ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
(এক)
আকিদাতুত ত্বহাবী মূলত স্বতন্ত্র কোনো আকিদার নাম নয়। বরং এটা মাতুরিদি আকিদার একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থের নাম। যার লিখক ইমাম তাহাবী রাহ। মাতুরিদি আকিদা মূলত হানাফি মাযহাবের আকিদার সুসংগঠিত একটা ব্যাখ্যা রূপ। যা আবুল হাসান মাতুরিদি রাহ একত্রিত করে গিয়েছিলেন। সহজ কথা বলা যায় যে, আকিদাতুত তাহাবি হল, হানাফি মাতুরিদি আকিদার সংক্ষেপিত একটি রূপরেখা।
(দুই)
ইমাম তাহাবী রাহ,
তিনি হলেন আবু জা’ফর আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সালামা আল আজদী আত্-ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ। তিনি ছিলেন হাদীছের হাফেয, ইমাম, ফকীহ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ এবং মিশরের হানাফী ফকীহদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম। ঐতিহাসিকদের বিশুদ্ধ মতে ২৩৯ হিজরী মোতাবেক ৮৫৩ খৃস্টাব্দে তিনি মিশরের ত্বহা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ব-পুরুষগণ যেহেতু ইয়ামানের প্রখ্যাত আজদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাই তাকে আজদী বলা হয়। আর তিনি যেহেতু মিশরের ত্বহা নামক গ্রামে জন্ম-গ্রহণ করেন, তাই তার জন্মস্থানের দিকে সম্বন্ধ করে তাকে ত্বহাবী বলা হয়।
ইমাম ত্বহাবীর মাযহাব পরিবর্তন
প্রথম জীবনে তিনি শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তার বোধশক্তি বৃদ্ধি যতই বাড়তে থাকে তার সামনে জ্ঞানার্জন ও গবেষণার দ্বার ততই উন্মুক্ত হতে থাকে। এ সময় হানাফী মাযহাবের প্রতি তার মামার আগ্রহ দেখে ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ হানাফী মাযহাবের কিতাবগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টি দিতে লাগলেন এবং দ্বীনের মূলনীতি ও শাখা মাস‘আলাসমূহের ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতিগুলো অধ্যায়ন করতে লাগলেন।
বলা হয়ে থাকে যে, তাকে যখন মাযহাব পরিবর্তন করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো, জবাবে তিনি বলেছেন, আমার মামা মুযানী হানাফী মাযহাবের গ্রন্থসমূহ অধিক অধ্যায়ন করতেন। তাই আমিও মামার অনুসরণ করে হানাফী মাযহাবের কিতাবগুলো অধ্যায়ন শুরু করি। আমার কাছে শাফেঈ মাযহাবের তুলনায় হানাফীদের দলীল-প্রমাণগুলো অধিক মজবুত ও অকাট্য মনে হলো। তাই আমি শাফেঈ মাযহাব ছেড়ে হানাফী মাযহাব গ্রহণ করি।
অতএব ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর মাযহাব সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জন করার পর তিনি তার মাযহাব পরিবর্তন করলেন এবং শাফিঈ মাযহাব ছেড়ে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হলেন। তবে হানাফী মাযহাব গ্রহণ তাকে কতিপয় মাস‘আলায় ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর মতের বিরোধিতা করতে এবং অন্যান্য ইমামের মতকে প্রাধান্য দিতে মোটেই বাধা দিতে পারেনি। মূলতঃ তিনি ইমাম আবু হানীফার অন্ধ অনুসরণকারী ছিলেন না। অন্যান্য গবেষক আলিমের মতোই তিনি সুস্পষ্ট দলীলের অনুসরণ এবং ইমামের কথার বিপরীত হলেও তিনি দলীলকেই প্রাধান্য দিতেন। তিনি শুধু মনে করতেন যে, ফিক্বহের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ এর পদ্ধতিই সর্বোত্তম। তাই তিনি এ ধারাতেই চলতেন এবং তাকে অনুসরণ করতেন। এ জন্যই আপনি দেখবেন যে, তার হাদীছের কিতাব: شرح معاني الأثر ‘শারহু মা‘আনিল আছার’ এর অনেক স্থানেই ইমাম আবু হানীফার মতের বিপরীত মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
(শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া আল্লামা ইমাম ইবনে আবীল ইয্ আল-হানাফী রহিমাহুল্লাহ এর ভূমিকা (مقدمة) ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী রাহ,)