আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
61 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের বিয়ের বয়স ৭ বছর। বিয়ের পর থেকে আমি তার সাথে খুব বাজে আচরণ করেছি।কথায় কথায় তালাক চাইতাম। আমাদের অজান্তেই ২ তালাক পতিত হয়েছে। আমাকে আমার স্বামী ভালোবাসে না। আমাদের একটা বাচ্চা আছে তাই এখনো অব্দি আমরা একসাথে আছি। পূর্বের অন্যায়ের জন্য বহুবার তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি,সে বলে ক্ষমা করেছি, কিন্তু কিছু হলেই সে আগের কথা আমাকে শুনায়, এতে আমি খুব কষ্ট পাই। প্রায় ১ মাস আগে আমার স্বামী ২য় বিবাহ করেছে। আমার কিছু প্রশ্ন আছে উত্তর দিয়ে উপকৃত করবেন।

১. আমার স্বামীর ২য় বিবাহ আমি মেনে নিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। সে এখনো তার জন্য বাসা নেয়নি, এমনিতেই তারা কিছুদিন একসাথে ছিল। ২-৩ মাস পর থেকে তারা একসাথে থাকবে। এখন আমার স্বামী শুধু রাতে এসে আমার সাথে ঘুমায়। বেশিরভাগ সময় তার সাথে কাটায়, হয়তো বাইরে ঘুরাঘুরি, অথবা ফোনে কথা বলা,বাসায় আসলেও তারা ফোনে কথা বলে। এক্ষেত্রে কী তার ন্যায়বিচার করা হচ্ছে? সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে না আবার ভালো করে ২ টা কথাও বলেনা।
২. আমার স্বামীর সাথে আমার কোনো বনিবনা নেই। আমি ভালো করে কথা বলতে গেলেও তার সাথে ঝামেলা হয়,আমি তার মনমতো নই, আমি চেষ্টা করলেও তার মতো চলতে পারিনা, তার সাথে আমার অনেক মতপার্থক্য। আমি তাকে কিছুতেই সন্তুষ্ট করতে পারিনা আমার আচরণ দ্বারা। আর এখন এটা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যাকে বিয়ে করেছে তাকে তার ভালো লাগে, আমি অনেক আগেই তার মন থেকে উঠে গেছি। আমার প্রতি তার কোনো ভালোবাসা কাজ করেনা। শুধু দায়িত্ব পালন করে, আমাকে বলে তার (সেই মেয়ের)মতো হতে, একজন কী আরেকজনের মতো হতে পারে। আমি দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ। যদি সে আমার প্রতি সন্তুষ্ট না থাকে আমি চেষ্টা করার পরও তাহলে কী আমি জান্নাতে যেতে পারবো না?
৩. কিছু হলেই সে বলে আমার বাবার বাড়ি যাবেনা, তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। এখন যেহেতু আরেকটা বিয়ে করছে তাই আর আমাদের বাড়িতে যাবে না। এতে কী আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হবেনা?
৪. সে বলে আমি চাইলে চলে যেতে পারি, কিন্তু বাচ্চাটাকে তাদের কাছে রেখে যেতে হবে। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না, আর তার সাথেও মানিয়ে চলতে পারছিনা। এমতাবস্থায় তালাক গ্রহণ করে কোথায় যাবো? কেউ তো বাচ্চাসহ বিয়েও করবেনা। আমিও যদি তার মতো শুধু দায়িত্ব পালন করি, কথা বললে ঝামেলা হয় তাই যদি সবসময় চুপ থাকি তাহলে কী গুনাহ হবে?
৫. তার প্রতি কতটুকু দায়িত্ব পালন করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় থাকবেনা? বিস্তারিত বলবেন প্লিজ।
৬.আমি পরকালের ভয় করি, মৃত্যুর ভয় করি, আমি চাই আমার স্বামী আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকুক কিন্তু আমি ব্যর্থ, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করি,  এমতাবস্থায় আমার কী করা উচিত আমি কী তার সাথে সংসার চালিয়ে যাবো? দয়া করে উত্তম নসিহত করবেন।

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://www.ifatwa.info/6683 নং ফাতওয়ায় বর্ণিত রয়েছে ,
শরীয়তের বিধান মতে একাধিক স্ত্রীর মাঝে যদি ইনছাফ করতে পারে,তাহলে প্রয়োজনের স্বার্থে একাধিক বিবাহ করতে পারবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন
فانكحوا ما طاب لكم من النساء مثنى وثلاث ورباع 
তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)।(সুরা : নিসা, আয়াত-৩)

দ্বিতীয় বিয়ে করার ইসলামী শর্ত বেশ কঠিন অনেক কড়া। আগের স্ত্রীর সব ধরনের হক আদায়ের পর নতুন বিয়ের পরেও সমান তালে সব অধিকার পালন করার আত্মবিশ্বাস থাকলেই কেবল যৌক্তিক কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করা যায়।
قال اللہ تعالی:فإن خفتم ألا تعدلوا فواحدة الآیة (سورہ نسا، آیت:۳)
 আল্লাহতায়ালা বলেন, একাধিক বিয়ের সুবিধা যাদের আছে, তারা যদি সম অধিকার বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভীত হও, তাহলে এক বিয়ে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক। 
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّه سَاقِطٌ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُوْ دَاودَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/6683

একাধিক স্ত্রীর মাঝে দুই বিষয়ে সমতা রক্ষা করা অতীব প্রয়োজন। স্ত্রীদের সঙ্গে রাতযাপন ও ভরণ-পোষণ। 

এ দুই অধিকার সব স্ত্রীর ক্ষেত্রে সমানভাবে স্বামীকে পালন করে যেতে হবে। কোন স্ত্রী সুন্দর বা অসুন্দর, আর কোনটি কুমারী বা বিধবা তা পার্থক্য করা যাবে না। 

কিন্তু কোনো স্ত্রীর প্রতি মনের ভালোবাসা বেশি হওয়া, আবার অন্য স্ত্রীর প্রতি কম হওয়া তা সমতার অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, এটি মনের বিষয়, আর মনের ওপর কারও কোনো অধিকার নেই। একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে শুধু রাতযাপন ও খরচাপাতি এ দুই বিষয়ে সমতা ধর্তব্য। এটাই হলো একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষার ইসলামি শরিয়তের বিধান। 

হাদিসে আছে, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) স্ত্রীদের মধ্যে পালাবণ্টন করতেন এবং ন্যায়বিচার করতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার শক্তি-সামর্থ্যানুযায়ী পালাবণ্টন করলাম। সুতরাং যাতে শুধু তোমার ক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমার শক্তি নেই। কাজেই তাতে তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করো না। (তিরমিজি : ১১৭০, আবু দাউদ : ২১৩৬)।

কোনো ব্যাক্তির যদি একাধিক বিবাহ বাস্তবেই খুবই প্রয়োজন হয়, বর্তমান স্ত্রী দ্বারা যদি তার শারিরীক চাহিদা ও অন্যান্য আবশ্যকীয় হক আদায় না হয়,আর সেই একাধিক স্ত্রীর চাহিদা পূরন করতেও সক্ষম হয়,তাদের ভরনপোষণ এর ব্যপারেও পূর্ণ সক্ষম হয়,আর একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে শরীয়তের শর্তাবলী পূর্ণ ভাবে মানার উপরেও সক্ষম হয়,তার জন্য একাধিক বিবাহ জায়েজ।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন,
(০১)
প্রশ্নের বিবরন মতে এক্ষেত্রে তিনি উভয় স্ত্রীর মাঝে সমতা বজায় রাখতে পারছেননা। 

(০২)
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا، دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ.

‘‘রমণী তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়লে, রমযানের রোযা পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর তাবেদারী করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।
(মিশকাতুল মাসাবিহ ৩২৫৪।)

উক্ত হাদীস অনুযায়ী চলতে পারলে আপনি জান্নাতে যেতে পারবেন,ইনশাআল্লাহ। 

(০৩)
তিনি যদি আপনার বাবা মার সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখেন,কোনো কথাবার্তা না বলেন,সেক্ষেত্রে আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে।

(০৪)
গুনাহ হবেনা।
তবে তার আদেশ মেনে চলবেন।

(০৫)
তিনি যাহা যাহা বৈধ আদেশ করবেন,সাধ্যমতো সব আদেশ মানার চেষ্টা করবেন।

(০৬)
প্রশ্নের বিবরণ মতে সংসার চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ থাকবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...