ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَوْ تَرَي اِذِ الظَّالِمُوْنَ فِيْ غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلئِكَةُ بَاسِطُوْا اَيْدِيْهِمْ اَخْرِجُوْا اَنْفُسَكُمْ اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُوْلُوْنَ عَلى اللهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ ايَتِهِ تَسْتَكْبِرُوْنَ.
‘হে নবী! আপনি যদি অত্যাচারীদের দেখতেন, যখন তারা মৃত্যুকষ্টে পতিত হয়, ফেরেশ্স্তাগণ তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের আত্মা বের করে দাও। ফেরেশতাগণ এ সময় বলেন, আজ হ’তে তোমাদেরকে প্রতিফল স্বরূপ অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হবে। আর অপমানজনক শাস্তির কারণ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর প্রতি অসত্য আরোপ করতে এবং অহংকার করে তার আয়াত সমূহ এড়িয়ে চলতে’ (আন‘আম ৯৩)।
অত্র আয়াতে অত্যাচারীদের মৃত্যু যন্ত্রণার কথা উল্লেখ হয়েছে। মৃত্যুর সময় তাদেরকে অপমান করা হয়, তা স্পষ্ট করা হয়েছে এবং মরণের পর হ’তেই তাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হয়। আর মরণের পর হ’তে যে শাস্তি দেয়া হয় তাকেই কবরের শাস্তি বলে। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
فَوَقهُ اللهُ سَيِّئَاتِ مَامَكَرُوْا وَحَاقَ بِالِ فِرْعَوْنَ سُؤَالْعَذَابِ اَلنَّارُ يُعْرَضُوْنَ عَلَيْهَا غُدُوَّا وَّعَشِيًّا.
‘ফেরাউন বংশীয় একজন মুমিনকে আল্লাহ ফেরাউনদের কবল হ’তে রক্ষা করেন। অবশেষে এদেরকে আল্লাহর কঠোর শাস্তি ঘিরে ধরে। আর এ কঠোর শাস্তি তাদের সামনে সকাল-সন্ধ্যা পেশ করা হয়’ (মুমিন ৪৫-৪৬)।
অত্র আয়াতে সকাল-সন্ধ্যা যে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে কবরের শাস্তি।
আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
سَنُعَذِّبُهُمْ مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّوْنَ اِلى عَذَابٍ عَظِيْمٍ.
‘অচিরেই আমি তাদেরকে বারবার শাস্তি দিব। অতঃপর তারা মহা কঠিন শাস্তির দিকে ফিরে যাবে’ (তাওবা ১০১)।
অত্র আয়াতে বারবার শাস্তি বলে কবরের শাস্তি উল্লেখ করা হয়েছে।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন,
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْل الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ الْعَبْدَ اِذَا وُضِعَ فِيْ قَبْرِهِ وَتَوَلَّي عَنْهُ اَصْحَابُهُ اِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ اَتَاهُ مَلَكَانِ فَيَقْعُدَانِهِ فَيَقُوْلَانِ مَاكُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ فَاَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُوْلُ اَشْهَدُ اَنَّهُ عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ فَيُقَالُ لَهُ اُنْظُرْ اِلَي مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدَ اَبْدَلَكَ اللهُ بِهِ مَقْعَدًا مِّنَ الْجَنَّةِ فَيَرَاهُمَا جَمِيْعًا وَاَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُفَيُقَالُ لَهُ مَاكُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُوْلُ لَااَدْرِيْ كُنْتُ اَقُوْلُ مَايَقُوْلُ النَّاسُ فَيُقَالُ لَهُ لَادَرَيْتُ وَلَاتَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقِ مِنْ حَدِيْدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيْحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيْهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ.
রাসূল(সা.) বলেছেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীগণ সেখান হ’তে ফিরতে থাকে, তখন সে তাদের পায়ের শব্দ শুনতে পায়। তাদের ফিরে যেতে না যেতেই তার নিকট দু’জন ফেরেশতা চলে আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তার পর নবী করিম (সা.) -এর প্রতি ইশারা করে জিজ্ঞেস করেন তুমি দুনিয়াতে এ ব্যক্তি সম্পর্কে কি ধারণা করতে? মুমিন ব্যক্তি তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর দাস এবং তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, এই দেখে লও জাহান্নামে তোমার স্থান কেমন জঘন্য ছিল। আল্লাহ তোমার সেই স্থানকে জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে উভয় স্থান দেখে এবং খুশি হয়। কিন্তু মৃতু ব্যক্তি যদি মুনাফিক বা কাফের হয় তখন তাকে বলা হয়, দুনিয়াতে তুমি এ ব্যক্তি সর্ম্পকে কি ধারণা করতে? তখন সে বলে আমি বলতে পারি না। মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম, (প্রকৃত সত্য কি ছিল তা আমার জানা নেই)। তখন তাকে বলা হয়, তুমি তোমার বিবেক দ্বারা বুঝার চেষ্টা করনি কেন? আল্লাহর কিতাব পড়ে বোঝার চেষ্টা করনি কেন? অতঃপর তাকে লোহার হাতুড়ি দ্বারা এমনভাবে পিটাতে শুরু করে। পিটানির চোটে সে হাউমাউ করে বিকটভাবে চিৎকার করতে থাকে। আর এত জোরে চিৎকার করে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত সব কিছুই তার চিৎকার শুনতে পায় (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/১১৯)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মরণের পর মানুষ প্রশ্নের মুখামুখি হবে। প্রশ্নগুলি কি হবে তা নবী করিম(সা.) স্পষ্ট বলে দিয়েছেন এবং তার উত্তরও বলে দিয়েছেন। কবরে যথাযথ উত্তর দিতে না পারলে তার পরিণাম হবে বড় ভয়াবহ। হাতুড়ি দ্বারা কঠিনভাবে পিটানো হবে। তখন সে বিকট শব্দ করে চিৎকার করতে থাকবে। মানুষ এবং জিন ছাড়া জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ ও জড় বস্ত্ত সব কিছুই শুনতে পাবে।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১) কবরের আযাবকে মানুষ কখনো শুনতে পারবে না এবং দেখতেও পারবে না। এটাকে আল্লাহ তা'আলা মানব জাতীর আড়াল করে রেখেছেন। সুতরাং ভিতরে ক্যামেরা ফিট করে রাখলেও কখনো দেখা যাবে না।
(২) কবরের আযাবকে কখনো দেখা যাবে না বা শোনা যাবে না। কবর থেকে সাপ বের হওয়া বা ধোঁয়া বের হওয়া এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটার সাথে কবরের আযাবের কোনো সম্পর্ক নাই। কবরের আযাবকে আল্লাহ লুকিয়ে রাখবেন বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গিয়েছেন।
(৩) ঈমান ও এখলাছের সাথে কুরআন তিলাওয়াতই সর্বোত্তম যিকির এবং এতেই সবচেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।
(৪) আপনি নিয়মিত ফরয নামাযকে সঠিক সময়ে পড়বেন। তাহাজ্জুদ, ইশরাক পড়বেন ও বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াত করবেন।