ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
বিনিময় দিয়ে কুরআন পড়ানো ঈসালে সওয়াবের একটি মুবাহ পদ্ধতি হল
কুরআন তিলাওয়াত। এ ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে নিজে তিলাওয়াত করা। নিজের তিলাওয়াতের মধ্যে
মাইয়িতের প্রতি যে মহব্বত ও আন্তরিকতা থাকে অন্যের তিলাওয়াতে তা সবসময় থাকা জরুরি নয়
এবং নিজের তিলাওয়াতের পর দুআ করলে যে ব্যথা ও জ্বলন অনুভব হয় অন্যের তিলাওয়াতের পর
তা সর্বদা থাকা অনিবার্য নয়। কিন্তু সমাজে অন্যকে দিয়ে কুরআন পড়ানোর রেওয়াজই বেশি।
তা-ও আবার বিনিময় দিয়ে। অথচ কুরআন তিলাওয়াত নামায-রোযার মত ‘ইবাদতে মাকসূদা’র অন্তর্ভুক্ত।
আর এধরনের ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয। হাদীসে এ বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক
করা হয়েছে।
দু-একটি হাদীস লক্ষ করুন-
আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন
পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। এর বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর
দ্বারা সম্পদ কামনা করো না। -মুসনাদে আহমাদ,
হাদীস ১৫৫২৯
ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন
পড় এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। তোমাদের পরে এমন এক জাতি আসবে যারা কুরআন পড়ে মানুষের
কাছে প্রার্থনা করবে। -মুসনাদে আহমাদ,
হাদীস ১৯৯১৭
থানবী রাহ.
লেখেন,
دستور
ہے کہ قبر پریا گھر پر حفاظ کو بٹھلا کر کہیں دس روز کہیں چالیس روز یا کم وبیش قرآن
مجید ختم کراتے ہیں، پھر ان کو کچھ اسباب کچھ نقد وغیرہ دیتے ہیں، گو لوگ اس کو کوشش
کرکے درست بنانا چاہتے ہیں، مگر بات کھلی ہوئی ہے کہ جب مقصود جانبین کا اجرت دینا
لینا ہے اور طاعت پر اجرت لینا جائز نہیں، اس لئے یہ فعل ہر گز درست نہیں، نہ ایسے
قرآن پڑھنے کا ثواب ملے ، جب پڑھنے والےکو نہ ملا تو مردہ کو کیا پہنچے گا.
প্রচলন আছে যে,
কবরের কাছে বা ঘরে হাফেযদের দিয়ে কোথাও দশদিন পর কোথাও চল্লিশদিন
বা তার চেয়ে কিছু কমবেশি পর কুরআন মাজীদ খতম করানো হয়। তারপর তাদেরকে কিছু সামগ্রী, কিছু নগদ অর্থ ইত্যাদি প্রদান করা
হয়। মানুষ এটাকে বৈধ বানানোর চেষ্টা করলেও বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিষ্কার। কেননা উভয় পক্ষের
উদ্দেশ্য বিনিময় দেওয়া-নেওয়া। অথচ নেক কাজের বিনিময় নেওয়া নাজায়েয। তাই এ কাজটা কিছুতেই
জায়েয নয়। এরূপ কুরআন পড়ার কোনো সওয়াব হবে না। তো যদি খোদ তিলাওয়াতকারীই সওয়াব না পায়
তাহলে মাইয়িত কী পাবে? -ইসলাহুর রুসূম
পৃ. ১৪৬
তিনি অন্যত্র বলেন,
بعض لوگ کہتے
ہیں کہ پھر ایصال ثواب کس طرح کریں؟ جواب یہ ہے جس طرح سلف صالحین کرتے تھے، بلا تقیید
وتخصیص اپنی ہمت کے موافق حلال مال سے مساکین کی خفیہ مدد کریں، اور جو کچھ توفیق ہو
بطور خودقرآن وغیرہ ختم کرکے اس کو پہنچادیں.
কতক মানুষ বলে,
তাহলে আমরা ঈসালে সওয়াব কীভাবে করব? জবাব হল, যেভাবে সালাফে সালেহীন করতেন। বিশেষ
দিনক্ষণ বা বিশেষ নিয়ম-নীতি নির্দিষ্ট না করে নিজ সামর্থ্য অনুসারে হালাল সম্পদ থেকে
গোপনে গরীব-মিসকীনদের সাহায্য করুন এবং যতটুকু তাওফীক হয় কুরআন শরীফ ইত্যাদি খতম করে
এর সওয়াব পৌঁছে দিন। -প্রাগুক্ত পৃ. ১৪৬
আরো দেখুন : শিফাউল আলীল ওয়া বাল্লুল গালীল ফী হুকমিল ওয়াসিয়্যাতি
বিল খাতামাতি ওয়াত্তাহলীল (রাসায়েলে ইবনে আবেদীন) ১/১৫৩-১৯২; রাফিউল ইশকালাত আলা হুরমাতিল ইস্তিজার
আলাত্তাআত, মুফতী ফয়যুল্লাহ
রাহ. (মাজমূআয়ে রাসায়েলে ফয়যিয়্যা ৪র্থ খণ্ডের সাথে প্রকাশিত) (মাসিক আলকাউসার)
আর বিনিময় না হয়ে হাদীয়া দেয়া হলে সেক্ষেত্রে কথা এই যে,
হাদিয়ার একটি আদব হল,
সব ধরনের বিনিময় ও উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হওয়া। তা হবে শুধু মহব্বত
ও ইকরাম হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য। তবে কোরআন খতমের পর হাদিয়া প্রদান
এর অর্থ এটা হয় না যে, হাদিয়াটি
কোরআন খতমের বিনিময় হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কারো নিয়ত যদি বাস্তবেই এমন
হয়ে থাকে তাহলে তা খুবই আপত্তিকর। কারণ,
কোরআন খতমের কোনো বিনিময় হয় না। কোরআন পড়া খালেছ ইবাদত। তাই
কোরআন খতমের বিনিময় হিসেবে কোনো কিছু নেওয়া যাবে না।
গ্রামাঞ্চলের মসজিদগুলোতে এবং শহরেরও কোনো কোনো মসজিদে দেখা
যায় যে, ইমাম ছাহেবের
কাছে মৌখিকভাবে বা লিখিত আকারে এই আবেদন এসে থাকে যে, ‘অমুক ব্যক্তি কুরআন মজীদ খতম করেছেন, তা বখশে দিবেন।’ তাদের আবেদনের ভঙ্গি
থেকে অনুমিত হয় যে, কুরআন মজীদ
খতম করার পর ইমাম ছাহেবের মাধ্যমে বা কোনো বুযুর্গের মাধ্যমে তা বখশানোকে তারা জরুরি
মনে করেন।
এই রেওয়াজের মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে, যা বর্জনীয়। যেমন
ক. কুরআন খতম করা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ-ইবাদত। কেউ খতম করলে এটা
জরুরি নয় বা এমন কোনো বিধান নেই যে, তা বখশাতেই
হবে। হ্যাঁ, কেউ কোনো
নেক আমল করে মৃত মুসলিমদের জন্য ছওয়াব রেসানী করতে চাইলে তার অনুমতি আছে। কিন্তু না
এটা কুরআন-খতমের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, না রমযান
মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাছাড়া একটি মোবাহ কাজকে জরুরি কাজের মতো গুরুত্ব দেওয়াও সমীচীন
নয়।
খ. ছওয়াব রেসানীর জন্য আমলের আগে বা পরে এই নিয়তই যথেষ্ট যে, আমলটি অমুকের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
তদ্রূপ অন্তরের এই দুআই যথেষ্ট যে, আয় আল্লাহ!
এই আমলের ছওয়াব অমুক অমুককে দান করুন বা সকল মৃত মুসলমানকে দান করুন। ছওয়াব রেসানীর
জন্য এ-ই যথেষ্ট। ইমাম সাহেব, বা কোনো বুযুর্গের
মাধ্যমে বখশানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কোনো বুযুর্গের দ্বারা বখশানো ছাড়া ছওয়াব পৌঁছবে
না এমন ধরণা একটি ভুল আকীদা, যা ত্যাগ
করা জরুরি।
গ. বখশানোর জন্য হাদিয়া দেওয়া বা নেওয়ার বিষয়টিও বর্জনীয়।
আমল বখশানো অর্থ দুআ করা। আর দুআ একটি খালিস ইবাদত, যার বিনিময়ে হাদিয়ার আদান-প্রদান
জায়েয নয়।
এছাড়া এভাবে ইমাম সাহেবের দ্বারা আমল বখশানোর রীতির কারণে মেয়েদের
নাম এবং তাদের খতম বা খতমের সংখ্যা ইত্যাদি গোপন বিষয় মানুষের সামনে আসে। কোনো প্রয়োজন
ছাড়া এমনটি করার কী যুক্তি? তো সব বিচারেই
এই রসম বর্জনীয়।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত
ছুরতে উক্ত পদ্ধতিকে আবশ্যক মনে করে করা বেদআত হবে। তবে সাধারণ অবস্থায়
যেকোন মৃত ব্যক্তির জন্য যেকোন সময় ঈসালে সাওয়াতের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করা জায়েয আছে।
অবশিষ্ট উত্তর বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/4233/
তবে যারা মাহরাম ননমাহরাম মেইনটেইন করে না এবং সন্তানদের পর্দার ব্যাপারেও গুরুত্ব দেয় না তারা অবশ্যই গুনাহগার হবে এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।