আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
১।আমার বাবা মারা গেছেন আজ থেকে অনেক বছর আগে।কিছু দিন আগে আমার মা স্বপ্নে দেখেছেন উনি আর আমার বড় খালা কোথাও যাবেন, সম্ভবত বিদেশ। এদিকে টাইম পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু উনারা কোনো রিকশা পাচ্ছেন না। এরপর একটা রিকশা পেয়ে সেটা দিয়ে যাওয়ার পথে একটা পুকুর আসলো। রিকশা টা সেই পুকুরের পানির উপর দিয়েই চলতে লাগলো। স্বপ্নে আমার মা ও খালাকে আমার বাবা এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো। তো উনারা রিকশা দিয়ে সেই পুকুরের পানির উপরেই ঘুরে ঘুরে আমার বাবাকে খুঁজতে লাগলেন। পুকুরের পানির উপরেই অনেকগুলো ঘর ছিলো, সম্ভবত টিনের। কোনো একটা ঘরে অনেক বড় বড় আর মোটা সাপ বিচ্ছু ছিলো। আমার মা বাস্তবে সাপ ভয় পান তাই তিনি এটা বুঝতে পেরে সেই ঘরের দিকে আর তাকালেন না। এরই মধ্যে আমার বাবা সেই সাপবিচ্ছুর ঘর থেকে লাফ দিয়ে অন্য আরেকটা ঘরে গেলেন এবং সেই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমার মা ও খালাকে নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিলেন। পৌছে দেওয়ার পর আমার বাবা আবার চলে যাচ্ছিলেন, তখন আমার মা স্বপ্নে মন খারাপ করছিলেন যে বাবা তাদেরকে বিদেশ পর্যন্ত পৌছে না দিয়েই চলে যাচ্ছে। বাবা স্বপ্নে একদম স্বাভাবিক ছিলেন।
২। আমার মা আরেকদিন স্বপ্নে আমার মৃত দাদির হাতে অনেকগুলো টাকা দেখলেন। তখন স্বপ্নে আমার মায়ের কিছু টাকার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আমার দাদি আমার মাকে দেখে সরে গেলেন। মা বুঝতে পেরেছিলেন যে দাদি মা কে টাকা দিতে চান না যদিও মা দাদির কাছে টাকা চায়নি।
৩। আরেকদিন আমার মা দেখলেন উনি সন্ধ্যার দিকে গাড়িতে করে কোথাও যাচ্ছেন। পথিমধ্যে গাড়ির হেডলাইটের আলোতে মা দেখতে পেলেন পথের মধ্যে এক বিশাল বড় সাপ আছে। গাড়িটা সাপের পাশ দিয়ে চলে গেলো। এরপর মা আমাদের এক আত্নীয়ের বাসায় গেলেন, সেই আত্নীয় ও বাস্তবে মারা গেছেন অনেক আগেই। তো ওই বাড়িতে যাওয়ার পর ও মা বারবার দুশ্চিন্তা করছিলেন যে সাপ টা মায়ের পিছু পিছু না আবার এসে পড়ে।
৪। আমি যখন ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিই তখন মা দুইদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে আমি আর মা কোথাও যাচ্ছি, পথিমধ্যে কোনো একটা বিপদের মধ্যে পড়ে গেছি কিংবা আরেকটু সামনেই কোনো একটা বিপদ। তখন আমরা রাস্তা পরিবর্তন করে অন্যদিক দিয়ে আমাদের গন্তব্যে বা নিরাপদ স্থানে পৌঁছে গিয়েছি।
৫। মা আরেকদিন দেখলেন যে উনি আর আমার দুই মামা একটা অন্ধকার মতন ঘরের ভিতর আছেন। মা বুঝতে পারছিলেন যে এটা কাবাঘরের ভিতর। তখন মা আমার মামা সহ দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার কথা ভাবছিলেন।
৬। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে কোনো একটা দূর্ঘটনা ঘটেছে, আমার কোনো একজন বিবাহিত বান্ধবীর স্বামী মারা গেছে। আমার দুজন বান্ধবীর মাঝে স্বপ্নে কোন বান্ধবীর স্বামী মারা গিয়েছিল সেটা আমি ঘুম থেকে উঠার পর আর মনে করতে পারছিলাম না। তো আমি দেখলাম যে আমি আমার বড় মামার সাথে একটা হাসপাতাল মতন জায়গায় গিয়েছি। সেখানে একদম শেষে একটা রুমে গেলাম। রুমটা একটা হাসপাতালের রুমের মতো,জিনিসপত্র সব উন্নত ও দামি। ওখানে বেডে ড.আফিয়া সিদ্দিকী শুয়ে আছেন আর একজন পুরুষ ডাক্তার আছেন। আফিয়া সিদ্দিকী কে দেখলাম একদম শুকিয়ে গেছে, অনেকটা দুর্ভিক্ষে মানুষ যেমন শুকিয়ে যায় তেমন। উনার মাথায় কালো চাদরের মতো ছিলো, চুল দেখা যাচ্ছিলো, ঠোঁট একদম গোলাপি হয়ে ছিলো, সাদা চাদর দিয়ে শরীর ঢাকা ছিলো। উনার চেহারা টা একটু অন্যরকম ছিলো অর্থাৎ আমরা ছবিতে যে আফিয়া সিদ্দিকীকে দেখি তেমন না। তবে চেহারা স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু হাত খুবই চিকন ছিলো অর্থাৎ শুকিয়ে গেছে বুঝা যাচ্ছিলো। যেটা বুঝেছিলাম যে উনি অসুস্থ ছিলেন কিন্তু সেই হাসপাতালের মতো জায়গাটাতে উনার খুব ভালো যত্ন নেওয়া হচ্ছিলো। আমার যতদুর মনে পড়ে আমি স্বপ্নে এটাও দেখেছিলাম যে উনার রুমের পর বাকি জায়গাগুলো বিধ্বস্ত ছিলো,দেয়াল ভাঙা ছিলো যেমনটা গাজা বা যুদ্ধের ছবিগুলোয় আমরা দেখি ।
উস্তাদ এই স্বপ্ন গুলোর ব্যাখ্যা দয়া করে জানাবেন।
৭। আমি ভার্সিটিতে চান্স পেয়েও কিছু কারণে ভার্সিটিতে ভর্তি না হয়ে মহিলা কলেজে ভর্তি হয়েছি। তো আমার মা যখন উনার চতুর্থ স্বপ্নটার কথা আমার কাছে বললেন তখন আমি মাকে বললাম যে হয়তো ভার্সিটিতে আমার জন্য কোনো অকল্যাণ ছিলো, তারজন্য ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর ও আল্লাহ আমাকে মহিলা কলেজে এনে ভর্তি করিয়েছেন, এটাই হয়তো আল্লাহ স্বপ্নে মাকে দেখিয়েছেন।
আমি যে এভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে ফেললাম এটা কি অনুচিত হয়েছে? কারণ এভাবে না জেনে তো স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত না। যদিও এই স্বপ্নটা আমার মা গতবছর দেখেছিলেন আর আমি আজকে স্বপ্নটার ব্যাখ্যা দিয়েছি।
আমি আসলে ব্যাখ্যা দিইনি, স্বপ্নটার কথা শুনেই আমার এটা মনে হয়েছে যে আমি যে সহশিক্ষার ভার্সিটিতে ভর্তি না হয়ে মহিলা কলেজে ভর্তি হয়েছি এটাই আমার জন্য উত্তম, ভার্সিটিতে আমার জন্য অকল্যাণ ছিলো আর মহিলা কলেজটা আমার জন্য নিরাপদ, আল্লাহ আমার মাকে এটাই স্বপ্নে দেখিয়েছেন। তাই আমার এটা মনে হওয়ায় আমি বলে ফেলেছিলাম। এতে কি কোনো সমস্যা হবে?