আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমি দুটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছিলাম।

১. দুই বন্ধু মিলে যদি কখনো কারো গাছের কাঁচা আম চুরি করে থাকে যখন তাদের কারো দ্বীনের বুঝ ছিল না এবং পরবর্তীতে যখন তাদের দ্বীনের বুঝ এসেছে তখন তারা তাদের অপরাধটার জন্য লজ্জিত হয়েছে এবং তওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়েছে। কিন্তু কারো হক নষ্ট করলে তো শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়াটাই পর্যাপ্ত হয় না (যতটুক জানি) যার হক নষ্ট করা  হয়েছে তার কাছে মাফ চাইতে হয় কিংবা তার হক আদায় করে দিতে হয়। কিন্তু ততদিনে গাছের মালিক মৃত্যুবরণ করেন এবং তার যত উত্তরাধিকার আছে তাদের সবার কাছে গিয়ে মাফ চাওয়াটা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে এক ওস্তাদ বলেছিলেন যে ওই আমের সমপরিমাণ আম কিনে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে এবং আল্লাহ যেন এই সাওয়াবের পরিমাণ তার আমলনামায় দিয়ে দেন এই নিয়তে আমগুলো গরিবদেরকে দিতে। এখন এখান থেকে আমার কিছু প্রশ্ন হচ্ছে-

প্রশ্ন ১. ওই আমের সমপরিমাণ আমই কি কিনে দান করতে হবে নাকি ওই আমের সমপরিমাণ টাকা দান করলে হক আদায় হয়ে যাবে?

প্রশ্ন ২. যেহেতু অনেকদিন আগে এই কাজটি করা হয়েছে তাই সঠিক আমের পরিমাণটি মনে নেই সেক্ষেত্রে পরিমাণ টি ১০ কেজি ধরে নেওয়া হয়েছে যদিও এত পরিমাণ আম পারা হয়নি। কিন্তু পরিমাণ যেন কম না হয় সেই সাবধানতার কারণে ১০ কেজি ধরে নেওয়া হল। এই কাজটি করা কি ঠিক আছে?

প্রশ্ন ৩. বাজারে যখন কাঁচা আম উঠে তখন তা বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্তও হয়ে থাকে কাঁচা আমের কেজি। এক্ষেত্রে যদি তারা ন্যূনতম  দামটাকে মানে ৫০ টাকা কেজি দরে এই আমের দাম হিসেবে ধরে নিয়ে ৫০ টাকা করে ১০ কেজি কাঁচা আমের দাম যত টাকা আসে (৫০×১০=৫০০ টাকা) দুইজন অর্ধেক অর্ধেক করে মানে ২৫০ টাকা করে দুইজন ৫০০ টাকা কোন লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বা গরিবদেরকে দিয়ে দেয় তাহলে কি হক আদায় হয়ে যাবে?

২. কেউ যদি প্রায় ৪-৫ বছরের মতো ট্রেনে যাতায়াত করে কিন্তু বেশিরভাগ সময় টিকেট না কিনে যাতায়াত করে থাকে বলতে গেলে একদম খুব কম সময় টিকেট কাটা হয়েছে বাকি পুরোটা সময়ই টিকেট ছাড়াই যাতায়াত করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তার দ্বীনের বুঝ আসার ফলে সে বুঝতে পারে যে এটি অনেক বড় একটি অপরাধ হয়ে গিয়েছে এবং এই অপরাধের জন্য সে পুরো দেশবাসীর কাছে দায়ী থাকবে হক নষ্ট করার জন্য। এই কাজের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে তওবা করা হয়েছে এবং দ্বীনের বুঝ আসার পরে যতবার ট্রেনে যাতায়াত করা হয়েছে প্রতিবারই টিকেট কিনে যাতায়াত করা হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে এই হক কিভাবে আদায় করা সম্ভব? সে শিক্ষার্থী হওয়ার ফলে আগের টিকেট না কেনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে একসাথে অনেক টাকা রেলওয়ে অফিসে গিয়ে জমা দেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে একজন পরামর্শ দিয়েছেন যে যখনই কিছু টাকা হবে একসাথে অনেকগুলো টিকিট কিনে সেই টিকিট দিয়ে যাতায়াত না করে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে এভাবে এই কাজটি চলমান রাখতে । আমার প্রশ্ন হচ্ছে-
প্রশ্ন ১. ৪-৫ বছরে তার ঠিক কত টাকা টিকিটের জন্য খরচ হওয়ার কথা সে সেই টাকার সঠিক পরিমাণটা সে জানেনা কারণ সে প্রতিদিন যাতায়াত করত না এবং সবসময় একই ট্রেনে যাতায়াত করত না এবং এক এক ট্রেনের টিকেটের দাম এক এক রকম। এক্ষেত্রে টাকার পরিমাণটা কিভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব?

প্রশ্ন ২. কোন উপায়ে এই টিকেটের টাকাটা পরিশোধ করা সম্ভব বা এই হক আদায় করা সম্ভব? মানে কি করলে আল্লাহ এই গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং সে কারো কাছে দায়ী থাকবে না?

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/46246/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

কারোর নিকট বান্দার হক পাওনা থাকলে, প্রথমে উক্ত হক পরিশোধের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। সাধ্যমত চেষ্টা করার পরও যদি সেই হককে আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে উক্ত প্রাপ্য হক্বকে সেই ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিবে এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট খালিছ নিয়তে তাওবাহ করবে। আল্লাহ তা'আলা কারো প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেলে নিজ পক্ষ্য থেকে বান্দার হককে আদায় করে দিবেন।


হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ حَدَّثَنَا سَعِيدٌ الْمَقْبُرِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ ২৪৪৯.৬৫৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০,

ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)


https://www.ifatwa.info/8668  নং ফাতাওয়াতে বলেছি যে,

অন্যর মাল তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতীত কারো জন্য হালাল হয় না। বিদায় এসব পরিত্যাজ্য।

কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ

তরজমাঃ-হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (সূরা নিসা-২৯)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!


১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ঐ ব্যক্তির ওয়ারিসদের কাছে ঐ পরিমাণ টাকা পৌছে দিবেন এবং তাদের কাছে বিষয়টি জানাতে হবে।


যদি তাদের কাছে বললে ঝগড়া হওয়ার বা মারামারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে ঐ পরিমাণ টাকা বা তার থেকে একটু বেশি টাকা তাদেরকে হাদিয়া হিসেবে দিয়ে দিবেন। অতঃপর কোনো একদিন এটা উল্লেখ না করে এমনি তাদের কাছে এভাবে বলবেন যে, অনেক সময় আপনাদের অনেক হক নষ্ট করে ফেলেছি তাই আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। বিশেষভাবে ঈদের সময় বলা যেতে পারে। মোটকথা কোনোভাবে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।


২. জ্বী, ধরতে পারেন।

৩. মধ্যম মানের আমের হিসেব করে ধরবেন এবং আপনি ঐ ব্যক্তির ওয়ারিসদের কাছে ঐ পরিমাণ টাকা পৌছে দিবেন।

৪. প্রবল ধারণা করে নির্ধারন করবেন। কতো টাকা হতে পারে। আর আসনবিহীন টিকিট কেটে সেখানে না গিয়ে ছিড়ে ফেলতে পারেন।

৫. ট্রেনের অফিসে গিয়ে তাদেরকে অবগত করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এটা সম্ভব না হলে আসনবিহীন টিকিট কেটে সেখানে না গিয়ে ছিড়ে ফেলতে পারেন।

আর খাটি দিলে তওবা করবেন। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...