আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
59 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
ওস্তাদ, আবার বয়স আনুমানিক ২৩ বছর। আগে জেনারেল এ পড়ালেখা করতাম, আলহামদুলিল্লাহ হেদায়েত প্রাপ্ত হওয়ার পর চেষ্টা করছি দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের জন্য, জ্ঞানের খুব গভীরে ঢুকতে পারছি বিষয়টা এমন না, কিন্তু চেষ্টা করছি বেশ অনেক বছর, চার বছর রানিং।  কোরআন থেকে কিছু অংশ হেফজ করছিলাম, আইওএম আলিম কোর্সে পড়ালেখা করতেছি আলহামদুলিল্লাহ। পড়ালেখার পাশাপাশি বর্তমানে একটা মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্বে আছি আলহামদুলিল্লাহ। ওস্তাদ পরিপূর্ণভাবে দ্বীনে ফেরার পর থেকেই আমার  ইচ্ছা উচ্চতর শিক্ষার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চলমান রাখা। কিন্তু এখানে বেশ কিছু বাধা ছিল বা আছে, এর মধ্যে অন্যতম হলো ফ্যামিলি! আমার ফ্যামিলিতে এখন বর্তমানে আমি থাকি, আমার আব্বু থাকেন, আমার দাদি থাকেন। (বর্তমানে এই তিনজন)। আমার আম্মু, তিনি প্রায় চার বছর মারা গেছেন। আমার একজন বড় ভাই আছেন তিনি বিদেশ থাকেন। তার স্ত্রী আমার ভাইয়ের শশুর বাড়িতেই থাকেন।

আমার আব্বু পরবর্তীতে আর বিয়ে করেনি, সেহেতু আমার বাড়িতে লোকজনও কম, ওস্তাদ আমার আব্বুর ৬০ বছর এর মত বয়স, চলতে পারেন, কাজও করতে পারেন। বিয়ে করার কথা উঠলে মাঝে মাঝে হ্যাঁ বলেন, মাঝে মাঝে না বলেন। আমি এখন পর্যন্ত পরিবারে সেরকম কোনো আর্থিক সাপোর্ট দেই না। এমত অবস্থায় আমি কি মাদ্রাসায় যাইতে পারবো?
ওস্তাদ আমার সমস্যার মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো,
ভর্তি হওয়ার পর মাদ্রাসার খরচ ( এই বিষয়ে আমি ম্যানেজ করে নিতে পারব, এবং সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছি। এই বিষয়টাতে ওস্তাদ আমার পরিপূর্ণ একিন আছে আলহামদুলিল্লাহ। হ্যাঁ হয়তো একটু কষ্ট করতে হবে,  আল্লাহ সহজ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। অতএব এটা ম্যানেজএইবল)

যেহেতু এই বয়সে শারীরিক চাহিদার একটা ব্যাপারও থাকে তো এটাও একটা সমস্যা বলা যেতে পারে! ( এখানে ওস্তাদ যদি নফসকে নিয়ন্ত্রিত করা যায়, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমি এখানেও সফর করতে পারব আশা করছি।)

ওস্তাদ নিচে যে আয়াত ও হাদিস দেয়া আছে, এগুলো কি সর্ব অবস্থায় তাদের খেদমতকে প্রধান্য দিতে হবে নাকি শুধু বার্ধক্যে পৌঁছালে?

১, وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُہُمَاۤ اَوۡ کِلٰہُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّہُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡہَرۡہُمَا وَ قُلۡ لَّہُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا ﴿۲۳

তোমার রাব্ব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত করবেনা এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলনা এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করনা; তাদের সাথে কথা বল সম্মানসূচক নম্রভাবে।

_ وَ اخۡفِضۡ لَہُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَۃِ وَ قُلۡ رَّبِّ ارۡحَمۡہُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ﴿ؕ۲۴﴾
অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাক এবং বলঃ হে আমার রাব্ব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালন পালন করেছিলেন।( সুরা বনি ইসরাইল : ২৩_২৪)

২,  وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ ۚ حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ وَہۡنًا عَلٰی وَہۡنٍ وَّ فِصٰلُہٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیۡکَ ؕ اِلَیَّ الۡمَصِیۡرُ ﴿۱۴﴾

আমিতো মানুষকে তার মাতাপিতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার মাতাপিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তনতো আমারই নিকট। (সূরা লুকমান:১৪)

৩, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন: তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছেন ? সে বলে: হ্যাঁ। তখন তিনি বলেন: তোমার পিতামাতাকে নিয়ে তুমি জিহাদ কর।
৪, এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর নিকট আগমন করে বলেন : আমি হিজরত ও জিহাদ করার জন্য আপনার হাতে বায়াত গ্রহণ করতে এসেছি। আমি এভাবে আল্লাহর নিকট থেকে পুরস্কার চাই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমার পিতা মাতার মধ্যে কি কেউ জীবিত আছেন? সে বলল: হ্যাঁ, তারা উভয়েই জীবিত আছেন। তখন তিনি (সা) বলেন: তুমি কি আল্লাহর নিকট পুরস্কার চাও? লোকটি বলে হ্যাঁ, তিনি বলেন তাহলে তুমি তোমার পিতা মাতার নিকটে ফিরে যাও এবং তাদের খেদমতে জীবন কাটাও।

৫, তালহা ইবনু মুআবিয়া (রা) বলেন:  আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করে বলি: হে আল্লাহর রাসূল: আমি আল্লাহর রাস্তায় জ্বিহাদ করতে চাই। তিনি (সা) বলেন: তোমার আম্মা কি জীবিত আছেন? আমি বললাম: হ্যাঁ, তখন তিনি বলেন: তখন তিনি বলেন: তার পা আঁকড়ে পড়ে থাকো, কারণ সেখানেই জান্নাত রয়েছে।

ওস্তাদ, বাস্তবতার আলোকে একটা উত্তম পরামর্শের আশা করতেছি। কারণ, হতে পারে এই পরামর্শের ভিত্তিতেই আমি সিদ্ধান্ত নিবো ইনশাআল্লাহ। হয় আমি মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য পরিপূর্ণ পড়ালেখা করবো, না হয় বাড়িতে থেকেই কিছু করার চিন্তা করব। ( ইনশাআল্লাহ,)।

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)


ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।
(১) তাদের আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে।কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না।এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।
(২)যে কাজের আদেশ তারা দিবেন,এতে তাদের ফায়দা থাকতে হবে,বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।
(৩)যে কাজের আদেশ দিচ্ছেন,তা তাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

সুতরাং যদি সন্তানের কষ্ট লাগবের জন্য তারা আদেশ দিয়ে থাকেন,তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ লিখেন,
ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، وهذا فيما فيه منفعة لهما ولا ضرر ، فإن شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا
গোনাহের কাজ ব্যতীত মুবাহ কাজে,মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।যদি তার ফাসিকও হয়।এটা তখন যখন তাতে মাতাপিতার ফায়দা থাকবে,এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।যদি সন্তানের উপর কষ্টদায়ক হয় তবে ক্ষতিকারক না হয়, তাহলে তখন মাতাপিতার আদেশ মান্য করা ওয়াজিব।(আল-ফাতাওয়াল কুবরা-৫/৩৮১)

আল্লামা হাসক্বাফী রাহ লিখেন,
لَا يَحِلُّ سَفَرٌ فِيهِ خَطَرٌ إلَّا بِإِذْنِهِمَا. وَمَا لَا خَطَرَ فِيهِ يَحِلُّ بِلَا إذْنٍ وَمِنْهُ السَّفَرُ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ
যে সফরে ক্ষতির আশংকা থাকবে সে সফর মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত বৈধ নয়।আর যে সফরে ক্ষতির সম্ভাবনা নাই,সে সফর মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত বৈধ।এর মধ্যে একটি হলো,ইলম অন্বেষণের জন্য সফর করা।অর্থাৎ ইলম অর্জনের জন্য সফর করা মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত ও বৈধ।এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/1707

এ সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/1722

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি পিতার খেদমত নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন।এবং ফরয সমপরিমাণ ইলম বাড়ীতে বসেই অর্জন করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...