আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
65 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)

আসসালামু-আলাইকুম,
পারিবারিক ভাবে ২০১৩ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখ আমার বিয়ে হয়। আমার বাবা নেই মা এবং আত্নীয়রা মিলে আমার বিয়ে দেন।স্বামী প্রবাসী ছিলেন।ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে থাকা কালীন আমার বিয়ে হয় তাই, পড়াশোনার জন্য এবং তার বাসায় আমি থাকার মতো ব্যবস্থা না থাকার কারনে আমি আমার মায়ের বাসায়ই থাকতাম বিয়ের পর স্বামী সহকারে।সে প্রবাসে ফেরত চলে যাবে তাই তারা বাসায় আমাকে পার্মানেন্ট নিবে না যতদিন না আমার থাকার সুব্যবস্থা না হয়। বিয়ের ১ মাস পর তার কিছু দোষ জনিত সমস্যার কারনে তার সাথে আমার প্রচন্ড মনো মালিন্য হয় যার কারনে আমার পরিবার আর আমি তার সেই সমস্যার কথা তার পপরিবারকে জানাবো বলে সিদ্ধান্ত নেই। তবে সে আর কখনো সে কাজ করবে না বলে আমাকে র আমার পরিবারকে ওয়াদা করে একটা সুযোগ দিতে বলে যে সে ভালো হয়ে যাবে। আমি সুযোগ দিয়ে সংসার কন্টিনিউ করি। বিয়ের চার মাস পর প্রবাসে ফেরত যায়। আমি শশুর বাড়ি এবং মায়ের বাড়ি দুইদিকেই মিলিয়ে থাকতাম। সে প্রবাসে থাকা কালীন আবার বুঝতে পারি তার সাথে যেই জিনিস নিয়ে আমার সমস্যা হয়েছিলো সেটা সে পুনরায় করে এবং আমার কাছে স্বীকার করে। সেই থেকে তার সাথে ধীরে ধীরে আমার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। এরপর সে ২০১৬ সালে  প্রবাস থেকে ফেরত আসলেও আমাদের সম্পর্ক খুব একটা উন্নতি হয় নি। সে আসার কিছুদিন পর আমি প্রেগন্যান্ট হই। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে তার সাথে আমার সম্পর্ক আরো খারাপ হয়ে যায়। এরপর থেকে সে তার বাবার বাসায় থাকতো আর আমি আমার মায়ের বাসায় থাকতাম।বাচ্চা হওয়ার বছর খানেক পর আমাদের সম্পর্কের সমস্যার  আরও বেড়ে যায় এবং আমারসহ বাচ্চার ভরনপোষণ না দেওয়ার  ফলে ডিভোর্সের উদ্দেশ্যে পারিবারিক বৈঠক বসে। সেই বৈঠকে  সে তার দোষ স্বীকার করে এবং শেষ সুযোগ চায় যার বিনিময়ে আমাদের মিল করিয়ে দেয় মুরব্বিরা মিলে। এরপর আবার সে প্রবাসে ফিরে যায়। পরবর্তীতে আমাদের মধ্য কার মমনোমালিন্য এবং ঝামেলা আরও বিরাট আকার ধারণ করে যার ফলে  ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর পারিবারিক ভাবে আমাদের খোলা তালাক হয়। তালাক দেয়া কালীন সময়ে সে প্রবাসে ছিলো,তাই সে তার পক্ষের মুরব্বি,বাবা-মা এবং আমার পক্ষের মুরব্বি মা সহ যেই কাজি দিয়ে বিয়ে হয়েছিল সেই কাজির মাধ্যমে আমার সিগনেচার এবং মৌখিক তালাকের নিয়ম কানুন স্বরুপ বয়ানের মাধ্যমে খোলা তালাক সম্পন্ন হয়।  ডিভোর্সের উল্লেখ তবে সে ঐ মুহূর্তে আমাকে  এটা বলে নাই যে, আমি তোমাকে তালাক দিলাম। এর আগে আমাকে বলছে আমকে চলে যেতে মেয়ে নিয়ে।মানে ডিরেক্ট এটা বলে নাই আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম বা তালাক দিলাম তবে তালাকের জন্য আইনগত যা যা নিয়ম পালন করতে হয় সেসব করেছে। আমার কাবিননামার উল্লেখ্য মোহরানা এবং ইদ্দতকালীন খরপোষ সে দেয় নি।কাবিননামার ১৮ নাম্বার কলামে আমাকে ডিভোর্সের অধিকার দেয়া হয়েছে, তবে যেহেতু তালাকের সময় সে উপস্থিত ছিলো না  সেহেতু ধর্মীয় ভাবে আমাদের এই ডিভোর্স টা কি হয়েছে?
 ডিভোর্সের পর ইদ্দত কালিন সময় পার করা ব্যাতিত আমি দ্বিতীয় বিয়ে করি। ডিভোর্সের পর আমার সন্তান আমার কাছেই রেখেছি যেহেতু আমার বাবা নেই আমি এবং আমার সন্তানের ভরনপোষণ দেয়ার কেউ ছিলো না। যার সাথে আমার বিয়ে হয় সে আমার পূর্ব পরিচিত এবং  সে আমার সার্বিক সব কিছু জেনেই আমার সন্তান সহ আমাকে বিয়ে করে। ২০২২ সালের ৩০ই ডিসেম্বর  আমার  পরিবার সহ বিয়ে হয় তবে আমার বর্তমান স্বামীর পরিবার তখন জানতো না বিয়ের কথা। বিয়ের ৪/৫ মাস পর আমার স্বামী তার পরিবারকে  জানিয়েছে । উল্লেখ্য ২০১৬ সালে আমি প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে ডিভোর্স পর্যন্ত  আমার প্রথম স্বামীর সাথে শারীরিক কোন সম্পর্ক ছিলো না যেহেতু সে পুনরায়  প্রবাসে চলে গিয়েছিলো।তাই ইদ্দতকালীন তিন মাস সময় অপেক্ষা করা বাধ্যতামূলক তা আমি বা আমার পরিবার জানতাম না।

এখন আমি জানতে চাই আমার দ্বিতীয় বিয়েটা কি সহীহ হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে এখন আমার করণীয় কি আমার বিয়ের এখন প্রায় দুইবছর চলছে।
 প্রথম বিয়ে : ০৫-০৭ ২০১৩ ইং
ডিভোর্স : ২১-১২-২০২২

পরবর্তী বিয়ে : ৩০-১২- ২০২২ইং।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান হলো কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে তার স্বামীর বাড়িতে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করতে হবে।  

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
   
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ۖ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ [٢:٢٣٤] 

আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।

★তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলার জন্য স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। বিশেষ ওজর ব্যতীত স্বামীর বাড়ি ছাড়া বাবার বাড়িতে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে ইদ্দত পালন করা জায়েয নেই।

সুরা আত ত্বলাকের ০১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

৬৫:১ یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوۡهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَ اَحۡصُوا الۡعِدَّۃَ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ رَبَّکُمۡ ۚ لَا تُخۡرِجُوۡهُنَّ مِنۡۢ بُیُوۡتِهِنَّ وَ لَا یَخۡرُجۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّاۡتِیۡنَ بِفَاحِشَۃٍ مُّبَیِّنَۃٍ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَعَدَّ حُدُوۡدَ اللّٰهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهٗ ؕ لَا تَدۡرِیۡ لَعَلَّ اللّٰهَ یُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِکَ اَمۡرًا ﴿۱﴾

হে নবী, (বল), তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে, তখন তাদের ইদ্দত অনুসারে তাদের তালাক দাও এবং ‘ইদ্দত হিসাব করে রাখবে এবং তোমাদের রব আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়ী-ঘর থেকে বের করে দিয়ো না এবং তারাও বের হবে না। যদি না তারা কোন স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমারেখাসমূহ অতিক্রম করে সে অবশ্যই তার নিজের ওপর যুলম করে। তুমি জান না, হয়তো এর পর আল্লাহ, (ফিরে আসার) কোন পথ তৈরী করে দিবেন। 

তবে স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।

হযরত ফাতেমা বিনতে কায়স রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছি, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছে এখন আমি আমার সাথে ব্যভিচারের ভয় করছি। তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্থানান্তর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৯১৬৮)
,
আরো জানুনঃ 

https://www.ifatwa.info/104 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
ইদ্দত কাকে বলে? সে সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে..
هي انتظار مدة معلومة يلزم المرأة بعد زوال النكاح حقيقة أو شبهة المتأكد بالدخول أو الموت كذا في شرح النقاية للبرجندي.
ইদ্দত হল,স্বাভাবিক বিবাহ বিচ্ছেদ বা খালওয়াতে সহীহা(তথা স্বামী-স্ত্রী সহবাসের নিকটবর্তী আচরণ বা নির্জনে বসবাস) বা স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলা কর্তৃক শরীয়ত নির্ধারিত কিছুটা সময় অপেক্ষা করা।(অন্য কোথাও বিয়ে না বসা)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনার পূর্বের স্বামীর অনুমতি ক্রমেই তার মুরব্বিদেরকে নিয়ে কাজী সাহেব খোলা তালাকের কাজ সম্পন্ন করেন।
এক্ষেত্রে আপনার পূর্বের স্বামীর যেহেতু অনুমতি ছিলো,তাই খোলা তালাক হয়ে গিয়েছে।

তবে তালাক পতিত হওয়ার পর আপনি যেহেতু ইদ্দতকাল অতিবাহিত হওয়ার আগেই ২য় বিবাহ বসেছেন,এই বিবাহ শুদ্ধ হয়নি।

আপনার এতোদিনের সংসার হারাম হয়েছে।

সম্পর্ককে শুদ্ধ করার জন্য আপনাকে এখন পুনরায় বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে।
নতুবা তার সাথে এক মুহুর্তের জন্য অবস্থান, দেখা সাক্ষাৎও জায়েজ নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...