জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
মহান আল্লাহ তাআলার কালাম তিলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম ও আদব রয়েছে।
প্রত্যেক হরফকে মাখরাজ,ছিফাত অনুযায়ী উচ্চারণ করতে হবে।
,
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরস্থির ভাবে, স্পষ্টরূপে। -সূরা মুযযাম্মিল (৭৩) : ৪
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
زينوا القرآن بأصواتكم
সুন্দর সূরের মাধ্যমে কুরআনকে (এর তিলাওয়াতকে) সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৮
,
শরীয়তের বিধান হলোঃ
হরফে ض নিজের মাখরাজ এবং ছিলো ছিফাতের দিক লক্ষ্য করে স্পষ্ট ظ নয়,আবার স্পষ্ট دال নয়,বরং একেবারেই পৃথক একটি হরফ।
উহাকে যেভাবে দাল দ্বারা পরিবর্তন করে সাধারণ মানুষদের ন্যায় পড়া ভুল।
ঐ ভাবে স্পষ্ট ظ এর দ্বারা পরিবর্তন করে উচ্চারণ করা,যেমন কিছু সাধারণ ক্বারী সাহেব করে থাকেন,এটাও ভুল।
,
কিন্তু নামাজ ফাসাদ হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া ইহার উপর যে যদি জেনে বুঝে,বেপরোয়া হয়ে সঠিক উচ্চারণ এর উপর শক্তি থাকা সত্ত্বেও স্পষ্ট দাল বা স্পষ্ট ظ উচ্চারণ করে,তাহলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
অবশ্য যদি না জানা,বা দুই হরফের মধ্যে পার্থক্য করে উচ্চারণ এর উপর শক্তি না থাকার কারনে সে যেটা পড়তেছে,সেটাকেই সঠিক মনে করে যে সেই ضই পরতেছে,তাহলে তার নামাজ ছহীহ হয়ে যাবে।
(জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৩৩৮,ফাতাওয়ায়ে রিয়াজুল উলুম ২/২৬৪)
শায়েখ আব্দুল্লাহিল হাদী বলেছেনঃ
আরবী প্রতিটি অক্ষরকে তার মাখরাজ অনুযায়ী যথাযথভাবে উচ্চারণ করা অপরিহার্য।
আরবীতে উচ্চারণগত পার্থক্যের কারণে শব্দের অর্থগত পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই তাজবীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মাখারিজুল হুরুফ বা হরফের উচ্চারণ স্থল। বিশুদ্ধ উচ্চারণের উদ্দেশ্যে এ বিষয়ে যথার্থ জ্ঞানার্জন করা ও সেগুলো চর্চা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীতে একামাত্র আরবী ছাড়া আরও কোন ভাষায় হুবহু ‘যোয়াদ‘ এর মত উচ্চারণ নাই। তাই আরবীকে বলা হয় ‘যোয়াদের ভাষা’। আর উচ্চারণগত দিক দিয়ে এটি সবচেয় কঠিন উচ্চারণ। তাই অনারবদের জন্য এর যথার্থ উচ্চারণ করা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
এই কারণে এর উচ্চারণ নিয়ে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। আরেকটি কারণ হল,
(ض) এর উচ্চারণ বিষয়ে স্কলারদের মাঝেও কিছুটা দ্বিমত রয়েছে।
,
যাহোক, আমাদের চেষ্টা করতে হবে সঠিকভাবে উচ্চারণ করার।
বিস্তারিত জানুনঃ-
(০২)
কুরআন তিলাওয়াত এর ক্ষেত্রে নিজের সাধ্যানুপাতে সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত করা উত্তম।
তবে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য আহলে কিতাবীদের মত কুরআনের তিলাওয়াতে বিকৃত সুর তৈরী করা কিছুতেই জায়েজ নয়।
গানের সুরের মত, বিলাপকারীদের মত বিকৃত সুরে কুরআন তিলাওয়াত করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিস্কারভাবেই নিষেধ করেছেন।
বরং আহলে আরবদের মত তিলাওয়াত করতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْرَءُوا الْقُرْآنَ بِلُحُونِ الْعَرَبِ وأَصْوَاتِها، وَإِيَّاكُمْ ولُحُونَ أَهْلِ الْكِتَابَيْنِ، وَأَهْلِ الْفسقِ، فَإِنَّهُ سَيَجِيءُ بَعْدِي قَوْمٌ يُرَجِّعُونَ بِالْقُرْآنِ تَرْجِيعَ الْغِنَاءِ وَالرَّهْبَانِيَّةِ وَالنَّوْحِ، لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، مفتونةٌ قُلُوبُهُمْ، وقلوبُ مَنْ يُعْجِبُهُمْ شَأْنُهُمْ»
হযরত হুযায়ফা বিন ইয়ামান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর আরবদের লিহান ও তাদের সুর পদ্ধতিতে। আর খবরদার! আহলে কিতাব ও ফাসেকদের সুর পদ্ধতি থেকে বিরত থাকো। কেননা, অচিরেই এমন এক জাতি আসবে, যারা কুরআন তিলাওয়াত করবে গানের সুরে, এবং বৈরাগী ও ভাড়াটে বিলাপকারীদের মত। কুরআন যাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তাদের অন্তর থাকবে ফিতনাযুক্ত এবং তাদের মুগ্ধ শ্রোতাদের অন্তরও হবে ফিতনাময়।
[আলমু’জামুল আওসাত তাবারানীকৃত, হাদীস নং-৭২২৩, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৪০৬]
বিস্তারিত জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
গানের সুরে কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েজ নয়। এতে গুনাহ হবে।
(০৩)
এক্ষেত্রে আপনার কিরাআতেও যদি লাহনে জলি থাকে,এবং জামাতে নামাজ আদায়ের সময় মুক্তাদীদের মধ্যেও কোনো শুদ্ধ তিলাওয়াত কারী না থাকে,সেক্ষেত্রে তার পিছনে নামাজ পড়া যাবে।
আর যদি আপনার কিরাআত শুদ্ধ হয়,সেক্ষেত্রে অন্য মসজিদে যাবেন।
সব মসজিদেই যদি এমন অবস্থা হয়,সেক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামগন বলেম যে এক্ষেত্রে জামাতে নামাজ আদায় করে বাসায় এসে পুনরায় নামাজটি আদায় করে নিবেন।
পাশাপাশি এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করে দ্রুত ইমাম পরিবর্তন করবেন।
(০৪)
শরীয়তের বিধান হলো সরকারী যায়গায় মসজিদ বানানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি লাগবে। সরকারী অনুমতি ছাড়া সেই স্থান মসজিদ বলে সাব্যস্ত হবেনা, যদিও উক্ত মসজিদে নামাজ পড়লে নামায সহীহ হয়ে যাবে। কিন্তু তা শরয়ী মসজিদ বলে ততক্ষণ সাব্যস্ত হবেনা,যতক্ষণ না সরকারী এতদ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিধিবদ্ধ আইন অনুযায়ী মৌখিক বা লিখিত অনুমোদন না নিবে। ওয়াক্ফ হবার জন্য লিখিত অনুমোদন জরুরী নয়। তবে লিখিত অনুমোদন নিয়ে নেয়াই উচিত। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মূল মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন না নিয়ে কেবল সাধারণ কর্মচারী বা অফিসারের মৌখিক অনুমোদন গ্রহণযোগ্য নয়। ঠিক একই বিধান সরকারী সকল স্থানের ক্ষেত্রে।
,
★সরকারের পক্ষ থেকে যদি অনুমতি না মিলে,কোনো ব্যাক্তির জায়গা দখল করে মসজিদ বানানো হলে সেই ব্যাক্তি যদি অনুমতি না দেয়,বা কোনোভাবেই সেটা ক্রয় ইত্যাদির মাধ্যমে আয়ত্তে নিয়ে ঐ ব্যাক্তির মালিকানা থেকে বের না করে দেওয়া যায়,তাহলে উক্ত মসজিদ ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
আরো জানুনঃ-