হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ : «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا وَالْبِكْرُ تَسْتَأْذِنُ فِىْ نَفْسِهَا وَإِذْنُهَا صِمَاتُهَا». وَفِىْ رِوَايَةٍ : قَالَ : «الثَّيِّبُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا وَالْبِكْرُ تُسْتَأْمَرُ وَإِذْنُهَا سُكُوتُهَا». وَفِىْ رِوَايَةٍ : قَالَ : «الثَّيِّبُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا وَالْبِكْرُ يَسْتَأْذِنُهَا أَبُوهَا فِىْ نَفْسِهَا وَإِذْنُهَا صِمَاتُهَا». رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রাপ্তবয়স্কা বা স্বামীহীনা নারী তার (বিয়ের অনুমতির) ব্যাপারে ওয়ালী থেকে বেশি অধিকার রাখে। আর কুমারী তার ব্যাপারে অনুমতির অধিকার রাখে এবং (বিয়েতে) নিরবতা তার অনুমতি।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, বিবাহিতা (বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা) তার (বিয়ের) ওয়ালী অপেক্ষা বেশি (কর্তৃত্বের) অধিকারিণী এবং কুমারীর সম্মতি নিতে হবে, তার নিরবতাই সম্মতি।
সহীহ : মুসলিম ১৪২১, আবূ দাঊদ ২০৯৮, নাসায়ী ৩২৬০, তিরমিযী ১১০৮, আহমাদ ১৮৮৮, ইরওয়া ১৮৩৩, সহীহাহ্ ১২১৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০৮৪।
,
ইমাম শাফি‘ঈ, ইবনু আবূ ইয়া‘লা, আহমাদ, ইসহক (রহঃ)-সহ অন্যান্য ‘উলামাগণ বলেন, বিবাহের ওয়ালী যদি বাবা কিংবা দাদা হয় তবে কুমারী মহিলা থেকে অনুমতি নেয়া মুস্তাহাব। যদি তার অনুমতি ছাড়াই বিবাহ দিয়ে দেয় তবে বিবাহ বিশুদ্ধ হবে। কারণ বাবা কিংবা দাদা তার প্রতি পূর্ণ স্নেহশীল। অন্যদিকে বাবা কিংবা দাদা ব্যতীত অন্য কেউ ওয়ালী হলে অনুমতি নেয়া ওয়াজিব, অনুমতি ছাড়া বিবাহ বিশুদ্ধ হবে না। তবে আওযা‘ঈ, আবূ হানীফাহ্ এবং কুফার ‘উলামাগণের মতে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কা কুমারী মহিলা থেকে বিবাহের অনুমতি নেয়া ওয়াজিব। অন্যদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা কুমারী মহিলার চুপ থাকাই তার অনুমতি, এটি সকল কুমারী মহিলা ও ওয়ালী সবার জন্য প্রযোজ্য। আর কুমারী মহিলার নীরব থাকাই অনুমতির জন্য যথেষ্ট। কিন্তু স্বামী পরিত্যক্ত মহিলার ক্ষেত্রে মৌখিক অনুমতি জরুরী, ওয়ালী তার বাবা কিংবা অন্য যে কেউ হোক না কেন কারণ প্রথম বিবাহের ফলে তার পূর্ণ লজ্জাবোধ দূর হয়ে যায়। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪২১; মিরকাতুল মাফাতীহ)
শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহে চাপ প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। যদি চাপ দিয়ে তার সম্মতি আদায় করা হয় আর এভাবে অপছন্দের পাত্রের সাথে মহিলাকে বিবাহ দেওয়া হয়, তবে পরবর্তীতে সে বিবাহ বলবত রাখা বা নাকচ করার এখতিয়ার পর্যন্ত শরীয়ত তাকে দিয়েছে।
হাদীসগ্রন্থসমূহে এরূপ একাধিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, যাতে এ জাতীয় বিবাহে মেয়েকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল।
عن بُرَيْدَةَ بن الحصيب قال : جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَتْ : إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ .
فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا .
فَقَالَتْ : قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي ، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ.
رواه ابن ماجه (1874) ، وصححه البوصيري في مصباح الزجاجة (2/102) ، وكذا قال الشيخ مقبل الوادعي : " صحيح على شرط مسلم " ، انتهى من الصحيح المسند صـ 160
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, একবার এক তরুণী তাঁর কাছে এসে বলল, আমার বাবা আমাকে তার ভাতিজার সাথে বিবাহ দিয়েছে-উদ্দেশ্য আমার দ্বারা তার হীনাবস্থা ঘুচানো-কিন্তু আমার তাতে সম্মতি ছিল না।
উম্মুল মুমিনীন বললেন, তুমি বসো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসুন। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলে তিনি তাঁকে সে ঘটনা অবগত করলেন। তা শুনে তিনি মেয়েটির বাবাকে ডেকে পাঠালেন।
তারপর মেয়েটিকে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দিলেন। মেয়েটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবা যা করেছেন আমি তা অনুমোদন করলাম। আমার উদ্দেশ্য কেবল নারীদেরকে জানানো যে, এ বিষয়ের ক্ষমতা বাবাদের হাতে নয়। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৫৩৯০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৭৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৫০৮৭)
জোর করে বিবাহ দিলে পরবর্তীতে সে বিবাহ বলবত রাখা বা নাকচ করার এখতিয়ার পর্যন্ত শরীয়ত মেয়েকে দিয়েছে।