হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ أَبِي صَعْصَعَةَ أَنَّه“ قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ يَسَارٍ أَبَا الْحُبَابِ يَقُوْلُ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ يُرِدْ اللهُ بِه„ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন। (বুখারী,আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৯)
হাদিসে রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘যদি কারো উপর কোনো কষ্ট আসে, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তার গুনাহসমূহ ঝরিয়ে দেন; যেমনভাবে গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৮৪)
দুনিয়ার এ জীবনে বিপদ আসেই। নানান সময় নানান দিক থেকে বিপদ এসে হামলে পড়ে আমাদের ওপর। অর্থসম্পদ সন্তানাদি সম্মান-মর্যাদা- আক্রান্ত হয় সবকিছুই। দুনিয়ার জীবনে এ বিপদের মুখে পড়ার কথা অবশ্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে-
وَ لَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَیْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَ الْجُوْعِ وَ نَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَ الْاَنْفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ، وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیْنَ، الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِیْبَةٌ، قَالُوْۤا اِنَّا لِلهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیْهِ رٰجِعُوْنَ.
আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো মসিবত এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব। -সূরা বাকারা (২) : ১৫৫-১৫৬
এখানকার কোনো সংকটই স্থায়ী নয়। দুনিয়াই যেখানে ক্ষণস্থায়ী, সেখানে এসব সংকট স্থায়ী হবে কীভাবে? পবিত্র কুরআনের একটি ছোট সূরা ‘সূরা আলাম নাশরাহ’। এ সূরায় আল্লাহ তাআলার ওয়াদা-
فَاِنَّ مَعَ الْعُسْرِ یُسْرًا اِنَّ مَعَ الْعُسْرِ یُسْرًا.
কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে। -সূরা আলাম নাশরাহ (৯৪) : ৫-৬
হতাশ নয়; মুমিন হবে আশাবাদী। আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে সে; নিরেট পার্থিব বিষয় নিয়েও, দ্বীনী ও পরকালীন বিষয়েও। সর্বশক্তিমান দয়ালু আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস থাকবে অটুট, তার অবশ্য হতাশ হওয়ার সুযোগ কোথায়! এ বিশ্বাস হতাশাকে দূর করবেই।
,
(০২)
তাকে ইস্তেগফার পাঠ করতে হবে।
এমন কথা মাথায় আসলেই لا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم পড়বে।
,
(০৩)
দুনিয়া-আখেরাতের সকল কাজে, সকল মকসুদ হাসিল করার জন্য এবং সকল বিপদ-মুসীবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখা। এটা ইসলামের শিক্ষা। ঈমানের শিক্ষা।
ইরশাদ হয়েছে
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ
‘ভরসা কর পরাক্রমশালী করুণাময়ের উপর।’ (সূরা শুআরা : ২১৭)
আরো ইরশাদ -
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ
ভরসা কর চিরঞ্জীবের উপর, যার মৃত্যু নেই। (সূরা ফুরকান : ৫৮)
বান্দা যখন আল্লাহর উপর ভরসা করে তো এর বিনিময়ে সে কী পায়? এর বিনিময়ে সে আল্লার ভালবাসা পায়। আল্লাহর নৈকট্য পায়
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
‘যারা ভরসা করে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন।’ (আলে ইমরান ৩ : ১৫৯)
আল্লাহ তার অন্তরে শান্তি ও প্রশান্তি দান করেন এবং আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বলাক ৬৫ : ৩)
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম সাঈদ ইবনে যুবাইর রাহ. বলেন-
التوكل على الله ـ عز وجل ـ جماع الإيمان
অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা করা এমন গুণ যা অনেক ঈমানী গুণের ধারক। (আযযুহদ, হান্নাদ ইবনুস সারী ১/৩০৪)
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে।তারই রহমতের ভরসা করবে।
,
(০৪)
হাসি-ঠাট্টার ছলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কাউকে নিয়ে হাসাহাসি করা বা মন্দ নামে ডাকা যেন আমাদের কাছে তেমন কোনো বিষয়ই না। অথচ এটি এমনই একটি মন্দ কাজ, যে বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا یَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤی اَنْ یَّكُوْنُوْا خَیْرًا مِّنْهُمْ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنْ یَّكُنَّ خَیْرًا مِّنْهُنَّ وَ لَا تَلْمِزُوْا اَنْفُسَكُمْ وَ لَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِیْمَانِ وَ مَنْ لَّمْ یَتُبْ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ.
হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই যালেম। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১১
কেউ যদি কারো চেহারা, গায়ের রং, চূল ইত্যাদি কারনে ছোট করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এবং সে তা নিরবে সহ্য করে,কোনো বিরুপ মন্তব্য না করে,এবং আল্লাহর উপরেও রাগ না করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা এর জন্য জাযায়ে খায়ের তথা উত্তম প্রতিদান দান করবেন।