আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
93 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া মাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু
আমার সাইনোসাইটিস এর খুব সমস্যা । অনেকবার ইনফেকশন হয়েছে। ডক্টর বলেছে ঠান্ডা থেকে দুরে থাকতে। তারউপর আমার ২ মাসের বাচ্চা আছে। ওর heart এ সমস্যা। ডক্টর বলেছে কোনোভাবেই যেনো ঠান্ডা না লাগে এবং পুরোপুরি বুকের দুধ যেনো খায়। ফিডার বা ফর্মুলা দিতে একদম নিষেধ। এমতাবস্থায় আমার হাসবেন্ড সহবাসের জন্য আমাকে প্রায় প্রতিদিন অথবা একদিন পর পর বলেন। এবং তিনি কেটলিয হেয়ার dryer ও এনে দিয়েছেন যেনো ঠান্ডায় সমস্যা না হয়।কিন্ত সমস্যা হচ্ছে- আমার গোসল করতে খুব কষ্ট হয়, হোক তা গরম পানি দিয়ে। আবার গোসলের পর ২০-৩০ মিনিট বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে  পারি না, কারন ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে। আর আমার সাইনোসাইটিস যদি একবার হয় তাহলে এনটিবায়োটিক খেতে হয়, যা খেলে দুধের ফ্লো কমার ভয় থাকে তখন আমার বাচ্চার ক্ষতি। আরও- আমার গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও শরীর কাপুনি দেয়।কম্বল এর নিচ থেকে উঠতে পারি না। এজন্য কয়েকদিন পর পর রোদ থাকতে থাকতে গোসল সারি। আবার দেখা যায় সারাক্ষন বাচ্চাকে রাখার পর একটু রেস্ট নিচ্ছি সে সময় হাসবেন্ড চাচ্ছে। আমি উনার মন রাখতে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে করলেও এরপর রেস্ট এর সুযোগ পাই না যার কারমে শরীর খুব খারাপ লাগে। আবার অনেক সময় দেখা যায় শরীর খুবি ক্লান্ত, দুর্বল লাগতেসে সেসময় উনি চাইলে আমি আমার অসুস্থতার কথা বলে সবর করতে বললে উনি সবর করেন না, মুড খারাপ করেন মাঝে মাঝে ঝগড়াও করেন। একবার বলে ফেলসেন যে আপ্নার অসুস্থতা তো আর মৃত্যু পর্যায় না, দিবেন না কেন।

আবার আমি উনার জন্য রান্না বান্না করে একটু পরিপাটি হয়ে সাজলে উনি সব বাদ দিয়ে সহবাস করতে চায়। উনার কথা হচ্ছে আমাকে দেখলে উনি পারেন না সহবাস ছাড়া থাকতে। এইটায় আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি আমি জানি না তবে আমার মাঝে মাঝে জুলুমই লাগে।আমার সিজার এ বাচ্চা হয়েছে। আমার শরীর প্রায়ই অনেক খারাপ থাকে। উনি এগুলা না বুঝে আমাকে শুধু সহবাস এর কথাই বলেন। আমি সবর এর কথা বললে, বুঝিয়ে বললেও রিএক্ট করেন। আমি সওয়াবের নিয়তে হাসবেন্ড এর জরুরত মেটাতে সহবাস করলেও পরবর্তীতে উনার উপর প্রচুর রাগ হয়।
এমতাবস্থায় আমার কি করা উচিত আমাকে বলুন প্লিজ।

1 Answer

0 votes
by (63,630 points)

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।

জবাবঃ

স্বামীর জন্য জরুরি হলো স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করা, তার সাথে সদব্যবহার করা।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

ألا واستوصوا بالنساء خيرا، فإنما هن عوان عندكم ليس تملكون منهن شيئا غير ذلك

শোন হে! তোমরা আমার পক্ষ হতে নারীদের প্রতি সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ কর। তারা তো তোমাদের কাছে আটকে আছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে এছাড়া আর কিছুর অধিকার রাখো না। (জামে তিরমিযী, হাদীস: ১০৮৩

,

https://ifatwa.info/91615/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-

ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ

নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)

,

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

,

স্বামীর উপর আবশ্যক হলোঃ- স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা। স্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনে একান্তে বসা ও খোশগল্প করা।

অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করা, তার মনের কথা জানা-বোঝা, তার কোনো চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য জরুরি।  প্রয়োজন মাফিক স্ত্রীকে সময় দেয়া।

বিস্তারিত জানুনঃ-

https://ifatwa.info/26084/

,

স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও একটি ইবাদত । যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

 হযরত আবু যর রাযি থেকে বর্ণিত,

,

عَنْ أَبِي، ذَرٍّ أَنَّ نَاسًا، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالُوا لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالأُجُورِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ . قَالَ " أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُونَ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ " أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ " .

কিছু সাহাবা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে। তিনি বললেন, আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।

সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে? তিনি বললেন, কী রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? (নিশ্চয় হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে। (সহীহ মুসলিম ২৩৭৬)

,

স্বামী স্ত্রী উভয়ের শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী সহবাস করবে।

কোনো সীমা নির্দিষ্ট নেই।

https://ifatwa.info/12098/  ফতোয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

স্বামী-স্ত্রী পরস্পর হকঃ

স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের উপর অনেক হক রয়েছে।তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হক হল,সহবাসের হক।

স্ত্রীর উপর স্বামীর সহবাস হক কতটুকু?

উত্তরঃ স্বামী স্ত্রীকে সহবাসের জন্য তলব করলে স্ত্রীর জন্য তৎক্ষনাৎ স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব। শরয়ী উযর ব্যতীত জবাব না দেয়ার কোনো অপশন নেই।

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত

عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه فأبت فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح»

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত দিতে থাকে। (সহীহ বুখারী-৩২৩৭)

,

স্বামীর উপর আবশ্যক হলোঃ- স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা। স্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনে একান্তে বসা ও খোশগল্প করা।

অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করা, তার মনের কথা জানা-বোঝা, তার কোনো চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য জরুরি।  প্রয়োজন মাফিক স্ত্রীকে সময় দেয়া।

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

,

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু অসুস্থ। তাই আপনার স্বামীর জন্য এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। জোরপূর্বক করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আপনার শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। এ ব্যাপারে মহব্বত ও ভালোবাসার সাথে আপনার স্বামীকে বুঝানোর চেষ্টা করবেন।

তবে আপনি যদি সুস্থ থাকেন। প্রয়োজনে দিনের বেলায় হতে পারে। তাহলে আপনার স্বামী ডাক দিলে অবশ্যই সেই ডাকে সাড়া দিতে হবে। এই দিকেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...