ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব:-
https://ifatwa.info/86774/
নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
جَنّٰتُ عَدۡنٍ یَّدۡخُلُوۡنَہَا وَ مَنۡ صَلَحَ مِنۡ
اٰبَآئِہِمۡ وَ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِہِمۡ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَدۡخُلُوۡنَ
عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ کُلِّ بَابٍ ﴿ۚ۲۳﴾
স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও
(তাতে প্রবেশ করবে)। আর ফেরেশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (সুরা রা'দ ২৩)
জান্নাতীদের জন্য আরো একটি পুরস্কার
এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তা এই যে,
আল্লাহ তা'আলার এ নেয়ামত শুধু তাদের ব্যক্তিসত্তা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে
না; বরং তাদের বাপ-দাদা,
স্ত্রী ও সন্তানরাও এর
অংশ পাবে। শর্ত এই যে, তাদেরকে এর উপযুক্ত হতে
হবে। এর নূ্ন্যতম স্তর হচ্ছে মুসলিম হওয়া। [ফাতহুল কাদীর]
উদ্দেশ্য এই যে, তাদের বাপ-দাদা ও স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততিদের আমল যদিও এ স্তরে
পৌছার যোগ্য নয়; কিন্তু আল্লাহর প্রিয়
বান্দাদের খাতিরে তাদেরকেও এ উচ্চস্তরে পৌছে দেয়া হবে। [কুরতুবী]
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ اتَّبَعَتۡہُمۡ ذُرِّیَّتُہُمۡ
بِاِیۡمَانٍ اَلۡحَقۡنَا بِہِمۡ ذُرِّیَّتَہُمۡ وَ مَاۤ اَلَتۡنٰہُمۡ مِّنۡ
عَمَلِہِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ
ؕ
এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততি
ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব
তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি একটুও কমাবো না। [সূরা আত-তূরঃ ২১]
رَبَّنَا وَ اَدۡخِلۡہُمۡ جَنّٰتِ عَدۡنِۣ الَّتِیۡ
وَعَدۡتَّہُمۡ وَ مَنۡ صَلَحَ مِنۡ اٰبَآئِہِمۡ وَ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِہِمۡ
ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ۙ﴿۸﴾
হে আমাদের রবা! আর আপনি তাদেরকে প্রবেশ
করান স্থায়ী জান্নাতে যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের পিতামাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তাদেরকেও
৷ নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্ৰজ্ঞাময়। (সুরা গাফির ০৮)
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ তা'আলা সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের
সন্তান-সন্ততিকেও তাদের সম্মানিত পিতৃপুরুষদের মর্তবায় পৌঁছিয়ে দেবেন, যদিও তারা কর্মের দিক দিয়ে সেই মর্তবার যোগ্য না হয়- যাতে
সম্মানিত মুরব্বীদের চক্ষুশীতল হয়।
সায়ীদ ইবন-জুবায়ের রাহেমাহুল্লাহ
বলেন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, জান্নাতী ব্যাক্তি জান্নাতে প্ৰবেশ করে তার পিতামাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে যে, তারা কোথায় আছে?
জওয়াবে বলা হবে যে, তারা তোমার মর্তবা পর্যন্ত পৌছতে পারেনি। তাই তারা জান্নাতে
আলাদা জায়গায় আছে। এই ব্যক্তি আরয করবে,
হে রব! দুনিয়াতে নিজের
জন্যে ও তাদের সবার জন্যে আমল করেছিলাম। তখন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আদেশ হবে,
তাদেরকেও জান্নাতের এই
স্তরে একসাথে রাখা হোক।
এসব বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আখেরাতে সৎকর্মপরায়ণ পিতৃপুরুষ দ্বারা তাদের সন্তানরা উপকৃত
হবে এবং আমলে তাদের মর্তবা কম হওয়া সত্বেও তাদেরকে পিতৃপুরুষদের মর্তবায় পৌঁছিয়ে
দেয়া হবে। অপরদিকে সৎকর্মপরায়ণ সন্তান-সন্ততি দ্বারা তাদের পিতা-মাতার উপকৃত হওয়াও
হাদীসে প্রমাণিত আছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা কোন কোন নেকবান্দার
মর্তবা তার আমলের তুলনায় অনেক উচ্চ করে দেবেন। সে প্রশ্ন করবে, হে রব! আমাকে এই মর্তবা কিরূপে দেয়া হল? আমার আমল তো এই পর্যায়ের ছিল না। উত্তর হবে, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা ও দো'আ করেছে। এটা তারই ফল। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৫০৯] (কিছু তথ্য সংগৃহীত)
জান্নাত মুমিনের চিরস্থায়ী আবাস। ঈমান
ও আমলের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাআলা পরকালে জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ
তাআলা জান্নাতে জান্নাতিদের পরিবার-সন্তানকে একত্র করবেন মর্মে পবিত্র কোরআনে দলিল
রয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ اتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّیَّتُهُمْ
بِاِیْمَانٍ اَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّیَّتَهُمْ وَ مَاۤ اَلَتْنٰهُمْ مِّنْ
عَمَلِهِمْ مِّنْ شَیْءٍ
‘যারা ঈমান এনেছে এবং সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে
তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে
তাদের সঙ্গে মিলিত করব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।’ (সুরা তুর: ২১)
আয়াতের অর্থ ও মর্ম খুবই স্পষ্ট। জান্নাতি
ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি যদি ঈমান ও আমলে সালেহের অধিকারী হয়, আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতাকে খুশি করার জন্য সন্তানদেরকেও তাদের
সঙ্গে যুক্ত করে দেবেন, সন্তানদেরকে সেই স্তরে
পৌঁছে দেবেন। যদি আমলের মাধ্যমে তারা পিতা-মাতার মতো জান্নাতের উচ্চ স্তর লাভ করতে
নাও পারে, তবুও চক্ষু শীতলের জন্য তাদেরকে পিতা-মাতার পাশে রাখা হবে। এক্ষেত্রে
পিতা-মাতা বা পূর্বসূরীর স্তর বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। বরং তাঁদের মর্যাদা ও স্তর
যথাস্থানেই থাকবে। (দ্র. তাফসিরে ইবনে কাসির: ৭/৪৩২;
মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১১৩৭০; কাশফুল আসতার: ২২৬০)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
আল্লাহ তাআলা সুরা আয-যুখরূপের ৭১নং
আয়াতে উল্লেখ করেছেন, ‘তাদের কাছে পরিবেশন করা
হবে স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র এবং তথায় (বেহেশতে) রয়েছে এমন নেয়ামত, মানুষের মন যা আকাঙ্ক্ষা করে এবং দেখলে মানুষের চোখ জুড়িয়ে যায়।
আর সেখানে তোমরা চিরকাল অবস্থান করবে।’
মানুষের এ আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে পরকালের
চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাতে। এ চাওয়া-পাওয়া পূরণ করার কারণ হলো যারা দুনিয়াতে
আল্লাহর ইচ্ছাধীন নিজেদের জীবন পরিচালনা করেছে।
মানুষ যা চাইবে আল্লাহ তাআলা তাই দান
করবেন। যার সঙ্গে সাক্ষাৎ কামনা করবে,
তার সঙ্গেই সাক্ষাতের
ব্যবস্থা করা হবে। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মু’মিন লোক যদি জান্নাতে সন্তানের আকাঙ্খা করে তাহলে
সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করবে ও সন্তান প্রসব করবে এবং সন্তানটি হবে বয়সে
যুবক। তার ইচ্ছা অনুযায়ী মুহুর্তের মধ্যেই এসব হয়ে যাবে। (তিরমিজী-২৫৬৩)