আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
42 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রহমাতুল্লহি ওয়া-বারাকাতুহ্।

সম্মানিত মুফতি,এক বোনের হয়ে প্রশ্ন করা।

তার স্বামী তার ব্যাসিক নিড পূরন করে(শখের কিছু না) আলহামদুলিল্লাহ। যেমন:প্রেগ্ন্যাসিতে খাবার, বাড়তি খাবার,ঔষধ,ডাক্তার চেকআপ,এগুলো ঠিকভাবেই করে আলহামদুলিল্লাহ। তার বাবার বাড়ি গেলেও অনেক কিছু নিয়ে যায়।মাঝে মধ্যে তার বাবার বাড়ি গেলে,পরিবারের সদস্যদের ড্রেস হাদিয়া দেয়।আপু যখন দান-সদকা করতে বলেন,সেটাও করেন।কিন্তু আপুর হাতে টাকা দিতে চায়না।বিয়ের বয়স এক বছর।খুব হঠাৎ ২০/৫০/১০০ এরকম দেয় চাইলে,তাও অনেকদিন পর পর।আপুর স্বামীর ইনকাম ওত বেশিও না।তাছাড়া পুরো ফ্যামিলির দায়িত্ব আপুর স্বামীর উপর।বাবা-মা,ভাই-বোন সবার।তাই খরচ চালাতে হিম-শিম খায়।

কিন্তুু,আপুর স্বামীর মা-বোন বিভিন্ন চল-চাতুরী  সবকিছু নিয়ে নেয়।আর, টাকাও নেয়।কিন্তু,আপুর হাত-খরচটা দিতে চায় না।চাইলে বলে,আমি তো তোমাকে সব দিচ্ছিই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে,১/ ইসলামে স্বামীর এমন সিচুয়েশন নিয়ে কী বলা আছে?

২/আপুর  সন্তুষ্ট থাকাই উচিত?

৩/নাকি হাতখরচের জন্য বারবার বলা উচিত ?

৪/এমতাবস্থায়, আপুর স্বামী যদি, আপুকে মাসিক হাত খরচ না দেয়,তাহলে কি আপুর স্বামী গুনাহ্গার হবে?

৫/স্ত্রীর মাসিক হাত খরচ দেওয়া,স্ত্রীর হক আদায়ের মধ্যে পড়ে?

৬/এমতাবস্থায়, আপুর করনীয় কী?

অনুগ্রহ করে প্রশ্নের উত্তর গুলো দিলে ইংশাআল্লহ অনেক উপকৃত হবো।

1 Answer

0 votes
by (581,430 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও সকল খরচ বহন করার দায়িত্ব স্বামীর। 

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

عَلَی الۡمَوۡلُوۡدِ لَہٗ رِزۡقُہُنَّ وَ کِسۡوَتُہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ

‘আর জন্মদাতা পিতার দায়িত্ব হ’ল ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রসূতি মায়েদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা’ (বাক্বারাহ ২/২৩৩)।

 মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَ عَاشِرُوۡہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۚ فَاِنۡ کَرِہۡتُمُوۡہُنَّ فَعَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَہُوۡا شَیۡئًا وَّ یَجۡعَلَ اللّٰہُ فِیۡہِ خَیۡرًا کَثِیۡرًا ﴿۱۹﴾ 

 ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ, আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের অধিকার রয়েছে’ (মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রুষ্ট হবে না, কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার ওপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম হাদিস : ১৪৬৯) 

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮৪)

অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)

মাসিক যা খরচ লাগে তা অবশ্যই স্ত্রীকে নিজের সম্পদ থেকে দিতে হবে।

অনেকেই স্ত্রীকে মাসিক খরচের টাকা দেন না বা অবহেলা করেন, এটা একেবারেই ঠিক না, বরং গুনাহের কাজ। 

ইসলামী শরিয়তে স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যে অধিকার সাব্যস্ত করেছে, তার সার কথা হলো : ১. পূর্ণ মোহরানা আদায় করে দেওয়া, ২. প্রয়োজনমাফিক অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ভালো ব্যবস্থা করা; ৩. স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করা; ৪. মাঝেমধ্যে মাহরাম আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া, ৫. প্রয়োজনমাফিক দ্বিন শেখানোর ব্যবস্থা করা; ৬. ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা, ৭. প্রয়োজনমতো সহবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা ইত্যাদি। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯; আল-কাবায়ের, জাহাবি, পৃষ্ঠা ১৭৫)

ইসলামী শরিয়ত মতে, বিবাহের পর থেকেই স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যেসব অধিকার সাব্যস্ত হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো স্ত্রীর ব্যয়ভার গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)

হাদিস শরিফে স্ত্রীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৫০১)

ভরণ-পোষণের পরিমাণ : ভরণ-পোষণের ব্যাপারে শরিয়ত নিরেট পরিমাপ নির্ধারিত করে দেয়নি। বরং ইসলামী শরিয়তের ভাষায় স্ত্রীকে প্রয়োজন পরিমাণ ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। এর পরিমাণটি পরিবেশ-পরিস্থিতি, অবস্থা ও স্বামীর সামর্থ্যনির্ভর। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৩/৫২৯-৫৩০, ফাতহুল কাদির : ৩/১৯৪)

মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে দীর্ঘ বয়ানের একপর্যায়ে বলেছিলেন, ‘অতএব, তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে গ্রহণ করেছ এবং তোমরা আল্লাহর হুকুমেই তাদের লজ্জাস্থানকে হালাল হিসেবে পেয়েছ...।’ (সহিহ মুসলিম : হাদিস ১২১৮)

★স্বামী যদি বিহিত কারণ ছাড়া স্ত্রী-সন্তানের তথা সাংসারিক জরুরি খরচ না করে, তাহলে স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়াও স্বামীর সম্পদ থেকে প্রয়োজনমতো অপচয় না করে খরচ করতে পারবে।

হাদিস শরিফে এসেছে, সাহাবিয়া হিনদ বিনতে উতবা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (আমার স্বামী) আবু সুফিয়ান সংসারের খরচে সংকীর্ণতাকারী, সে আমার ও আমার সন্তানের প্রয়োজন পরিমাণ খরচ দেয় না, তাহলে আমি কি তার অগোচরে তার থেকে কিছু নিতে পারি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন পরিমাণ তার অগোচরে তার থেকে নিতে পারবে। (বুখারি : হাদিস : ৫২৬৪, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭)

তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মালিকানা ভিন্ন হওয়ায় অনুমতি ব্যতীত একে অপরের সম্পদ ব্যয় করা অবৈধ। স্বামী যদি নিয়মমাফিক ভরণ-পোষণ ও স্বাভাবিক হাতখরচের জরুরত পূরণ করে থাকে, তাহলে তার কাছ থেকে তার অগোচরে টাকা-পয়সা নিয়ে নেওয়া এবং তাকে না জানিয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা বৈধ হবে না। (আল বাহরুর রায়েক : ৪/১৭৭)

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)

স্ত্রী যদি উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়, তাহলে সে যদি স্বামীর যৌথ পরিবার থেকে ভিন্ন ঘরের দাবি করে, তাহলে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে ভিন্ন ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। স্বামীর মা-বাবার সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রী বাধ্য নয়। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলে তাকে স্বামীর পরিবারের সঙ্গে একঘরে রাখা গেলেও তার পৃথক কক্ষ, টয়লেট, গোসলখানা, রান্নাঘরসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস ভিন্ন করারও দাবি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রেও স্বামীর পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রীকে বাধ্য করা যাবে না। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের হলে টয়লেট, গোসলখানা রান্নাঘর ইত্যাদি ভিন্ন দিতে বাধ্য না হলেও তার জন্য একটি পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে, যার হস্তক্ষেপ স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। ওই কক্ষে স্বামীর মা-বাবা, ভাই-বোন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে না। স্ত্রীর এ রকম কক্ষ দাবি করার অধিকার আছে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২৩, রদ্দুল মুহতার : ৩/৬০১)

এখানে আরেকটি কথাও লক্ষ্যনীয় যে ভরণ-পোষণের অর্থ শুধু এটিই নয় যে শুধু তাকে তিনবেলা খানা আর কাপড়-চোপড় ও থাকার ঘর দিলাম। বরং তাকে মাঝেমধ্যে প্রয়োজন পরিমাণে সামান্য হাতখরচও দেওয়া জরুরি। কেননা অনেক সময় দেখা যায়, এমন কিছু প্রয়োজন যা কারো কাছে চাইতে ইতস্তত বোধ হয়, তখন হাতখরচের টাকা দিয়ে পূরণ করতে পারবে। তাই স্বামীর এ ব্যাপারেও সচেতন হওয়া উচিত। তবে খরচের ক্ষেত্রে অপচয় থেকে বেঁচে থাকা সবার জন্য জরুরি। (বীবী কে হুকুক পৃ: ৪৯-৫০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(১-৬)
স্ত্রীকে তার মাসিক প্রয়োজনীয় হাত খরচের টাকা দেওয়া স্বামীর ওপর জরুরী।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্বামী যেহেতু স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় মাসিক হাত খরচের টাকা দিচ্ছেননা সুতরাং এটা তার প্রতি অবিচার হচ্ছে, স্বামী টাকা না দিলে এক্ষেত্রে স্ত্রীর অধিকার আছে স্বামী থেকে তার প্রয়োজনীয় মাসিক হাত খরচের টাকা চেয়ে নেওয়া।

চাওয়ার পরও স্বামী তার স্ত্রীর মাসিক প্রয়োজনীয় হাত খরচের টাকা না দিলে সেক্ষেত্রে স্বামীর টাকা হতে অগোচরে টাকা নেওয়ার বৈধতাও হাদিসে রয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...