আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
58 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (15 points)
আসসালামু আলাইকুম,
১) আমি গীবতের ভয়াবহতা জানার পর থেকে অনেক চেষ্টা করি গীবত থেকে বেঁচে থাকার। কাছের মানুষজনও গীবত করলে নিষেধ করি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,গীবত করতে নিষেধ করার পরও তারা গীবত করতেই থাকে। অনেকসময় আমি নিষেধ করলেও রেগে যায় আর গীবত চালিয়েই যায়। আমি সেই স্থান ত্যাগ করে অন্য রুমে গেলেও সেখান থেকেও আমার কানে সেই কথাগুলো আসেই। আবার আমি আরেক রুমে থাকলেও অন্য রুমে গীবত করলে সেটা শুনতে পাই। অনেকসময় কোনো আত্মীয় স্বজন যারা বয়সে বড়, তারা বেড়াতে আসলে বা তাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তারা কোনো ঘটনা বলা শুরু করলেও সেখানে গীবত হয়। সেখানে আমি তাদের নিষেধও করতে পারিনা। নিজের কাছে গীবত শুনতেও খুব ই অস্বস্তি লাগে। অন্য রুমে যেয়ে বসে থাকলেও তবুও শুনা যায়।
শায়েখ,এই অবস্থায় আমার করণীয় কি? নিষেধ করার পরও সামনে গীবত করতে থাকলে,বা অন্য রুমে থাকলেও  গীবত শুনা গেলে কি আমার গুনাহ হবে? আর কখনো নিজের ভুলেও গীবত হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ আল্লাহর কাছে মাফ চাই কিন্তু যার নামে গীবত করা হলো তার কাছে তো মাফ চাওয়ার উপায় থাকেনা এক্ষেত্রে করণীয় কি?


২) শুনেছি যে কোনো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ইমান ভঙ্গের কারণ পাওয়া গেলে তাদের মধ্যকার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। দেশের অনেক মানুষ তো ইমান ভঙ্গের কারণ জানেই না। যার দরুণ অজ্ঞতাবশত কখনো কখনো ইমান ভঙ্গের কোনো কারণ ঘটিয়ে ফেলে। এতেও কি তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে? শুধু তওবা করলে কি হবে না?


৩) ছেলেপক্ষ যদি দূরের হয় তখন দেখতে আসার আগে ছবি চায়। পছন্দ হলে তখন আসতে চায়। তো এইজন্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয়েই ছবি দেয়া হয়। দেয়ার সময় বলে দেয়া হয় অন্য পুরুষ যেনো না দেখে। এরপর যদি বিয়ের কথা বার্তা না এগোয় আর তাদের কাছে ছবি গুলো থাকলো, কোনোভাবে ছবিগুলো অন্য পুরুষ দেখলো এতে কি আমার গুনাহ হবে??
৪) বাধ্য হয়ে কখনো মিথ্যা বললে যেখানে বান্দার হকের বিষয় সংশ্লিষ্ট নয় এতে কি শুধু আল্লাহর কাছে তওবা করলেই হবে নাকি যাকে মিথ্যা বলা হয়েছে তার কাছেও ক্ষমা চাইতে হবে?


৫) শায়েখ,কাউকে যদি বলি " কোনো ভুল ত্রুটি হলে মাফ করে দিয়েন"। উত্তরে সে বলে "আল্লাহ মাফ করবে"। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ বা সে যে আমার উপরে রেগে আছে বলে এমনটা বলে তা না। তাদের কাছে যে কেউ মাফ চাইলেই তারা এটা বলে," হ্যাঁ মাফ করে দিয়েছি" এরকম কিছু কখনোই বলেনা। তো ওই কথা বলায় তাদের প্রতি গীবত বা অন্য কোনো হক সংশ্লিষ্ট বিষয় থাকলে কি  তাদের অন্তর থেকে মাফ পেয়ে গেছি?

আবার কোনো বয়স্ক মানুষের কাছে মাফ চাইলে বলে," তোমরা তো কোনো ভুল করো নাই/ তোমাদের আবার কিসের ভুল,ছোট মানুষ তোমরা"। কিন্তু আমি জানি কোনো একসময় তাদের নামে গীবত হয়েছে আমার দ্বারা। তো তাদের ওই উত্তরে কি আমি মাফ পেয়েছি?


৬)ছোটবেলায় না বলে আত্মীয়স্বজনের কোনো জিনিস নিয়ে থাকলে বড় হয়ে বান্দার হক এর বিষয় বুঝার পর তাদের কাছে," কোনো ভুল ত্রুটি হলে মাফ করে দিয়েন" এরকম বলার পর তারা মাফ দিলে কি সেই হকের বিষয়েও মাফ পেয়ে যাবো?


জাযাকুমুল্লাহু খয়রন

1 Answer

0 votes
by (579,240 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ [٤٩:١٢] 

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। {সূরা হুজুরাত-১২}

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ [١٠٤:١] 

প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ, {সূরা হুমাজা-১}

عَنْ أَبِي سَعْدٍ، وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا “، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَالَ: ” إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِ “وَفِي رِوَايَةِ حَمْزَةَ ” فَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ لَهُ، وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يَغْفِرَهَا لَهُ صَاحِبُهُ  

হযরত আবু সাঈস এবং জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। উভয়ে বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ গীবত করা ব্যভিচার করার চেয়েও জঘন্য। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গীবত করা ব্যভিচারের চেয়ে জঘন্য হয় কি করে? রাসূল সাঃ বললেনঃ নিশ্চয় ব্যভিচারকারী ব্যভিচার করে তওবা করে থাকে, ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, কিন্তু গীবতকারীকে ক্ষমা করা হয় না, যতক্ষণ না যার গীবত করেছে সে তাকে ক্ষমা করে। {শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬৩১৫, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৫৯০}

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
এই অবস্থায় আপনার করণীয় তাদেরকে গীবত করা থেকে নিষেধ করা। নিষেধ করার পরও সামনে গীবত করতে থাকলে সেক্ষেত্রে অন্য রুমে চলে যাবেন।

অন্য রুমে যাওয়ার পরেও গীবত শোনা গেলে সেক্ষেত্রে আপনি সেদিকে খেয়াল না করে কোনো কাজে মগ্ন থাকবেন, তাহলে আপনার গুনাহ হবেনা।

আর কখনো নিজের ভুলে গীবত হয়ে গেলে, যার নামে গীবত করা হলো তার কাছে মাফ চাওয়ার উপায় না থাকলে সেক্ষেত্রে নিজের জন্য আর যার গীবত করা হয়েছে,তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন।

(০২)
ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমান ভেঙ্গে যাওয়ার কাজ করলে ঈমান চলে যাবে
এক্ষেত্রে বিবাহিত দের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে,ঈমান নবায়নের পাশাপাশি বিবাহও নবায়ন করতে হবে।

(০৩)
এতে আপনার গুনাহ হবে।

পাত্রকে ছবি পাঠানো কোনোক্রমেই জায়েজ নেই।

(০৪)
এক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেই হবে।

(০৫)
এরপর আপনি আল্লাহর কাছেও মাফ চাইবেন।
সেক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ক্ষমা করবেন।

(০৬)
হ্যাঁ, মাফ হয়ে যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...