ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/47614/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলামে গান বাজনা সম্পূর্ণভাবে হারাম,কবীরাহ গুনাহ। এটি তওবা না করলে মাফ হবেনা।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
مَنِ اسْتَمَعَ اِلٰی قَیْنَةٍ صُبَّ فِیْ
اُذُنَیْهِ الْاٰنُكُ یَوْمَ الْقِیَامَةِ ‘
যে ব্যাক্তি গায়িকা মহিলার আওয়াজ শুনবে,
কিয়ামতের দিন তার কানে শিশা গলিয়ে ঢেলে দেয়া হবে।
اَلْغِنَائُ یَنْبِتُ الْنِّفَاقَ فِی
الْقَلْبِ کَمَا یُنْبِتُ الْمَاءُ الْبَقْلَ۔‘ (السنن الکبری للبیهقی،رقم:۲۱۰۰۸، سنن ابی داؤد،بَابُ کَرَاهِیَةِ الْغِنَاء ِ وَالزَّمْرِ،رقم:۴۹۲۷)
রাসুল সাঃ বলেন
গান বাজনা কলবে নিফাক সৃষ্টি করে,যেমনভাবে পানি শষ্য উৎপাদন করে।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ نَهَى عَنِ الْخَمْرِ
وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوبَةِ وَالْغُبَيْرَاءِ وَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
রাসূলুল্লাহ ﷺ শরাব পান
করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল বা তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরী শরাব
পান করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম।
(আবু দাউদ ৩৬৪৪)
আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/41579/
*** মৃত্যুর
পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় হচ্ছে কবরের জগত বা আলমে বরজখ। কবর আজাব
সত্য। ‘কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ভিত্তিতে জাহান্নামের গর্ত কিংবা জান্নাতের
টুকরোয় পরিণত হবে কবর।’ (তাবিয়াতুল হায়াত ফিল কবর; আল-ইসলাম সুওয়ালুন ওয়া জওয়াব: ০৪-১১-২০১৮)
কিন্তু আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে কিছু মানুষ কবরে সওয়াল
জওয়াবের সম্মুখীন হবেন না এবং কবরে তাদের আজাব দেওয়া হবে না। তারা কারা? নিচে তাদের পরিচয় তুলে ধরা হলো।
১) সীমান্ত পাহারাদার
ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারাদাররা কবরে প্রশ্নের সম্মুখীন
হবেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা
অবস্থায় মারা যায়, তাহলে যে
কাজ সে করে যাচ্ছিল মরার পরও তা তার জন্য সওয়াব জারি থাকবে, তার রিজিকও জারি থাকবে, কবরের পরীক্ষা থেকে সে থাকবে নিরাপদ এবং
আল্লাহ তাআলা কেয়ামতে তাকে ভয় থেকে মুক্ত অবস্থায় ওঠাবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২২৩৪)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃতের
কর্মের ধারা শেষ করে দেওয়া হয়। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত
পাহারা দেয় তার আমল কেয়ামত পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফেতনা থেকেও সে নিরাপদ থাকবে।’
(সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪৬২৪)
২) শহীদ
শহীদরা কবরে প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন না এবং কবরের যাবতীয়
ফিতনা থেকে রক্ষা পাবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘..তার মাথার উপর তরবারির ঝলকই
তাকে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদ রাখবে (নাসায়ি: ২০৫৩; সহিহুল জামে: ৪৪৯৩; সহিহুত তারগিব: ১৩৮০)
তিনি আরও বলেন, শহীদের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট ৬টি পুরস্কার
রয়েছে। ক) শহীদের রক্তের প্রথম ফোঁটা জমিনে পড়তেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং জান বের
হওয়ার প্রাক্কালেই তাকে জান্নাতের ঠিকানা দেখানো হয় খ) তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা
করা হয় গ) কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতা হতে তাকে নিরাপদ রাখা হয় ঘ) সেদিন তার মাথায় সম্মানের
মুকুট পরানো হবে। যার একটি মুক্তা দুনিয়া ও তার মধ্যেকার সবকিছু হতে উত্তম ঙ) তাকে
৭২ জন সুন্দর চক্ষুবিশিষ্ট হুরের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে এবং চ) ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য
তার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (তিরমিজি: ১৬৬৩; মেশকাত: ৩৮৩৪; সহিহাহ: ৩২১৩)
৩) পেটের পীড়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তি
পেটের রোগে মৃত্যু হলেও কবরে প্রশ্ন করা হবে না এবং কবরের
আজাব হবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যাকে তার পেটের কোনো রোগ হত্যা করে তাকে
কখনো কবরে ‘আজাব দেওয়া হবে না।’ (তিরমিজি: ১০৬৪; সুনানে নাসায়ি: ৪/৯৮)
উল্লেখ্য, শহিদের মর্যাদা পাবে—এমন আরও
কিছু মৃত্যু সম্পর্কে নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত (শহীদ) হওয়া ছাড়াও
আরও সাত ধরনের শহীদ আছে— ১. মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী
শহীদ। ২. পানিতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৩. পক্ষাঘাতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৪. পেটের রোগের
কারণে (কলেরা, ডায়রিয়া
ইত্যাদিতে) মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৫. অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৬. কোনো কিছুর
নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ এবং ৭. যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যাবে সেও শহীদ।’
(আবু দাউদ: ৩১১১)
তবে এসব মৃত্যুর মধ্যে পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারীকে নির্দিষ্ট
করে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ এ রোগটি মানুষকে তিলে তিলে সহ্য করতে হয়। যারা দীর্ঘদিন
এ রোগে ভুগে ধৈর্যধারণ করে মারা যান তাদের জন্য এ সৌভাগ্য ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী (স.)।
৪) সুরা মুলক পাঠকারী
নিয়মিত সুরা মুলক পাঠকারীর ব্যাপারে নবীজি (স.) ইরশাদ
করেছেন, ‘প্রতিদিন এশার নামাজের পর
রাতে ঘুমানোর আগে যে ব্যক্তি সুরা তাবারাকাল্লাজি, অর্থাৎ সুরা মুলক তেলাওয়াত করবে, তার মৃত্যুর পর কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া
হবে।’ (তিরমিজি: ২৮৯০, মুসতাদরাকে
হাকেম)
৫) জুমার দিন মৃত্যুবরণকারী
জুমাবারে কেউ মারা গেলে তার কবর আজাব হয় না বলে হাদিসে
বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান জুমার দিনে কিংবা
জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, নিশ্চয়
আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। (তিরমিজি: ১০৯৫; মেশকাত: ১৩৬৭; মুসনাদে আহমদ: ১১/১৪৭)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. ইজমা এবং
কিয়াস মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/12407/
২. নবী (সা.) কাফিরদের মৃত্যু
প্রসঙ্গে বলেন, তার রুহকে
তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর তারা প্রশ্ন
করেন, তোমার দ্বিন কী? সে বলে, হায়! আমি কিছুই জানি না। তারা প্রশ্ন করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন
তিনি কে? সে বলে, হায়! আমি তো জানি না। তখন আকাশের দিক থেকে
একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, সে মিথ্যা
বলেছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের একটি বিছানা এনে বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের
পোশাক পরিয়ে দাও, আর তার
জন্য জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। তিনি বলেন, অতঃপর তার দিকে জাহান্নামের উত্তপ্ত বাতাস
আসতে থাকে। এ ছাড়া তার জন্য তার কবরকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হয়, ফলে তার এক দিকের পাঁজর অপর দিকের পাঁজরের
মধ্যে ঢুকে যায়। বর্ণনাকারী জারির বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর তার জন্য এক অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে
নিযুক্ত করা হয়, যার সঙ্গে
একটি লোহার হাতুড়ি থাকবে, যদি এ দ্বারা
পাহাড়কে আঘাত করা হয় তাহলে তা ধুলায় পরিণত হয়ে যাবে। নবী (সা.) বলেন, তারপর সে তাকে হাতুড়ি দিয়ে সজোরে আঘাত
করতে থাকে, এতে সে
বিকট শব্দে চিৎকার করতে থাকে, যা মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব সৃষ্টি জীবই
শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটিতে মিশে যায়। তিনি বলেন, অতঃপর (শাস্তি অব্যাহত রাখার জন্য) পুনরায়
তাতে রুহ ফেরত দেওয়া হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৫৩)
সুতরাং
উপরে উল্লিখিত পাঁচ গুণ যার ভেতরে থাকবে, তারা কবরে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে না। সুতরাং
গুণগুলো প্রত্যেক মুসলমানের ব্যক্তিজীবনে অর্জন করা উচিত।
৩. বিষয়ে ইসলামের কথা হলো কোনো ব্যক্তি মারা গেলে সে তার ঈমান ও আমল অনুযায়ী শান্তি
বা শাস্তি ভোগ করবে। এই শান্তি বা শাস্তি শরীর এবং রূহ উভয়েই হয়ে হবে। আত্মা শরীর থেকে
বিচ্ছিন্ন হবার পর তা হয়তো শান্তিপ্রাপ্ত না হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হবে। কখনো অল্প সময়ের
জন্য সাজা দিয়ে তা শান্তিতে পরিণত করে দেওয়া হবে যদি সে পাপ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। কখনো
রূহ শরীরের সঙ্গে মিলিত হলে তখন শরীরের সঙ্গে রূহেরও শান্তি বা শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সুতরাং কবর হয় জান্নাতের বাগিচা না হয় জাহান্নামের গুহা।
বর্ণিত
আছে যে কেউ মারা যাওয়ার পর যদি শাস্তি বা শান্তির হকদার হয়, তবে সে তার পুরোপুরি অংশ পাবে, তাকে কবর দেওয়া হোক বা না হোক। আল্লাহ
তায়ালাই স্রষ্টা, উদ্ভাবক
এবং প্রত্যেক জিনিসের ওপর ক্ষমতাবান। অতঃপর যখন মহা প্রলয়ের দিন আসবে তখন রূহ শরীরে
ফিরিয়ে দেওয়া হলে তারা তাদের কবর থেকে তাদের রবকে হিসাব দেওয়ার জন্য এবং প্রায়শ্চিত্ত
করার জন্য উঠে দাঁড়াবে। [সূত্র: মাজমুআ ফাতওয়া ৪/২৮৪ ও আর রূহ পৃষ্ঠা নং ৩৩২-৩৩৩]