আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
32 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম
আমি কোনো ভুল করলে অথবা আমার স্বামীর অবাধ্য হলে সে আমাকে শাস্তিস্বরুপ ৫০-১০০ বার কান ধরে উঠবস করায়। যার কারণে আমার পা প্রায় ১ সপ্তাহ ব্যথা করে এবং হাটাচলা অথবা নামাজ পড়তেও কষ্ট হয়। এভাবে আমার ভুলের জন্য আমাকে শাস্তি দেওয়া কি তার জন্য জায়েজ? এটা কি আমার উপর জুলুম নয়?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,

 ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ [النساء: ٣٤] 

পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাজতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান। [সূরা আন-নিসা: ৩৪] 

এই আয়াতে অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য যে নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে তা নিম্নরূপ: প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে উপদেশ দেওয়া : এ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে বুঝাতে হবে, বিরোধীতা ও হঠকারিতার পরিণাম সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে। স্বামী যে সত্য সত্যই স্ত্রীর কল্যাণকামী এ বিষয়টি যেন তার কাছে প্রকাশ পায় এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে। রাগতঃ ভাষায় কর্কষ কন্ঠের কথা কখনো উপদেশ হতে পারে না। স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য কখনই কঠিন ও শক্ত ভাষা ব্যবহার করে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন না। 

কেননা অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না। দ্বিতীয় পদক্ষেপ বিছানায় পরিত্যাগ করা : একই বিছানায় তার থেকে আলাদাভাবে শয়ন করা। এমন কথা নয় যে, তাকে ঘরের বাইরে রাখা বা অন্য ঘরে রাখা বা পিতা-মাতার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া। 

কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতে নির্দেশিত বিছানায় পরিত্যাগ করার
ব্যাখ্যায় বলেছেন, 

عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ» 

হাকীম ইবন মুআবিয়া রহ. তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! স্বামীদের উপর স্ত্রীদের কী হক? তিনি বলেন, “যা সে খাবে তাকেও (স্ত্রী) খাওয়াবে, আর সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। আর তার (স্ত্রীর) চেহারার উপর মারবে না এবং তাকে গালাগাল করবে না। আর তাকে ঘর হতে বের করে দিবে না। [আবু দাউদ: হাদীস নং ২১৪২।] 

বিছানায় আলাদা করে রাখার অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তার সাথে তার বিছানাতেই শুইবে কিন্তু তারসাথে সহবাস করবে না। তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে শয়ন করবে। অন্য বর্ণনা মতে ইবনু আব্বাস বলেন, তার সাথে স্বাভাবিক কথা ছাড়া আর কিছু বলবে না। [তাফসীর ইবন কাসীর, সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর।] 

ইমাম কুরতুবী এই পদক্ষেপের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, স্বামীর প্রতি যদি স্ত্রীর ভালোবাসা থাকে তাহলে এ অবস্থা তার কাছে খুবই অসহনীয়ও কষ্টকর হবে, ফলে সে সংশোধন হবে। কিন্তু ভালোবাসায় ত্রুটি থাকলে বা মনে ঘৃণা থাকলে নিজ অবাধ্যতার উপর সে অটল থাকবে-সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে না। [তাফসীরে কুরতুবী, সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর।] 

সংশোধনের এই দ্বিতীয় নীতি ফলপ্রসু না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তা হচ্ছে- তৃতীয় পদক্ষেপ মৃদু প্রহার করা : এটি হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ। আল্লাহ্ বলেন, وَاضْرِبُوهُنَّ এবং তাদেরকে প্রহার করবে। এর তাফসীরে হাফেয ইবন কাসীর [রহ.] বলেন, যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোনো কাজ না হয়, স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 «فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ، وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ» 

তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা আল্লাহর আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ। আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে, তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে, তোমরা সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে। [মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।] 

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনাকে যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে,এটা শরয়ী নীতিমালার খেলাফ।
তাই এটি জায়েজ নয়।

এটা আপনার উপর জুলুম।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...