ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/106189/?show=106189#q106189
নং
ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গীবত করা কবীরা গোনাহ। এটি হারাম। তাই
এটি শোনাও হারাম। কারণ যে কাজ করা হারাম। সে কাজ করতে সহযোগিতা করাও হারাম।
কারণ যে
শুনছে, সে যদি না শুনতো, তাহলে গীবতকারী গীবত করতে পারে না। যদি
যে শ্রোতা সে যদি বাঁধা দেয়, তাহলে গীবতকারী গীবত করতে পারে না। তাহলে শ্রোতা শোনার দ্বারা
গীবতকারীকে গীবতের মত কবীরা গোনাহ করতে সহযোগিতা করছে। আর গোনাহের সহযোগিতা করাও নিষিদ্ধ।
তাই উভয় কাজই নিষিদ্ধ ও হারাম।
وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ
لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ
تَوَّابٌ رَّحِيمٌ [٤٩:١٢]
তোমাদের
কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা
পছন্দ করবে? বস্তুতঃ
তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী,পরম দয়ালু। [সূরা হুজু
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى
الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ
الْعِقَابِ [٥:٢]
সৎকর্ম
ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা
করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। [সূরা মায়িদা-২]
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ
حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ
فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ [٦:٦٨]
যখন আপনি
তাদেরকে দেখেন, যারা আমার
আয়াত সমূহে ছিদ্রান্বেষণ করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত
না হয়,যদি শয়তান আপনাকে ভূলিয়ে দেয়
তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না। [সূরা আল আনআম-৬৮]
যে ছয়টি কারণে গিবত করা জায়েজ:
এক. জুলুম
থেকে নিজে বাঁচতে, অন্যকে
বাঁচাতে জালিমের ব্যাপারে এমন ব্যক্তির কাছে গিবত করতে পারবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।
দুই. খারাপ
কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গিবত করতে পারবে, যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।
তিন. কোনো
বিষয় সম্পর্কে ইসলামী বিধান জানতে গিবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন—এ কথা বলা
যে অমুক ব্যক্তি আমাকে আঘাত করেছে, আমার জন্য কি তাকে আঘাত করা জায়েজ? ইত্যাদি।
চার. সাধারণ
মুসলমানদের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বাঁচাতে গিবত করা জায়েজ। যেমন—সাক্ষ্য
সম্পর্কে, হাদিস ও ইতিহাস বর্ণনাকারী
সম্পর্কে, লেখক, বক্তা প্রমুখ সম্পর্কে জনসমক্ষে বলা বৈধ, যাতে মানুষ তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে
বাঁচতে পারে।
পাঁচ. প্রকাশ্যে
যদি কেউ গর্হিত কাজ করে, তাহলে তার
অপকর্ম এমন ব্যক্তির কাছে বর্ণনা করা যায়, যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে
পারে। যেমন—কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে মানুষের সামনে তার সম্পর্কে বলা
জায়েজ। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।
ছয়. কারো
পরিচয় প্রকাশ করতে তার গিবত করা যায়, যদি সে এই নামে প্রসিদ্ধ হয়। যেমন—কেউ কানা।
তার পরিচয় দেওয়া দরকার। কিন্তু কানা বললেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে
গিবত হলেও এটা বলা বৈধ। এতে গিবতের গুনাহ হবে না। (তাফসিরে রুহুল মাআনি : ১৪/২৪২, সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১২)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
বোন/ভাই
১. প্রশ্নে
উল্লেখিত ছুরতে উপরে উল্লেখিত ৬ ছুরতে শর্ত সাপেক্ষে গীবত করা জায়েয, অন্যথায় আপনারও
গুনাহ হবে।
২-৩. যে ব্যক্তি কবিরা গোনাহ সমূহ সম্পাদন করবে, অথবা সগিরা গোনাহ সমূহে ধারাবাহিক লিপ্ত
থাকবে। এবং তার নেক কাজসমূহ তার গেনাহ সমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করবে না, বরং তার গোনাহ সমূহই বেশী থাকবে। অথবা
যার অন্তরে বিদআত থাকবে, কিংবা যে
ব্যক্তি বেশী পরিমাণে বিদআতি আ'মলে লিপ্ত থাকবে, সে ব্যক্তিই মূলত ফাসিক। আরো জানুন: https://ifatwa.info/2820/?show=2820#q2820
সুতরাং
মুসলমানদের মধ্যে যারা প্রকাশ্যে দিবালোকে কবীরা গুনাহ করে
তারাই ফাসেক। ফাসেকদের সাথে চলাফেরা করা যাবে, তবে তাদের
সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা ঠিক নয়। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করা সমীচিন মনে করছিনা। কারণ, তাদের নিকট থেকে গুনাহের
কথা, বাজে কথা, লোকের গীবত, অশ্লীল
বাক্য শোনা ছাড়া অন্য কিছুই আশা করা যায়না।