আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
https://ifatwa.info/110330/?show=110361#a110361
এই প্রশ্নের ২নম্বর উত্তরে বলা হয়েছে আগে ৪/৫দিন থাকতেন এখন অর্ধেক সময় থাকতে হচ্ছে এজন্য জুলুম হবে। কিন্তু আমার হাজবেন্ড দুজনের সাথেই সমান রাত্রিযাপন করছেন বলে বলেছিলেন। তবে ওনার চিকিৎসার জন্য ওনার সাথে গত একমাসে বেশিই সময় কাটানো হয়েছে। এটা হয়তো সফরের কারণে। এবং একই কারণে ওনাকে রেখে আসার জন্য আমার কাছে তিনদিন চার রাত যাপন করেছেন; তবে আগে চারদিন পাঁচ রাত পেতাম তাকে।
ওনার বিয়ে করা আর আমার অসুস্থ হয়ে যাওয়া জুলুম বা বেইনসাফি কিনা তা জানার প্রেক্ষাপট আরেকটি। আমার কাছে এজন্য জুলুম মনে হয়েছে যে আগে আমাকে তিনি সময় দিতে পারতেন। ওনার থেকে দীর্ঘদিন দূরে থেকে থেকে আমার মানসিক সুস্থতারও অবনতি হয়েছিলো এতদিন। আমরা একইসাথে থাকতে পেরেছি ২ মাস ২২ দিন। এরপর আলাদা আলাদা। আমি ওনার মাসনা বিরোধী নই। কিন্তু আমি ওনার থেকে সময় আশা করেছিলাম, যেন স্থির হতে পারি কিছুটা। আমার বাচ্চাকাচ্চা থাকলে ওনার বদলে কিছু একটা থাকতো যা নিয়ে আমি ব্যস্ত থাকতে পারতাম, আর ওনার সাথেও সম্পর্ক ভালো থাকতো একদম। কিন্তু অল্পদিন থাকার সুবাদে আমি ওনার থেকে পর্যাপ্ত কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ডের সুযোগ আশা করেছিলাম। এবং এত দ্রুত এই পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতিও ছিল না।
যেহেতু তিনি ওনার কথামতো নিজের প্রয়োজন পূরণে বিয়ে করেননি, সেহেতু আমাকে সময় না দিয়ে এত দ্রুত বিয়ের কারণে আমি যে অসুস্থ হয়ে গেলাম একটানা, এইটা জুলুম সাব্যস্ত হবে? আমি আমার শারীরিক মানসিক অবনতির সময় গতানুগতিকভাবে তাকে কাছে পাচ্ছি না, এবং ফোনেও আগের মতো পাচ্ছি না। আগে প্রতিদিন কলে ঘন্টাখানেকরও বেশি কথা হতো। কিন্তু এখন তা তিনভাগের একভাগ হয়ে গেছে। যার জন্য একটা অন্যরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি ওনার সামর্থ্যমতো কাজ, সবার সাথে যোগাযোগ, দুই স্ত্রীর সাথে কথা বলছেন। কিন্তু আমার অসন্তুষ্টি এটা যে তৃতীয় কেউ এত দ্রুত না আসলে আমাকে এই পরিস্থিতিতে পরতে হতো না।
আমাকে কিছুটা সময় দিলে আমার দ্বীন সহজ হতো। দ্বীনকে কঠিন করা হতো না। বুঝেশুনে স্বেচ্ছায় কেউই পরীক্ষায় পরতে চায় না, দ্বীনকে কঠিন করতে চায় না যেখানে অন্য সুযোগ রয়েছে। আমি এত তাড়াতাড়ি এই পরীক্ষায় পরে সবকিছু আওলিয়ে গিয়েছে। আমার দ্বীনও কঠিন হয়ে গেছে ফিতনা ও ফাসাদের দরজা খুলে দেওয়ার মাধ্যমে। অসুস্থতা, মানসিক পরিস্থিতি, দ্বীন কঠিন হয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে আমি অস্থিতিশীল একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।
১. আমি জানতে চাচ্ছি তিনি আমাকে কিছুটা সময় না দিয়ে বিয়ে করে এই পরিস্থিতিতে ফেললেন, অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃত যেইটায় হোক আমি এতে শারীরিক মানসিকভাবে ভেঙে পরেছি। দ্রুত বিয়ে করলে আমি ভেঙে পরতে পারি, অসুস্থ হতে পারি এটা জানিয়েছিলাম ওনাকে, তারপরও এই সময় না দেওয়া জুলুম হবে কি? তিনি যেহেতু ওনার প্রয়োজনে বিয়ে কররেননি তাহলে এত দ্রুত বিয়ে করে নেওয়া জুলুম হয়েছে কি? যেহেতু সিদ্ধান্তটি হঠকারী, তার জন্য আমি কষ্ট পাচ্ছি প্রতিনিয়ত, সেই হিসেবেও এটি জুলুম হতে পারে কিনা?
২. প্রথম স্ত্রী দূরে থাকার কারণে তার শারীরিক মানসিক অবনতি হয়েছিলো এতদিন। স্বামীর জন্য তার প্রথম স্ত্রীকে সময় দিয়ে সারিয়ে তোলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো? নাকি তাকে সময় না দিয়ে নিজ প্রয়োজন ছাড়াই অন্য নারীকে সহযোগিতা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো? যদি প্রথমটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তবে এই দৃষ্টিকোণ থেকেও জুলুম হয়েছে কিনা?
৩. আর পাঁচটা মানুষ মাসনা করলে বউয়েরা যেই কষ্ট পায়, আমার কষ্টটা তাদের মতোই স্বাভাবিক? নাকি আমারটা কিছুটা ব্যতিক্রম জুলুমের কারণে? ওস্তাদ, তিনি ওনার নিজ প্রয়োজনে বিয়ে করলে আমাকে এটা এত কষ্ট দিত না। বাকী ওয়াহীদাদের মতোই স্বাভাবিক কষ্ট হতো। প্লিজ এই প্রেক্ষাপটে উত্তর দিন মিন ফাদ্বলিক।
৪. ভরণপোষণের হকের সমতার ধরণ কেমন। যার যেইটা লাগবে বা জরুরত সেইটা দিতে হবে। নাকি একজনকে জরুরতের জন্য কিছু একটা দিলে আরেকজনের জরুরত না থাকলেও ওই জিনিসটি দিতে হবে? ভালোবাসার তো সমতা হয় না। ভালোবেসে একজনকে কিছু একটা হাদীয়া দিলে অপরজনকেও দিতে হবে কি? যেমন ফুল, কসমেটিকস ইত্যাদি? দুজনের মধ্যে খরচাপাতির বেইনসাফি যেন না হয় তার জন্য কোনটা সুবিধাজনক হবে, যখন যা লাগবে তাই দেওয়া নাকি উভয় স্ত্রীকেই সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া?
[আমি আমার হাজবেন্ডকে, আমাকে, আমাদের পরিবারকে, দ্বীনের বিষয়ে স্বচ্ছ দেখতে চাই। যেহেতু আমাদের গন্তব্য জান্নাত, তাই আমি চাই না আমাদের দ্বারা এমনকিছু হোক যা আমরা স্বাভাবিক মনে করছি কিন্তু আদতে স্বাভাবিক নয়। আমি স্ত্রী, আমি এগুলো মনের মধ্যে ধরে রাখবো না। কিন্তু অন্য কোথাও যদি সামান্যও জুলুম হয় আর তিনি তা বুঝতে না পারেন, ক্ষমা না চান তাহলে অন্যরা তাকে ক্ষমা করবে তার গ্যারান্টি কি! এজন্য প্রশ্নগুলো বারবার করছি যেন আমরা সবাই বুঝতে পারি যে আমাদের দ্বারা এমন গুনাহ ঘটে যেতে পারে যা আমরা স্বাভাবিক মনে করি, কিন্তু তা স্বাভাবিক ছিলো না। আর যদি আমার প্রতি করা কাজ তার পক্ষ থেকে জুলুম না হয় তবে আলহামদুলিল্লাহ)
জাঝাকুমুল্লহু খয়রন