বাড়ী বেশি দূরে না। অটো তে গেলে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট আরো কম সময়েই চলে যাওয়া যায়। নতুন ভাড়া বাড়িতে স্থায়ী ভাবেই থাকার নিয়ত। তবে আমাকে প্রতি বৃহস্পতিবার ঢাকা যেতে হয়। এইজন্য বললাম আমার তো এক নাগাড়ে ১৫ দিন থাকা হচ্ছে না।
আরেকটা বিষয় নিজ এলাকা বলতে কতটুকু এলাকা বুঝানো হয়েছে?

আরেকটা বিষয় নাজাসাতে খফিফার বিষয়টা হয়তো ভুলবশত ছাড়া পড়েছে যেটা প্রশ্নে ছিল।
by (583,020 points)
আপনার গ্রামের বাড়ি আর নতুন বাসা দুইটা তো একই গ্রামে নয়? তাই না!  উভয়টি তো আলাদা আলাদা গ্রাম?
by (583,020 points)
নতুন ভাড়া বাসায় আপনারা যে স্থায়ীভাবে থাকার নিয়ত করেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি?

আপনারা কি আজীবন এই ভাড়া বাসাতেই স্ত্রী সন্তানসহ থাকবেন?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 117 views
...