আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
51 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (14 points)
আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ না করাটাও শিরক। আল্লাহর সকল বিধান কেবল শুনলেই কিন্তু নয়, শুনলাম এবং মেনে নিলাম- এমনটা যদি না হয় তাহলে আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা হল না বরং নফসের বা নিজের ভালো লাগার প্রতি সমর্পন হয়ে গেল। আল্লাহর কোনো বিধানকে ভালো লাগে আবার কোনো বিধানকে খারাপ লাগে, পুরনো হয়ে গেছে, এটা মানা কীভাবে সম্ভব, পর্দা করা মানে হিজাব পরাই যথেষ্ট মনে করা, বোরকা পরা, গায়রে মাহরাম এর সামনে না যাওয়া - এগুলোকে অসামাজিকতা মনে করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব যদি আপনার মনের মধ্যেও থাকে তাহলে বুঝবেন আপনিও আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে পারেননি। আর এটাও শিরকের একটা রূপ।

আল্লাহ বলেছেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্য যেকোনো পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করলো সে এক মহা অপবাদ রটনা করলো।”
- (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮)

মনে করুন, আপনি আল্লাহর কোনো বিধান জানলেন।তারপর যদি আপনার মনে হয় যে, এটা করলে সমাজ কী বলবে? এটা তো সমাজের সাথে যায় না, মানুষ কীভাবে নেবে? এটা তো অসামাজিকতা- তাহলে আপনি আলটিমেটলি সমাজের পূজা করছেন, মানুষের তাবেদারি করছেন (নাউজুবিল্লাহ)। তাহলে কি এটা শিরক হলো না? আল্লাহ কি আমাদের ক্ষমা করবেন? যদি না মৃত্যুর আগে আমরা ইখলাসের সহিত তাওবা করতে পারি।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

জবাব,

মানুষ সামাজিক জীব। তাই মানুষ একাকী থাকতে পারে না। সমাজবদ্ধ হয়ে থাকতে হয় মানুষকে। আদম (আ.)-কে প্রথম মানব হিসেবে সৃষ্টি করার পর হাওয়া (আ.)-কেও সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে আদমকে নিঃসঙ্গ হয়ে থাকতে না হয়।

অতঃপর তাঁদের একসঙ্গে জান্নাতে থাকতে বলা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَ یٰۤاٰدَمُ اسۡكُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُكَ الۡجَنَّۃَ فَكُلَا مِنۡ حَیۡثُ شِئۡتُمَا وَ لَا تَقۡرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَۃَ فَتَكُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ

 ‘হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো, তোমাদের যেখান থেকে ইচ্ছা খাবার গ্রহণ করবে, তবে এই গাছের কাছেও আসবে না, নতুবা তোমরা জালিম বলে গণ্য হবে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯)

ইসলামপূর্ব সময়ে মক্কায় চরম বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় বিরাজ করছিল। ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ্য-ভালোবাসা, পারস্পরিক সহযোগিতাসহ মানবিকতা হারিয়ে যাওয়ার পথে ছিল।

কিন্তু ইসলাম এসে সমাজকে নতুনভাবে সাজাতে থাকে। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসে মানুষ পরিণত হয় সোনার মানুষে। তাই সমাজচ্যুত কেউ ইসলামের মৌলিক আদর্শ লালন করতে পারে না। সবাইকে নিয়ে বসবাস করা এবং সংঘবদ্ধ হয়ে সুষ্ঠু-সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করাই ইসলামের মূল চাহিদা।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ كَیۡفَ تَكۡفُرُوۡنَ وَ اَنۡتُمۡ تُتۡلٰی عَلَیۡكُمۡ اٰیٰتُ اللّٰهِ وَ فِیۡكُمۡ رَسُوۡلُهٗ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡتَصِمۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ هُدِیَ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ

 ‘আর তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো, বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো যখন তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তর এক করেছেন এবং তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০১)

গোষ্ঠীবদ্ধভাবে থাকা মানুষের একটি সহজাত চাহিদা। চাইলেও কেউ একাকী থাকতে পারে না। তাই পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভালোবাসা থাকলে মানুষের জীবন সত্যিকারভাবেই সুন্দর হয়। মানুষের মাঝে নানা গোষ্ঠী ও সমাজ থাকবে।

সেখানেই মানুষ বসবাস করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের অনেক জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক খোদাভীরু, আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞাত ও সর্ববিষয়ে অবগত।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১৩)

মানুষকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে নানাজনের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়। পরিবারের সদস্য ছাড়াও অনেক আত্মীয়র সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। তাই জীবনযাত্রায় আত্মীয়দেরও অনেক অধিকার আছে। নিকটাত্মীয়দের অধিকার স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তাই আল্লাহ তাআলা তাদের হক আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘আর আপনি আত্মীয়দের হক আদায় করুন।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)

সমাজজীবনে পরিবার অন্যতম উপাদান। পরিবারে শান্তি-সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তৈরির জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে সহাবস্থান ও সম্প্রীতি থাকতে হবে। পারিবারিক শান্তির জন্য সমঝোতা ও সহিষ্ণুতা একান্ত প্রয়োজন। তাই পারস্পরিক ভুলত্রুটি হলেও তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা চাই। পারস্পরিক বোঝাপড়া, পরমতসহিষ্ণুতা ও ধৈর্য পরিবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে সত্ভাবে জীবন যাপন করো, তাদের তোমরা অপছন্দ করলে এমনও হতে পারে, তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য কল্যাণ রেখেছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনের একটি হলো, তিনি তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তাদের কাছে গিয়ে তোমরা প্রশান্তি অনুভব করো, তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও অনুকম্পা ঢেলে দিয়েছেন, এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য অনেক নিদর্শন আছে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২১)

তাই আত্মীয়দের বিপদ-আপদ ও কঠিন মুহূর্তে সাধ্যমতো পাশে থাকা মুসলিমের কর্তব্য। অহেতুক অন্যের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে জড়াবে না। কোনো মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই। তাই যত কিছুই হোক, সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা ইসলামের নির্দেশনা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিম অন্য ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা বৈধ নয়। উভয়ে সাক্ষাৎ করে, কিন্তু উভয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। অতএব উভয়ের মধ্যে উত্তম হলো যে সালামের মাধ্যমে আবার কথা বলা শুরু করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৭৭)

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি বিধান সমাজজীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই মানবসমাজে ইসলামের প্রভাব অনেক বেশি। সমাজজীবনের প্রেক্ষাপটে ইসলামের বিধি-বিধানগুলো আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। তাই কোরআন-হাদিসের দিকনির্দেশানা ও ইসলামের শিষ্টাচারগুলো সমাজের মানুষের মধ্যে ফুটিয়ে তোলাই মুসলিম হিসেবে সবার কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের তা পালনে  সহায় হোন। (সংগৃহিত)

 প্রশ্নকারী সম্মানিত দ্বীনি ভাই/বোন!

ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন ব্যক্তি সমাজকে খুশি করতে গিয়ে জেনে বুঝে অকাট্য ফরজ কোন বিধান যদি অস্বীকার করে তাহলে তা শিরক আকবারের অন্তর্ভুক্ত যা ঈমান ভঙ্গের কারণ।  যদি কারো মধ্যে এমন অবস্থা থাকে অনতিবিলম্বে তার জন্য তওবা করা আবশ্যক এবং তাকে ঈমান নবায়ন করতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...