আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,577 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (8 points)
আস্সালামু'আলাইকুম!
শায়খ, আমার স্বামী আমাকে বিবাহের পর তার মায়ের সাথে যৌথভাবে একটি ফ্ল্যাটে রাখে। ২০১৭ সালে বিবাহের সময় আমরা উভয়েই শিক্ষার্থী ছিলাম। আমার স্বামীর উপার্জন বলতে তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের আয় থেকেই আমার ভরন পোষন ও আমাদের খরচ চলে আসছে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আমার স্বামী তার বাবার সম্পদের আর্থিক হিসাব ও সংসার চালানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় যা কিনা এতকাল তার মায়ের দায়িত্বে ছিল। উল্লেখ্য যে, আমার শাশুড়ি বিধবা এবং আমার স্বামীর পরিবারে ছোট একটি ভাই আর মা ই আছেন। ছোট পরিবার হওয়াতে এবং বাবা মারা যাওয়ার কারনে বিবাহের সময় বড়ছেলের দায়িত্বের স্থান থেকে আমার স্বামী আমাকে তার মায়ের সাথে একই বাসায় রাখে। কিন্তু বিবাহের পূর্বে আমার স্বামীর অনুরোধ ব্যতীত তার মায়ের সাথে থাকার ব্যাপারে আমার সাথে কোন চুক্তি হয় নি। কিন্তু বিবাহের পর থেকে আমার শাশুড়ির খারাপ আচরনের ফলে আমাদের দুজনের সম্পর্কে বেশ দুরত্ব এসে পড়েছে। আমার স্বামী আমার সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে ও তালাক পর্যন্ত চিন্তা করতে আমাকে বাধ্য করলেও তার মায়ের থেকে আমাকে আলাদা রাখার ব্যাপারে কখনো রাজি হয়নি এই দোহাই দিয়ে যে সে তার মায়ের দায়িত্ব পালন করবে। এই পরিস্থিতিতে আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও দিন দিন আমার শাশুড়ির আচরনের অবনতি হচ্ছে, আমি দ্বীন Practice এর চেষ্টা করি বলে আমার স্বামীরও আমার প্রতি তার মায়ের আচরনের ব্যাপারে সহনশীল হওয়ার আশা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অথচ শাশুড়ির এহেন তাকওয়াপরিপন্থি আচরন আমার স্বামীর সাথে সম্পর্কের পাশাপাশি ব্যাক্তি জীবনে আমাকে মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমি হাজার চেষ্টা করেও হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি এমন toxic দ্বীনহীন মানুষের সাথে থাকতে থাকতে আমার দ্বীনচর্চায় আমূল ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এমনও সময় ছিল যখন আমি মানসিক অসুস্থতায় ভুগেছি কিন্তু আমাকে আমার শাশুড়ি থেকে আলাদা করার ব্যাপারে আমার স্বামী গুরুত্ব দেয়নি বরং আমার ত্রুটির জন্য আমাকেই দোষারোপ করেছে। আমি কখনোই আমার স্বামীকে তার মায়ের দায়িত্ব পালনে বাধা দেই না বরং অনুপ্রেরনা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু কখনোই তার মায়ের চোখে ভালো হতে পারিনা আমার আচরন বা চেষ্টা দ্বারা। এখন আমি আলাদা হতে চাইছি। আমার স্বামীর স্বামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে আমাকে আলাদা না করে তার মায়ের সাথে মিলে চলে আরো একবার তার মন জয়ের চেষ্টা করতে বলছে। কিন্তু আমি জানি এমন চেষ্টা আর সুযোগ বারংবার করার পরও পৌনে ৪ বছরে কোনদিন তার মায়ের চোখে আমি বা আমার স্বামী ভালো হতে পারিনি। এখন এমন অবস্থায় পৌছেছে যে আমি আমার দ্বারা শাশুড়ির সাথে হেসে কথা বলার মত মানসিক শক্তি তো আমি পাচ্ছিই না বরং নিজেকে সময় দেয়াটাকে খুবই জরুরি মনে করছি। অথচ আমার স্বামী চায় এখনো আরো চেষ্টা করে তার মায়ের সাথে থাকার চেষ্টা করতে। এবার আমার হাজার চেষ্টার পরও যদি তার মা ঠিক না হয় তাহলে তিনি আমাকে আলাদা বাসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আমার স্বামী বলছেন যে, আমি যদি আমার পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে বা যে কোন কারনে তাকে আমার আলাদা থাকার হক্ব আদায়ে বাধ্য করি, তাহলে আমার স্বামী আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন এবং আলাদা হবার পর আমার সাথে তার সম্পর্ক ঠিক হবার কোন সুযোগ থাকবে না। অর্থাৎ তিনি আমাকে সতর্ক করছেন যেন আমি তাকে বাধ্য না করি এতে করে তিনি আমার প্রতি চিরতরে অসন্তুষ্ট হবেন এবং এর প্রভাব চিরতরে নাকি থেকে যাবে আমাদের সম্পর্কে। যা আমি চাইনা।
কিন্তু আমার স্বামীর কথামত তার মায়ের সাথে পুনরায় সুন্দর আচরন ও কথা বলার চেষ্টা করবার মত সামর্থ্য আমার নেই। গত কিছুদিন আগে আমার শাশুড়ির আমার প্রতি চরম খারাপ আচরন ও মন্তব্য আমাকে চরম পর্যায়ে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলেছে এবং আমার শাশুড়ির প্রতি নূন্যতম সম্মানবোধ আমার মধ্যে কাজ করছে না বরং অসন্তুষ্টি আমাকে তার থেকে দুরে থাকতে বাধ্য করছে। এমনকি তা আমার রবের সাথে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে, আমি ঠিকমত ত্বলীবুল ঈলমের দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। উক্ত ঘটনার পর আমার স্বামীও আলাদা হওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে তার পক্ষ থেকে অনুভব করতে পারে এবং এক পর্যায়ে আলাদা রাখবে বলে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। ২ দিন পর সেই সিদ্ধান্ত আমাকে না জানিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয় তার মায়ের আবেগআপ্লুত কথা শুনে। যদিও আমার শাশুড়ি এখনো গো ধরে আছে এবং আমাদের সাথে থাকবে বলে কোনরুপ ভালো আচরনের চেষ্টা করছেন না এবং বলেই যাচ্ছেন আলাদা হবার কথা কিন্তু আমার স্বামী সে দিকে আর কান দিচ্ছে না। বরং আমি তাকে ধরিয়ে দিতে গেলে আমার উপর তার মায়ের আবেগের কথা বলে তার মত মেনে নিচ্ছি না বলে অসন্তোষ প্রকাশ করছে।
এমতাবস্হায়, (১) আমার স্বামীকে কি আমি চাপ প্রয়োগ করতে পারবো আলাদা হবার জন্য?
প্রয়োজনে আমি কার বা কিসের সাহায্য নিতে পারবো?

 আমি কি বাবা বাড়িতে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানাতে পারবো যেন সন্তোষ চিত্তে আমার হক্ব আমার স্বামী আদায় করেন এবং এমন মানুষের সাথে আমাকে না রাখেন?

(২) আমার স্বামী যদি আমার প্রতি চাপ প্রয়োগের ফলে অসন্তুষ্ট হয় তা কি তার জন্য জায়েজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


স্বামীর জন্য জরুরি হলো স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করা,তার সাথে সদব্যবহার করা।
  
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
ألا واستوصوا بالنساء خيرا، فإنما هن عوان عندكم ليس تملكون منهن شيئا غير ذلك
শোন হে! তোমরা আমার পক্ষ হতে নারীদের প্রতি সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ কর। তারা তো তোমাদের কাছে আটকে আছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে এছাড়া আর কিছুর অধিকার রাখো না। (জামে তিরমিযী, হাদীস: ১০৮৩

সুতরাং স্ত্রীর উপর স্বামীর খেদমত আবশ্যক,  
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা স্ত্রীর জন্য একটি অতিরিক্ত কাজ। এটা তার দায়িত্ব নয়,আবশ্যক নয়, । কিন্তু বর্তমান সমাজে মনে করা হয়, এটা তার অপরিহার্য দায়িত্ব বরং এটিই যেন তার প্রধান দায়িত্ব। 
আমাদের সমাজের আবহমান কালের চলমান রীতি হলো, যৌথ পরিবারগুলোতে পুত্রবধূরা শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করে থাকেন। এটাকে পারিবারিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।
ছেলের জন্য বউ আনাই হয় শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। এ সবই পরিমিতিবোধের চরম লঙ্ঘন। মা-বাবার সেবা করা সন্তানের দায়িত্ব, পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক ৪/১৯৩, কিফায়াতুল মুফতি ৫/২৩০)

যদি স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বামীর কর্তব্য হলো তাঁদের সেবা-যত্ন করা। তবে কোনো স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে স্বামীর মা-বাবার সেবা করেন, এটা তাঁর পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে তিনি অনেক সওয়াব পাবেন। তবে এসব করতে আইনত তিনি বাধ্য নন। যদিও কাম্য এটাই যে স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবেন। তাঁদের মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন এবং তাঁদের সেবা করতে পারাকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও খাতির করবেন। তার সুখ-সুবিধার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন।

★ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।
যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি শাশুড়ীর সাথে ভালো ব্যবহার করাকেই চলমান রাখিবেন।
তিনি যেহেতু মুরব্বি,তাই তার উপর কথা বলা ঠিক হবেনা,তার খেদমত আপনার উপর যদিও আবশ্যক নয়,তবে তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আপনি তা করতে পারেন।
দূরে থাকতে পারেন,তবে কথা বলা বন্ধ করবেননা।
উনার হক আপনি নষ্ট করছেননা।
আপনি স্বামীকে নিয়ে আলাদা থাকতে পারেন,এটা আপনার অধিকার রয়েছে।
,
যেহেতু আপনার আলাদা থাকা খুবই প্রয়োজন হয়ে গিয়েছে,আর ইসলামও সেই অধিকার আপনাকে দিয়েছে,তাই আপনি আপনার পরিবারের মুরব্বিদেরকে তাদের মুরব্বিদের সাথে বৈঠক করাতে পারেন।
,
এলাকার মাতব্বরদের সাহায্য নিতে পারেন।
কোনো ভাবেই কাজ না হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন।
,  
স্বামীর অনুমতি ছাড়া নিজ বাবা বাড়িতে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানাতে পারবেননা।
কারন এতে স্বামীর হক নষ্ট হবে।
,
আরো জানুনঃ 
,
(০২)
এই বিষয়ে আপনার উপর চাপ প্রয়োগ করা আপনার স্বামীর জন্য কোনোভাবেই জায়েজ নেই।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...