ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ
বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম
জবাব,
মানুষ সামাজিক
জীব। তাই মানুষ একাকী থাকতে পারে না। সমাজবদ্ধ হয়ে থাকতে হয় মানুষকে। আদম (আ.)-কে প্রথম
মানব হিসেবে সৃষ্টি করার পর হাওয়া (আ.)-কেও সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে আদমকে নিঃসঙ্গ হয়ে থাকতে না হয়।
অতঃপর তাঁদের
একসঙ্গে জান্নাতে থাকতে বলা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَ یٰۤاٰدَمُ
اسۡكُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُكَ الۡجَنَّۃَ فَكُلَا مِنۡ حَیۡثُ شِئۡتُمَا وَ لَا
تَقۡرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَۃَ فَتَكُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
‘হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো, তোমাদের যেখান থেকে ইচ্ছা খাবার গ্রহণ করবে, তবে এই গাছের কাছেও আসবে না, নতুবা তোমরা জালিম বলে গণ্য হবে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯)
ইসলামপূর্ব
সময়ে মক্কায় চরম বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় বিরাজ করছিল। ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ্য-ভালোবাসা, পারস্পরিক সহযোগিতাসহ মানবিকতা হারিয়ে যাওয়ার পথে ছিল।
কিন্তু ইসলাম
এসে সমাজকে নতুনভাবে সাজাতে থাকে। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসে মানুষ পরিণত হয় সোনার মানুষে।
তাই সমাজচ্যুত কেউ ইসলামের মৌলিক আদর্শ লালন করতে পারে না। সবাইকে নিয়ে বসবাস করা এবং
সংঘবদ্ধ হয়ে সুষ্ঠু-সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করাই ইসলামের মূল চাহিদা।
আল্লাহ তাআলা
বলেন,
وَ كَیۡفَ
تَكۡفُرُوۡنَ وَ اَنۡتُمۡ تُتۡلٰی عَلَیۡكُمۡ اٰیٰتُ اللّٰهِ وَ فِیۡكُمۡ
رَسُوۡلُهٗ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡتَصِمۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ هُدِیَ اِلٰی صِرَاطٍ
مُّسۡتَقِیۡمٍ
‘আর তোমরা সবাই মিলে
আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো, বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তোমাদের ওপর আল্লাহর
অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো যখন তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তর এক করেছেন এবং তোমরা তাঁর অনুগ্রহে
পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০১)
গোষ্ঠীবদ্ধভাবে
থাকা মানুষের একটি সহজাত চাহিদা। চাইলেও কেউ একাকী থাকতে পারে না। তাই পারস্পরিক সহযোগিতা
ও ভালোবাসা থাকলে মানুষের জীবন সত্যিকারভাবেই সুন্দর হয়। মানুষের মাঝে নানা গোষ্ঠী
ও সমাজ থাকবে।
সেখানেই মানুষ
বসবাস করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের অনেক
জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে
চিনতে পারো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি
সবচেয়ে সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক খোদাভীরু, আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞাত ও সর্ববিষয়ে অবগত।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১৩)
মানুষকে পৃথিবীতে
বেঁচে থাকতে হলে নানাজনের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়। পরিবারের সদস্য ছাড়াও অনেক আত্মীয়র
সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। তাই জীবনযাত্রায় আত্মীয়দেরও অনেক অধিকার আছে। নিকটাত্মীয়দের
অধিকার স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তাই আল্লাহ তাআলা তাদের হক আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি
ইরশাদ করেন, ‘আর আপনি আত্মীয়দের হক আদায় করুন।’ (সুরা
: বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)
সমাজজীবনে পরিবার
অন্যতম উপাদান। পরিবারে শান্তি-সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তৈরির জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ের
মাঝে সহাবস্থান ও সম্প্রীতি থাকতে হবে। পারিবারিক শান্তির জন্য সমঝোতা ও সহিষ্ণুতা
একান্ত প্রয়োজন। তাই পারস্পরিক ভুলত্রুটি হলেও তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা চাই। পারস্পরিক
বোঝাপড়া,
পরমতসহিষ্ণুতা ও ধৈর্য পরিবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই আল্লাহ
তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে
সত্ভাবে জীবন যাপন করো, তাদের তোমরা অপছন্দ
করলে এমনও হতে পারে, তোমরা এমন কিছু অপছন্দ
করছ,
যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য কল্যাণ রেখেছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
আল্লাহ তাআলা
আরো বলেন,
‘তাঁর নিদর্শনের একটি হলো, তিনি তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তাদের কাছে গিয়ে তোমরা প্রশান্তি অনুভব করো, তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও অনুকম্পা ঢেলে দিয়েছেন, এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য অনেক নিদর্শন আছে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২১)
তাই আত্মীয়দের
বিপদ-আপদ ও কঠিন মুহূর্তে সাধ্যমতো পাশে থাকা মুসলিমের কর্তব্য। অহেতুক অন্যের সঙ্গে
ঝগড়া-বিবাদে জড়াবে না। কোনো মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা
জায়েজ নেই। তাই যত কিছুই হোক, সবার সঙ্গে মিলেমিশে
থাকা ইসলামের নির্দেশনা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিম অন্য ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা বৈধ নয়।
উভয়ে সাক্ষাৎ করে, কিন্তু উভয়ে মুখ ফিরিয়ে
চলে যায়। অতএব উভয়ের মধ্যে উত্তম হলো যে সালামের মাধ্যমে আবার কথা বলা শুরু করে।’
(বুখারি,
হাদিস : ৬০৭৭)
ইসলামের মৌলিক
পাঁচটি বিধান সমাজজীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই মানবসমাজে ইসলামের প্রভাব অনেক বেশি।
সমাজজীবনের প্রেক্ষাপটে ইসলামের বিধি-বিধানগুলো আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। তাই কোরআন-হাদিসের
দিকনির্দেশানা ও ইসলামের শিষ্টাচারগুলো সমাজের মানুষের মধ্যে ফুটিয়ে তোলাই মুসলিম হিসেবে
সবার কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের তা পালনে সহায়
হোন। (সংগৃহিত)
প্রশ্নকারী সম্মানিত
দ্বীনি ভাই/বোন!
ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন ব্যক্তি সমাজকে খুশি
করতে গিয়ে জেনে বুঝে অকাট্য ফরজ
কোন বিধান যদি অস্বীকার করে তাহলে তা শিরক আকবারের অন্তর্ভুক্ত যা ঈমান ভঙ্গের কারণ। যদি কারো মধ্যে এমন অবস্থা থাকে অনতিবিলম্বে তার
জন্য তওবা করা আবশ্যক এবং তাকে ঈমান নবায়ন করতে হবে।