ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব:-
কোরআন তিলাওয়াত
করা ইবাদত। কোরআন ও হাদিসে মুমিনদের কোরআন তিলাওয়াতে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন মহানবী
(সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ
পাঠ করল তার জন্য একটি নেকি। আর প্রতিটি দশগুণ বৃদ্ধি করা হয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)
শরিয়তের বিধান
হচ্ছে- তাদাব্বুর ও মনোযোগ দিয়ে পড়া। সেটা মুসহাফ থেকে হোক কিংবা মুখস্থ থেকে হোক।
পাঠকারী যদি নিজে শুনে তখন এটাকে পড়া বলা হবে। শুধু চোখ দিয়ে দেখা যথেষ্ট নয়। অনুরূপভাবে
উচ্চারণ না করে মনে মনে পড়াও যথেষ্ট নয়। সুন্নত হচ্ছে- তেলাওয়াতকারী উচ্চারণ করবে এবং
তাদাব্বুর করবে।
যেমনটি আল্লাহ্
তাআলা বলেছেন:
كِتَابٌ
أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو
الْأَلْبَابِ
এটি একটি বরকতময়
কিতাব,
যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন
করে। [সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৯]
তিনি আরও বলেন:
أَفَلَا
يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا
তারা কি কোরআন
সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? [সূরা মুহাম্মদ ৪৭:২৪]
কিন্তু প্রশ্ন
হলো কোরআন কিভাবে তিলাওয়াত করা উত্তম—মুখস্থ, নাকি দেখে দেখে? উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে উভয় রকম মতই দিয়েছেন। অর্থাৎ একদল আলেমের
মতে,
দেখে পড়া উত্তম, অন্যদলের মতে, মুখস্থ পড়া উত্তম।
নিম্নে মত দুটি দলিলসহ তুলে ধরা হলো—
প্রথম মত : যাঁরা বলেন, মুখস্থ পড়া উত্তম তাঁরা সহিহ বুখারির ‘মুখস্থ কোরআন পাঠ করা’
শীর্ষক হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিঃস্ব অথচ বিয়েতে আগ্রহী এক ব্যক্তিকে বলেন, তোমার কোরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? সে উত্তরে বলল, অমুক অমুক সুরা মুখস্থ আছে।
সে এমনিভাবে
একে একে উল্লেখ করতে থাকল। তখন নবী (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এসব সুরা মুখস্থ তিলাওয়াত করতে পারো? সে উত্তর করল, হ্যা! তখন নবী (সা.) বললেন, যাও তুমি যে পরিমাণ
কোরআন মুখস্থ রেখেছ, তার বিনিময়ে এই নারীকে
তোমার সঙ্গে বিয়ে দিলাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৩০)
উল্লিখিত হাদিসে
মহানবী (সা.) মুখস্থ কোরআন পাঠ করাকে মহর তথা সম্পদের বিকল্প হিসেবে গণ্য করেছেন। সুতরাং
সেটাই উত্তম হবে।
দ্বিতীয় মত : তবে বেশির ভাগ আলেমের মতে, কোরআন দেখে দেখে পড়াই উত্তম। তাঁরা যুুক্তি ও প্রমাণ হিসেবে
বেশ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেন। যেমন—
১. দেখে পড়লে
ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
২. দেখে পড়লে
একই সঙ্গে কোরআন দেখা ও পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুখস্থ না পড়ে কোরআন দেখে পড়ার মর্যাদা তেমন, নফলের ওপর ফরজের মর্যাদা যেমন। (ফাতহুল বারি : ৮/৬৯৬)
৩. সাহাবায়ে
কেরাম (রা.) কোরআন দেখে পড়তে পছন্দ করতেন এবং এ বিষয়ে অন্যদের উৎসাহিত করতেন। যেমন
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, তোমরা কোরআনের প্রতি দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকো। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৮৬৩৭)
ইবনে আব্বাস
(রা.) বলেছেন, ওমর (রা.) যখনই ঘরে প্রবেশ করতেন, তখনই তিনি কোরআন খুলে তা পাঠ করতেন। (ফাদাইলুল কোরআন লি-ইবনে
কাসির,
পৃষ্ঠা ২১০)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. উভয় মতের
সমন্বয়ে ইমাম নববী (রহ.) উভয়
মতের মধ্যে সমন্বয় করে বলেন, পূর্বসূরি আলেমরা বলেছেন, দেখে কোরআন তিলাওয়াত করা তা মুখস্থ তিলাওয়াত করার চেয়ে উত্তম; তবে এটা ব্যাপকার্থে নয়। কেননা যখন কোনো তিলাওয়াতকারী মুখস্থ
তিলাওয়াত করে এবং দেখে তিলাওয়াত করার তুলনায় তার মনোযোগ, একনিষ্ঠতা, চিন্তা-গবেষণার করার
সুযোগ বেশি থাকে, তখন মুখস্থ তিলাওয়াত
করাই উত্তম। দেখে পড়া আর মুখস্থ পড়া যদি ব্যক্তির জন্য সমান হয়, তবে তার জন্য কোরআন দেখে পড়াই উত্তম। (আল আজকার, পৃষ্ঠা ৯০)
কোরআন তিলাওয়াতের
সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করাও আবশ্যক। সুতরাং যেভাবে তিলাওয়াত করলে কোরআনের
অর্থ ও মর্মের প্রতি তিলাওয়াতকারীর মনোযোগ বেশি থাকবে সেভাবেই সে তিলাওয়াত করবে।
২. তাকওয়া বাড়ানোর
জন্য গুনাহের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে ছেড়ে দিতে হবে। বেশি বেশি পবিত্র
কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। কোনো মানুষ যখন পবিত্র কুরআন নিয়ে অভিনিবেশসহ চিন্তা করে, তখন আল্লাহ তায়ালার মহত্ব, মর্যাদা, গুণাবলি তার সামনে প্রকাশ হয়।
★ইখলাসের সঙ্গে
আল্লাহর ইবাদত করবেন। আল্লাহতায়ালার ইবাদতের
মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়, চাই সেটা ফরজ ইবাদত
হোক কিংবা নফল।
★নিয়মিত নফল
রোযা রাখা রাখবেন। আল্লাহতায়ালা তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালনের আদেশ করেছেন।
★আল্লাহর সৃষ্টি
নিয়ে চিন্তা করবেন। আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে
চিন্তা করার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাত ও দিবসের বিবর্তন এবং আসমানসমূহ ও জমিনে যা আল্লাহ
সৃষ্টি করেছেন, তাতে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা ইউনুস : ৬)
★পরকাল ও তার
ভয়াবহতা সম্পর্কৃত আয়াত ও হাদিস পাঠ করবেন। কবর ও তার শাস্তি
এবং পরকাল ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কৃত কোরআনের আয়াত ও হাদিসগুলো বেশি বেশি অধ্যয়ন করার
মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়।
★দাওয়াত ও তাবলিগের
মেহনতে সময় লাগাতে পারেন। তাদের মজলিসে
বসে ঈমান আমলের মেহনতের বয়ান শোনার চেষ্টা করবেন।
★হক্কানী শায়েখদের
জান্নাত জাহান্নামের বয়ান শুনতে পারেন।
★তাকওয়া বৃদ্ধির
জন্য নবী,
ছাহাবায়ে কেরাম, বুযুর্গানে দ্বীনদের ঘটনা সম্বলিত বই পড়বেন। আরো জানুন:- https://ifatwa.info/51582/