আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (14 points)
আসসালামু আলাইকুম।
প্রশ্ন (১) আমরা জানি যে, গীবত করা কিংবা কারো দোষ প্রকাশ করা ইসলামে  নিষিদ্ধ। এখন আমার প্রশ্ন হল যে, সাহাবীরা কখনো গীবত করেননি কিন্তু বিভিন্ন হাদিস থেকে পড়ে দেখা যায় কোন সাহাবী অপর কারো দোষের কথা  বর্ণনা করেছেন  এবং পরে সেই দোষী ব্যক্তির কি শাস্তি রাসুল সাঃ তাকে দিয়েছেন তা জানা যায়। নিশ্চয়ই সাহাবীরা কখনো গীবত করেননি বিশ্বাস করি কিন্তু এটা ইসলামের কোন পন্থায় বা কোন দৃষ্টির   আলোকে বর্ণনা করেছেন তা ব্যাখ্যা করে জানাবেন।
★★নিচে একটি হাদিস উল্লেখ করলাম
ইয়াযীদ ইবন নুআয়েম ইবন হুযাল (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মা'ইয ইবন মালিক ইয়াতীম ছিলেন এবং তিনি আমার পিতার নিকট লালিত-পালিত হন। একদা তিনি মহল্লার একটি মেয়ের সাথে ব্যভিচার করেন। তখন আমার পিতা তাকে বলেন, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যাও এবং অবস্থা সম্পর্কে তাঁকে অবহিত কর। সম্ভবতঃ তিনি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন-তোমার অপকর্মের জন্য। আর তার এরূপ বলার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, যাতে মা'ইযের নাজাতের কোন ব্যবস্থা হয়ে যায়। এরপর মা'ইয (রাঃ) তাঁর নিকট যান এবং বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যিনা করেছি, আপনি আমার উপর আল্লাহ্‌র কিতাবের হুকুম কার্যকরী করুন। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তিনি দ্বিতীয়বার বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যিনা করেছি, আপনি আমার উপর আল্লাহ্‌র কিতাবের হুকুম কার্যকরী করুন। এ ভাবে তিনি চারবার তার ক্রটির কথা স্বীকার করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি তো চারবার তোমার দোষের কথা স্বীকার করেছ। এখন বলঃ তুমি কার সাথে যিনা করেছ? তখন তিনি বলেনঃ অমুক মেয়ের সাথে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তার সাথে শয়ন করেছিলে? মা'ইয বলেনঃ হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি কি তার সাথে মিলিত হয়েছিলে? মা'ইয বলেনঃ হ্যাঁ। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তার সাথে সংগম করেছিলে? মা'ইয বলেনঃ হ্যাঁ। এ সব শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রজম বা পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দেন। তাকে হাররা নামক স্থানে নেওয়া হয় এবং পাথর মারা শুরু হলে ভয়ে অস্থির হয়ে তিনি পালাতে থাকেন। এ সময় আবদুল্লাহ ইবন উনায়স তাকে কাবু করে ফেলেন। তাঁর সঙ্গী ক্লান্ত হয়ে পড়ায়, তিনি উটের খুর দিয়ে তাকে আঘাত করে হত্যা করেন। এরপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এ ঘটনা বর্ণনা করলে, তিনি বলেনঃ তোমরা তাকে কেন ছেড়ে দিলে না? সে হয়তো খালিস তাওবা করতো এবং আল্লাহ্‌ তাকে মাফ করে দিত। (আবু দাউদ, ইসলামী ফাউন্ডেশন ৪৩৬৬

প্রশ্ন (২)যদি কোন স্বামী স্ত্রী উভয়ই ইসলাম সম্বন্ধে খুব গভীর জ্ঞান রাখেন এবং পুরুষদের একাধিক বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহ অনেক কল্যাণ  রেখেছেন এটা যদি কোন স্ত্রী ভালভাবে জেনে থাকেন তারপরেও সেই স্ত্রীলোক তার স্বামীর জন্য একাধিক বিয়ের ব্যাপারে বাধা দেন না কারন জানেন যে এটা  আল্লাহর বিধান। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয়  তিনি আল্লাহর বিধানে অসন্তুষ্ট কিনা?জবাবে তিনি বলেন আল্লাহর বিধানে তিনি অসন্তুষ্ট না। কিন্তু তার স্বামী আরএকটি বিয়ে করলে তিনি কষ্ট পাবেন। কিসের কষ্ট  প্রশ্ন করা হলে জবাবে বলেন এটা হিংসা না এটা হলো ঈর্ষা।
★এখন জানতে চাচ্ছি এটা আসলে নারীদের কোন ধরনের কষ্ট যেটা অনেক নারী এ ধরনের মন্তব্য পোষণ করে বলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান তো এমন নয় যে যেটা মুমিনের অন্তরে কষ্ট লাগবে। দয়া করে একটু ব্যাখ্যা করে জানাবেন। আসসালামু আলাইকুম।

1 Answer

0 votes
by (575,580 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ [٤٩:١٢] 

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। {সূরা হুজুরাত-১২}

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ [١٠٤:١] 

প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ, {সূরা হুমাজা-১}

ছয়টি কারণে গীবত করা জায়েজ আছে। যথা-

১- জুলুম থেকে নিচে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে। এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।

২- খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।

৩- বিষয়টি সম্পর্কে শরয়ী সমাধান জানতে গীবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন বলা যে, আমাকে অমুক ব্যক্তি আমার উপর জুলুম করেছে, তাই আমারও কি তাকে আঘাত করা জায়েজ আছে? ইত্যাদি

৪- সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী ধোঁকা ও খারাবী থেকে বাঁচাতে গীবত করা জায়েজ। যেমন সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদীস, আসার ও ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা ইত্যাদি সম্পর্কে দোষ জনসম্মুখে বলে দেয়া, যেন তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে মানুষ বাঁচতে পারে। 

৫- প্রাকাশ্যে যদি কেউ শরীয়তগর্হিত করে, তাহলে তার খারাবী বর্ণনা করা এমন ব্যক্তির কাছে যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে। যেমন কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে মানুষের সামনে তার সরাসরি বদনাম করা জায়েজ আছে। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।

৬- কারো পরিচয় প্রকাশ করতে। যেমন কেউ কানা। তার পরিচয় দেয়া দরকার। কিন্তু নাম কেউ চিনতেছে না। কিন্তু কানা বলতেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গীবত হলেও এটা বলা জায়েজ আছে। এতে গীবতের গোনাহ হবে না। {তাফসীরে রুহুল মাআনী- ১৪/২৪২, সূরা হুজরাত-১২}

বিস্তারিত জানুনঃ-

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ঘটনা যখন সেই সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সামনের এসে চার বার স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন,এবং ইসলামের নীতি অনুসারে মুসলিম জনতার সামনে যখন তার প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে,এখানে গুনাহ প্রকাশ্যেই চলে এসেছে 

তাই সাধারণ মুসলমানদের খারাবী থেকে বাঁচাতে,যেনার দণ্ডবিধি ও বিচারের বিষয় দুনিয়ার মানুষকে জানাতে সেটি হাদীসে উল্লেখ রয়েছে।

এটি নাজায়েজ নয়।

(০২)
আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারনে কিছু নারীদের মনে ঈর্ষা হতে পারে,তবে এর দরুন আল্লাহর বৈধ বিধানের উপর প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...