আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
48 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম।


১। মায়েরা বাচ্চাকে যে ২ বছর বুকের দুধ খাওয়ায় এই হিসেব কি ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হিসেব হবে নাকি হিজরি ক্যালেন্ডার?

২। বাচ্চাকে দুধ ছাড়ানোর জন্য এখন বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট পাওয়া যায় যা খেলে মায়ের বুকে দুধ আসা বন্ধ হয়ে যায়। এটি কি জায়েজ?

৩। মায়ের বুকে দুধ না থাকলে বাচ্চা ২ বছর পার হওয়ার পরও যদি কিছুদিন অভ্যাস বসত মায়ের স্তন চুষে সেক্ষেত্রে কোন গুনাহ হবে মায়ের? এক্ষেত্রে সঠিক নির্দেশনা কি?

1 Answer

0 votes
by (62,670 points)
ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/6845/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে,
ইসলামী শরীয়তে শিশুকে চন্দ্রমাসের হিসাবে সর্বোচ্চ দুই বছর (২৪ মাস) পর্যন্ত দুধ পান করানো যাবে। দুই বছরের অধিক দুধ পান করানো যাবে না। 

আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ الْوَالِدٰتُ یُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَیْنِ كَامِلَیْنِ لِمَنْ اَرَادَ اَنْ یُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ
মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু বছর দুধ পান করাবে। এ সময়কাল তাদের জন্য, যারা দুধ পান করানোর মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়। (সূরা বাকারা ২৩৩)

উক্ত নির্ধারিত সময় পার হবার পরেও কেউ যদি নিজ সন্তানকে দুধ খাওয়ায় তাহলে তা জায়েয হবে না এবং সন্তানের জন্য উপকারী হবে না। কেননা যেটা সন্তানের জন্য উপযোগী সেটাই আল্লাহু তাআলা বিধান দিয়েছেন।

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সন্তানকে দুধ পান করানোর মেয়াদ চন্দ্র বছর হিসেবে দুই বছর। 

কারণ কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
(তরজমা) আর মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে। (এ বিধান) তার জন্য যে দুধ পানের (মেয়াদ) পূর্ণ করতে চায়। -সূরা বাকারা : ২৩৩

আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আর তার (সন্তান) দুধ ছাড়ানো হয় দু বছরে। -সূরা লুকমান : ১৪

সুতরাং দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পর সন্তানকে আর দুধ পান করানো যাবে না। তাই আড়াই বছর পর্যন্ত পান করানো যাবে- বলে অনেকে যাবে বলে  এ কথা ঠিক নয়। 
-সূরা বাকারা : ২৩৩; তাফসীরে তবারী ৪৯৬২; মুখতাসারুত তহাবী ২২০; ফাতহুল কাদীর ৩/৩০৯; গুনইয়াতু যাবীল আহকাম শুরুম্বুলালীয়া ১/৩৫৫, ৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৩

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

যেহেতু এক্ষেত্রে কিছু ইমামদের মত আড়াই বছরের কথাও বলা আছে, তাই সমাজের কিছু মানুষ আড়াই বছরের কথা বলে থাকেন। তবে এটি নির্ভরযোগ্য মত নয়।

আরো জানুনঃ
.
তবে দুই বছরের মধ্যে যদি বাচ্চাকে দুধ ছাড়ানো সম্ভব না হয়, তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে তারপরেও দুধ পান করানো হারাম হবেনা। তবে কোনোভাবেই যেনো আড়াই বছর পার না হয়।
,
আড়াই বছরের পর দুধ পান করা হারাম।
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (3/ 209):
"باب الرضاع (هو) لغةً بفتح وكسر: مص الثدي. وشرعاً: (مص من ثدي آدمية) ولو بكراً أو ميتةً أو آيسةً، وألحق بالمص الوجور والسعوط (في وقت مخصوص) هو (حولان ونصف عنده وحولان) فقط (عندهما، وهو الأصح) فتح، وبه يفتى كما في تصحيح القدوري عن العون،  لكن في الجوهرة أنه في الحولين ونصف، ولو بعد الفطام محرم وعليه الفتوى. واستدلوا لقول الإمام بقوله تعالى: {وحمله وفصاله ثلاثون شهراً} [الأحقاف: 15] أي مدة كل منهما ثلاثون غير أن النقص في الأول قام بقول عائشة: لايبقى الولد أكثر من سنتين ومثله لايعرف إلا سماعاً، والآية مؤولة لتوزيعهم الأجل على الأقل والأكثر فلم تكن دلالتها قطعيةً، على أن الواجب على المقلد العمل بقول المجتهد وإن لم يظهر دليله كما أفاده في رسم المفتى، لكن في آخر الحاوي: فإن خالفا قيل: يخير المفتي، والأصح أن العبرة لقوة الدليل.
 (قوله: لكن إلخ) استدراك على قوله: وبه يفتى. وحاصله أنهما قولان، أفتى بكل منهما ط ... (قوله: والأصح أن العبرة لقوة الدليل) قال في البحر: ولايخفى قوة دليلهما، فإن قوله تعالى: {والوالدات يرضعن} [البقرة: 233] الآية يدل على أنه  لا رضاع بعد التمام. وأما قوله تعالى: {فإن أرادا فصالاً عن تراض منهما} [البقرة: 233] فإن ما هو قبل الحولين بدليل تقييده بالتراضي والتشاور، وبعدهما لايحتاج إليهما. وأما استدلال صاحب الهداية للإمام وقوله تعالى: {وحمله وفصاله ثلاثون شهراً} [الأحقاف: 15] بناء على أن المدة لكل منهما كما مر، فقد رجع إلى الحق في باب ثبوت النسب من أن الثلاثين لهما للحمل ستة أشهر والعامان للفصال".
যার সারমর্ম হলো এই মাসয়ালার ক্ষেত্রে ছাহেবাইন রহ. আর আবু হানীফা রহ. এর মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। 
ছাহেবাইন আর শাফেয়ী রহ. এর নিকটে দুই বছরের পর দুধ পান করানো যাবেনা।
ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে আড়াই বছর (৩০ মাস) পর্যন্ত দুধ পান করানো যাবে।     
 
হাদীস শরীফে এসেছে -
عن ابن عباس رضي اللّٰہ عنہما قال: قال رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم: لا رضاع إلا ما کان في الحولین۔ (سنن الدار قطني ۴؍۱۰۳ رقم: ۴۳۱۸، السنن الکبریٰ للبیہقي ۷؍۷۶۰ رقم: ۱۵۶۶۳)
দুই বছর পর কোনো রাজাআত নেই।

অপর হাদীসে এসেছে -
عن ابن عباس رضي اللّٰہ عنہما یقول: ما کان في حولین وإن کانت مصۃً واحدۃً تحرم۔ (المؤطا لإمام محمد ۲۷۶)
দুই বছর পর একবার স্তন চুষাও হারাম।

বর্ণিত হয়েছে -
وکان أبوحنیفۃ یحتاط بستۃ أشہر بعد الحولین فیقول: یحرم ما کان في الحولین وبعدہا إلی تمام ستۃ أشہر، وذٰلک ثلاثون شہرًا، ولا یحرم ما کان بعد ذٰلک، ونحن لا نریٰ أنہ یحرم، ونریٰ أنہ لا یحرم ما کان بعد الحولین۔ (المؤطا لإمام محمد / باب الرضاعۃ ۲۷۶)
আবু হানিফা রহ.  দুই বছর পর আরো ৬ মাস সতর্কতামূলক হিসেবে রেখেছেন,,,,,

বর্ণিত হয়েছে -
لو استغني في حولین حل الإرضاع بعدہا إلی نصف ولا تأثم… ومستحب إلی حولین وجائز إلی حولین ونصف۔ (شامي ۳؍۲۱۱ کراچی)
যদি কঠিন প্রয়োজনে দুই বছর পর দুধ পান করায়,তাহলে আড়াই বছরে আগ পর্যন্ত গুনাহ হবেনা।

বর্ণিত হয়েছে -
وحولان فقط عندہما وہو الأصح، ’’فتح‘‘ وبہٖ یفتیٰ کما في تیسیر القدوري عن العون۔ (الدر المختار مع الشامي ۴؍۲۹۲ بیروت، ۴؍۳۹۳-۳۹۴ زکریا، الفتاویٰ الہندیۃ ۱؍۳۴۲، الفتاویٰ التاتارخانیۃ ۴؍۳۶۶ رقم: ۶۴۳۵ زکریا)
নির্ভরযোগ্য মত হলো দুই বছর পর্যন্তই দুধ পান করানো যাবে। 

বর্ণিত হয়েছে -
وفي الشامی قال في البحر: لا یخفی قوۃ دلیلہما، فإن قولہ تعالیٰ: {وَالْوٰلِدٰتُ یُرْضِعْنَ} [البقرۃ: ۲۳۳] یدل علی أنہ لا رضاع بعد التمام۔ (شامي ۴؍۲۹۴ دار إحیاء التراث العربي بیروت، ۳؍۲۰۹ کراچی، ۴؍۳۹۷ زکریا)
যার সারমর্ম হলো ছাহেবাইন রহ. এর দলীলই বেশি শক্তিশালী। 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

উল্লেখিত মাসআলায়  মতবিরোধ এর কারণে হুকুমের ক্ষেত্রে কিছুটা সহজ এসে যাবে ঠিকই। তবে কোনো ভাবেই আড়াই বছরের পর দুধ পান করানো যাবেনা। এটি হারাম।
এতে মায়ের গুনাহ হবে।
,
তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা হলো দুই বছর (২৪ মাস) পর দুধ পান না করানো।

১. হিজরী সন বা চন্দ্র বছর অনুযায়ী হিসাব করতে হবে।
২. এই ওষুধ খাওয়ার দ্বারা বড় কোন ধরনের ক্ষতি না হওয়ার শর্তে জায়েজ আছে।
৩. সতর্কতামূলক চুষতে না দেওয়াই উত্তম। কারণ মুখে দুধ চলে আসলে তখন তো আবার গোনাহ হবে। তবে মুখে দুধ না আসলে শুধু চুষতে দেওয়ার দ্বারা গোনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। 

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...