আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
37 views
in সাওম (Fasting) by (4 points)

আসসালামু আলাইকুম, উস্তাদ

আমার আব্বা ২০১৭ সালে অকস্মাৎ মারা যান। আমরা আমাদের ছোটবেলা থেকে আব্বাকে সবসময় নামাজ ও রোজার প্রতি মনযোগী দেখেছি। আমরা উনাকে কক্ষনো ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ বা রোজা কাজা করতে তো দেখিনি বরং কখনো সফরে না অসুস্থতায় নামাজ জামায়াতে আদায় না করতে পারলে তিনি খুব আফসোস করতেন। কিন্তু একজন নিকট আত্মীয় বলেন যে কলেজ পড়ুয়া অবস্থায় আব্বা কিছু রোজা ছেড়ে দিয়েছিলেন কারন তখন তার ইসলামিক জ্ঞান ততোটা মজবুত ছিলোনা। এমনতাবস্থায় আমারা আব্বার সেই সকল রোজার হিসাব এবং তার কাজা কিভাবে আদায় করতে পারি, দিক নির্দেশনা দিলে খুবই উপকৃত হবো।  

1 Answer

0 votes
by (59,730 points)

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/10069/

সাওম ও সালাতের ফিদিয়ার পরিমাণঃ

( ﻭَﻟَﻮْ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَﻮَﺍﺕٌ ﻓَﺎﺋِﺘَﺔٌ ﻭَﺃَﻭْﺻَﻰ ﺑِﺎﻟْﻜَﻔَّﺎﺭَﺓِ ﻳُﻌْﻄَﻰ ﻟِﻜُﻞِّ ﺻَﻠَﺎﺓٍ ﻧِﺼْﻒَ ﺻَﺎﻉٍ ﻣِﻦْ ﺑُﺮٍّ ) ﻛَﺎﻟْﻔِﻄْﺮَﺓِ ( ﻭَﻛَﺬَﺍ ﺣُﻜْﻢُ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ ) ﻭَﺍﻟﺼَّﻮْﻡِ، ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﻌْﻄِﻲ ( ﻣِﻦْ ﺛُﻠُﺚِ ﻣَﺎﻟِﻪِ ) ( ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ - 2/72

যদি কেউ মারা যায় এবং তার উপর অনেক সালাত ক্বাযা থাকে, অথবা যদি মৃত ব্যক্তি সালাতের ফিদিয়ার ওসিয়ত করে যায়, তাহলে প্রত্যেক সালাতের বিপরীতে এক ফিতরা সমপরিমাণ ফিদিয়া আদায় করতে হবে। পাচঁ ওয়াক্ত সালাতের সাথে বিতিরের সালাতেরও ঐ পরিমাণ (তথা এক ফিতরা সমপরিমাণ) আদায় করতে হবে।এবং ছুটে যাওয়া প্রত্যেকটি সাওমের বিধান ও একিই।

ফিদিয়া- মৃত ব্যক্তির এক তৃতীয়াংশ সম্পত্তি থেকে-ই আদায় করা হবে। আদ্দুররুল মুখতার-২/৭২ , ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যা-১০/১৭৬


অপারগ ব্যক্তির নামাযের বিধানঃ

اذا مات المريض ولم يقدر على الصلاة بالإيماء لا يلزمه الإيصاء بها- مراقى الفلاح بإمداد الفتاح علي نور الإيضاح و نجاة الأرواح ;١/١٦٩

ভাবার্থ-যদি অসুস্থ ব্যক্তি মারা যায়, এমতাবস্থায় যে, সে ইশারায় ও নামায পড়তে অক্ষম। তাহলে তার উপর উক্ত নামায ফরয হবে না। (উক্ত নামাযের ক্বাযা ফিদয়া কিছু দিতে হবে না) মারাক্বিল ফালাহ-১/১৬৯


একটি সংশয় নিরসনঃ

ورد النص في الصوم بإسقاطه بالفدية، والحنفية يرون أن الصلاة كالصوم استحسانا لكونها أهم منه. وغيرهم يرى ألا كفارة للصلاة إلا قضاؤها،................................ الخ........... والحنفية مع قولهم بذلك يرجون القبول والشفاعة.

(مراقى الفلاح بإمداد الفتاح علي نور الإيضاح و نجاة الأرواح ;١/١٦٩)

রোযা সম্পর্কে কুরআনের ঘোষনা-অপরাগ অবস্থায় ফিদয়া দিলে রোযার ফরয হুকুম আদায় হয়ে যাবে।

হানাফি উলামায়ে কেরামগণ মনে (ক্বিয়াস) করেন, নামাযের ফিদিয়ার আলোচনা কুরআন-হাদীসে যদিও আসেনি। তথাপি ফিদয়ার ক্ষেত্রে নামায রোযার মতই হবে। যেহেতু নামায ইসলামের অধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান এমনকি রোযার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য উলামায়ে কেরাম মনে করেন, নামাযের কোনো ফিদিয়া নাই। নামাযকে একমাত্র ক্বাযা মাধ্যমেই সমাপ্ত করতে হবে। কিন্তু হানাফি ফুকাহায়ে কেরাম আশা করেন, হয়তো ফিদয়ার আল্লাহ কবুল করবেন এবং উক্ত ব্যক্তির জন্য রসূলের শাফায়ত নসিব হবে। (হানাফি মাযহাব মতে নামাযের ফিদিয়া আশার উপর) (মারাক্বিল ফালাহ-১/১৬৯


https://ifatwa.info/42210/ নং ফাতওয়াতে আমরা বলেছি যে,

সুরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۸۵

রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।


হাদীস শরীফে এসেছেঃ

ছাবেত বুনানী রাহ. বলেন, আনাস ইবনে মালেক রা. যখন বার্ধক্যের কারণে রোযা রাখতে সক্ষম ছিলেন না তখন তিনি রোযা না রেখে (ফিদয়া) খাবার দান করতেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযযাক, হাদীস : ৭৫৭০

 

ইকরিমা রাহ. বলেন, ‘‘আমার মা প্রচন্ড তৃষ্ণা-রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং রোযা রাখতে সক্ষম ছিলেন না। তাঁর সম্পর্কে আমি তাউস রাহ.কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘প্রতি দিনের পরিবর্তে মিসকীনকে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম প্রদান করবে’’’ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৫৮১


এক রোযার পরিবর্তে এক ফিদিয়া ফরয হয়। এক ফিদিয়া হলো, কোনো মিসকীনকে  দু বেলা পেট ভরে খানা খাওয়ানো অথবা এর মূল্য প্রদান করা।

হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন-

وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ

এই আয়াত রোযা রাখতে অক্ষম বৃদ্ধের জন্য প্রযোজ্য।- মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৫৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৬


আরো জানুনঃ

https://ifatwa.info/14504/


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!


আপনি অনুমানিক কিছু নামাজ ও রোজার ফিদিয়া দিয়ে দিতে পারেন। তাহলে আল্লাহ তায়ালা চাইলে এটা কবুল করে নিবেন এবং আপনার বাবাকে আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন। আল্লাহ কবুল করুন।

বর্তমান সময়ে একটা ফিদিয়ার সর্বনিম্ন হলো ১২০/১৩০ টাকার মত। আর যারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি তাদেরকে উক্ত ফিদিয়া দিতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/41445/

এই মূল্যের থেকে বেশীও দিতে পারেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...