আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
52 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমি একজন মহিলা ডাক্তার। আমার স্বামীও একজন ডাক্তার। আমি পোস্ট গ্রাজুয়েশন শিক্ষার জন্য, গাইনি সাবজেক্ট এ আছি। পাঁচ বছরের কোর্সে দুই বছর চলছে। আমাদের পাঁচ বছরের একজন বাচ্চা আছে। আমার স্বামী, আর বাচ্চা নিতে চান না।যেহেতু, একটা বাচ্চাকে সামলে কোর্স করাটাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে, আরেকজন বাচ্চা হলে তার সব ঠিকমত আদায় করা সম্ভব হবে না। এটা আমার স্বামীর কথা। কোর্স শেষ হলে উনি আর কখনো বাচ্চা নিতে চান না। এই অবস্থায়, আর কোন বাচ্চা না নিলে, আমি বা আমার  স্বামী গুনাহগার হব কিনা? আমার স্বামী, কোর্সে চান্স পাওয়ার আগে, আরেকটা বেবি নিয়ে নিতে বলেছিলেন, কিন্তু, তখন আমি না বুঝেই, এমবিবিএস পাশ করার পর, এই কোর্সটার জন্য পড়াশোনা করে এখানে ঢুকে যাই। তার কথা না শুনে আমার এটার জন্য আমি মাফ চাই, কিন্তু আমার স্বামী, আমার কোর্সটাকে এলাও করেন, কিন্তু উনি আর বাচ্চা নিতে চান না। এটা কি আমি গুনাহগার হব? আমার কি করা উচিত? আমাদের মধ্যে প্রায় অনেক বেশি ঝগড়া হয়, ডিভোর্সে পর্যন্ত চলে যায়, এরকম অবস্থায় আরেকটা বাচ্চা নেওয়াটাও কি উচিত হবে? আমার এই অবস্থায় শরীয়তের হুকুমটা কি? কোর্স চলাকালীন অবস্থায় ২ বাচ্চা সামলানো আসলেই সম্ভব না, আর এটা আমার হাজব্যান্ড চায়ও না। কিন্তু কোর্স শেষ হলেও সে বাচ্চা  নিতে চায় না। সে বলে আর কোন বাচ্চা নিব না এটাই আমাদের একমাত্র বাচ্চা থাকবে। আর কোনদিন বাচ্চা নেওয়ার কথা বলবা না। কোর্স ছেড়ে দিবো কিনা , এটা নিয়ে উনি, উত্তরে  বলেন যে, ওনার কোন সমস্যা নেই কোর্সটা তে। বিয়ের আগে আমার বাবা  উনার কাছ থেকে (ওয়াদা) কথা নিয়েছিল আমাকে পোস্টগ্রাজেশন করাইতে দিতে হবে। এ অবস্থায় বাচ্চা নেয়ার না নেয়ার জন্য, আমি কি গুনাগার হবো কিনা?? আমি এখন কি করবো? দয়া করে জানাবেন

1 Answer

0 votes
by (583,020 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

https://ifatwa.info/9675/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,
ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে।

 রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة

“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে  সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণ  করা হয়।
,
এক.স্থায়ী পদ্ধতি–যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। 

আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)

দুই.অস্থায়ী পদ্ধতি– যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো), Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রকার শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত মাকরুহে তানযিহি।তবে শরীয়ত সম্মত নিম্নোক্ত প্রয়োজনে বৈধ রয়েছে।
(ক)মহিলা এত দুর্বল যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
(খ)মহিলা নিজ বাসস্থান থেকে এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপতত কোনো মনোবাসনা নেই।আবার নিজ বাসস্থানে আসতেও কয়েক মাস লেগে যাবে বা কয়েক মাসের প্রয়োজন।
(গ)স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক চূড়ান্ত নিম্ন পর্যায়ের,এমনকি উভয়ের অন্তরে বিচ্ছেদের চিন্তাভাবনা চলছে।
(ঘ)পূর্বের বাচ্চার সু-সাস্থ্যর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
(ঙ)স্থান-কালের ফাসাদ অর্থাৎ দ্বীনী পরিবেশের চূড়ান্ত পর্যায়ের অবনতির ধরুন বাচ্চা বদ-আখলাক বা অসচ্চরিত্র এবং মাতাপিতার বে-ইজ্জতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করলে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عن جابر قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب العزل

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)

★বিঃদ্রঃ
সম্পদ কমে যাবে বা মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে সমাজে লজ্জিত হতে হবে মনেকরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ কখনো বৈধ হবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 

ولا تقتلوا أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً. 

‘’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি।নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ . 
“শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,আজকাল যদিও সন্তান হত্যার পরিবর্তে নানাবিধ উপায়ে তাদের জন্মের পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, তবুও সন্তান জন্মানোর ফলে আর্থিক আশংকাজনিত ভুল ধারণা জন্মনিরোধের অন্যতম কারণ। 

সুতরাং এবিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে ভেবে চিন্তে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাতকে বরবাদ না করে দেই।

বিস্তারিত জানুনঃ 
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে বাচ্চা নেয়া না নেয়া মূল বিষয় নয়।

আল্লাহ না দিলে বাচ্চা নেয়ার ক্ষমতা তো আপনাদের নেই।
আবার আল্লাহ তায়ালা দিলে হাজারো চেষ্টা করেও তো বাচ্চা দুনিয়াতে আসা থেকে আপনারা বাধা দিতে পারবেননা।

সুতরাং এক্ষেত্রে বাচ্চা নেয়া না নেয়া মূল প্রশ্ন নয়।
এখানে মূল প্রশ্ন হলো প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে  জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা জায়েজ আছে কিনা?

★যদি এক্ষেত্রে স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়,সেক্ষেত্রে উহা হারাম হবে।

আরেকটি সন্তান নিলে সম্পদ কমে যাবে বা তাকে কি খাওয়াবো? তাকে কি ভরনপোষণ দিবো? এধরণের চিন্তা ভাবনায় অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করলেও তাহা হারাম হবে।

★তবে যেহেতু আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক চূড়ান্ত নিম্ন পর্যায়ের,এমনকি আপনাদের মধ্যে প্রায় অনেক বেশি ঝগড়া হয়, এমনকি ডিভোর্স পর্যন্ত চলে যায়,সুতরাং এমতাবস্থায় প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করা হারাম হবেনা।

এতে আপনার গুনাহ হবেনা।

তবে আকীদা বিশুদ্ধ রাখতে হবে,এমন আকীদা রাখতে হবে যে ঝগড়াঝাটি ও ডিভোর্স থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আমরা অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করছি।

আরেকটি সন্তান নিলে সম্পদ কমে যাবে বা তাকে কি খাওয়াবো? এধরণের চিন্তায় নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 98 views
...