জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন
عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «صنفان من أهل النار لم أرهما، قوم معهم سياط كأذناب البقر يضربون بها الناس، ونساء كاسيات عاريات مميلات مائلات، رءوسهن كأسنمة البخت المائلة، لا يدخلن الجنة، ولا يجدن ريحها، وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا»
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,জাহান্নামের দু'টি দল,যাদেরকে এখন পর্যন্ত আমি দেখিনি।(ক)ঐ দল যাদের সাথে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দ্বারা তারা লোকদিগকে প্রহার করবে।(খ)ঐ সমস্ত পোশাকধারী উলঙ্গ মহিলা,যারা আকৃর্ষিত হবে এবং পুরুষদেরকে আকর্ষৃত করবে।তাদের মাথা উঠের পিঠের মত কুজো এবং আকর্ষনকারী হবে।তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।এমনকি তারা তার সুঘ্রাণ ও পাবে না।অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ এত এত দূরত্ব থেকে সহজেই পাওয়া যাবে।
(সহীহ মুসলিম-২১২৮)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
হ্যাঁ, গায়রে মাহরামের সামনে নারীদের পুরো শরীর পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
(০২)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
মাহরাম মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া কতটুকু জায়েয এ সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বলা হয়,
وأما نظره إلى ذوات محارمه فنقول: يباح له أن ينظر منها إلى موضع زينتها الظاهرة والباطنة وهي الرأس والشعر والعنق والصدر والأذن والعضد والساعد والكف والساق والرجل والوجه،
যৌন উত্তেজিত হওয়ার আশংকা না থাকলে
পুরুষ তার মাহরামে আবদিয়্যাহ মহিলার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৌন্দর্যময় স্থানের দিকে দৃষ্টি দিতে পারবে।সে স্থানগুলো হল,মাথা, চুল,গর্দান,বুকের উপরি অংশ,কান,বাহু,হাতের কবজি,পায়ের গোড়ালি,পা ও চেহারা।
বিস্তারিত জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
পুরুষ মাহরামদের সাথে নারীরা মাথা, চুল,গর্দান,বুকের উপরি অংশ,কান,বাহু,হাতের কবজি,পায়ের গোড়ালি,পা ও চেহারা খোলা রাখতে পারবে।
বাকি শরীর পর্দা করবে।
তবে কোনো মাহরামের কুদৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে সেক্ষেত্রে চেহারা ও হাত পা ছাড়া বাকি অঙ্গ ঢাকতেই হবে।
যাতে কোনোক্রমেই ফিতনার আশংকা না থাকে।
(০৩)
মহিলার জন্য মহিলার সতর হচ্ছে এক পুরুষের জন্য অন্য পুরুষের সতর যতটুকু।
(০৪)
তখন আপনি নিকাবওয়ালা হিজাবগুলো পড়ে সামনে যেতে পারবনে। পা ঢেকে যেতে হবে। পা মোজা পড়তে পারেন। পা পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
তবে কাজ করতে গিয়ে কোনো ক্ষেত্রে পায়ের পাতা অনিচ্ছাকৃত কখনো প্রকাশ পেয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন,ইনশাআল্লাহ।
(০৫) বিভিন্ন কালারের সুতি কাপরের পিন্টের নিকাবওয়ালা হিজাবগুলো পড়া যাবে। যেমনঃ গোলাপির মধ্যে কালো সাদা আরো বিভিন্ন কালারের ফুল থাকে।
তবে আকর্ষন সৃষ্টি কারী হলে সেটি পরিধান করে বাহিরে যাওয়া যাবেনা।
(০৬) নন মাহরামদের সাথে আপনি স্বাভাবিক কন্ঠে কথা বলতে পারবেননা। কন্ঠ মোটা করে কথা বলতে হবে।
(০৭)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সতর্কতা কাম্য।
খালু থাকলে তখন এভাবে খালার সাথে কথা বলবেননা।
(০৮) হ্যাঁ, এক্ষেত্রে আপনার পর্দা নষ্ট হবে।
তওবা করে নিবেন।
(০৯) রুমে কথা বলে অনেকসময় নন মাহরাম পাশের রুমে থাকলে কন্ঠ শুনা যায়। তখন আপনার কন্ঠের পর্দা নষ্ট হবে। সতর্কতা কাম্য।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻳَﺎ ﻧِﺴَﺎﺀ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﻟَﺴْﺘُﻦَّ ﻛَﺄَﺣَﺪٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﺇِﻥِ ﺍﺗَّﻘَﻴْﺘُﻦَّ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺨْﻀَﻌْﻦَ ﺑِﺎﻟْﻘَﻮْﻝِ ﻓَﻴَﻄْﻤَﻊَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻓِﻲ ﻗَﻠْﺒِﻪِ ﻣَﺮَﺽٌ ﻭَﻗُﻠْﻦَ ﻗَﻮْﻟًﺎ ﻣَّﻌْﺮُﻭﻓًﺎ
(তরজমা) তোমরা (পর পুরুষের সাথে) বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন কর না। যাতে এরূপ লোকের অন্তরে আকাঙ্ক্ষা (সঞ্চার) হয়, যার অন্তরে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে। (সূরা আহযাব : ৩২)
,
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ السَّمْعَ وَالبَصَرَ وَالفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.
...নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এর প্রতিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩৬
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
(১০)
মেয়েদেরও দৃষ্টির হেফাজত করতে হবে।
বাহিরে বের হলে দৃষ্টি নত রাখতে হবে।
ফিতনার আশংকা না থাকলে প্রয়োজনে পুরুষকে দেখা যাবে।
(১১)
প্রয়োজন ব্যতিত নারীদের ঘরের বাহিরে না যাওয়ারই আদেশ ইসলাম করেছে।
শরীয়তের গন্ডির বাহিরে কোনো কাজ করলে গুনাহ হবে।
(১২) পরিপূর্ণ পর্দা করার জন্য বিনা প্রয়োজন ঘর হতে বাহিরে যাবেননা।
প্রয়োজনে বাহিরে গেলে চেহারা,হাত পা সহ পূর্ণ শরীর ঢেকে যাবেন।
আকর্ষন সৃষ্টি করে এমন পোশাকে গায়রে মাহরামদের সামনে ও বাহিরে যাবেননা।
গায়রে মাহরামদের সাথে প্রয়োজনে কথা বললে পর্দার আড়ালে থেকে কথা বলবেন এবং কন্ঠ মোটা করে কথা বলবেন।
(১৩)
আকর্ষন সৃষ্টি করে এমন পোশাকে গায়রে মাহরামদের সামনে ও বাহিরে যাবেননা।
বিনা প্রয়োজন ঘর হতে বাহিরে যাবেননা।
নম্রতার সহিত পা ফেলতে হবে। এমন ভাবে চলা ফেরা করা যাবেনা,যাতে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকৃতি প্রকাশ পায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)
(১৪) গায়রে মাহরাম দেখতে পায়,এমন জায়গায় কাপড় নাড়িয়ে দিবেননা।
বিশেষ করে নারীদের জন্য বিশেষ যেসব কাপড় আছে,সেগুলো কোনো স্বামী ছাড়া অনু কোনো পুরুষ এর সামনে নাড়িয়ে দিবেননা।
বাজার, মার্কেট নিজে না করে মাহরামের মাধ্যমে করবেন।
বাহিরের পুরুষদের সাথে যেনো কথা বলতে না হয়,সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
(১৫)
এক্ষেত্রে করনীয় সম্পর্কে জানুনঃ-