আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
75 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
السلام عليكم ورحمة الله আমি দুটি প্রশ্ন করতে চাই । ১. আমার একবছর বিয়ে হয়েছে। আমার শ্বশুর আরেকটা বিয়ে করেছে, আমার শ্বাশুড়ির একটাই ছেলে। উনি আমাদের সাথেই থাকেন। উনি উনার বোনের দুইটা মেয়েকে নিজের কাছে রাখতো। দুইরুমের বাসা, একসাথে বাথরুম হওয়ায় আমার স্বামীর সাথে তাদের পর্দা ঠিকমতো পালন হতো না।এছাড়া বিনা অনুমতিতে আমার রুমে আসে, আয়না ব্যবহার করতো, চুল আচড়াতো আমার স্বামী ঘরে উপস্থিত থাকলেও। এসব বিষয় আমি আমার স্বামীকে বুঝিয়ে বলায় সে তার খালাদের সাথে কথা বললে তারা মেয়েদের নিয়ে যায়।  এরপর আমার শ্বাশুড়ি আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে।এখনও সারাদিন আমার রুমের ভেতর দিয়ে যাওয়াআসা করে। আমার শ্বাশুড়ি প্রতি সপ্তাহে তার বাবার বাড়ি, বোনের বাড়ি যায়। তিনি চায় আমিও যায়। আমার এসব ভালো লাগে না। উনি খুবই কন্ট্রোলিং, পুরো সংসার উনার কথা মতো চালায়।একটু বাত্যয় হলেই খারাপ ব্যবহার করে আমার সাথে। আমার স্বামীর সাথেও। আমার খুব অশায় লাগে। সব কিছু ওনার মন মতো কথামতো না হলেই আজেবাজে কথা শোনায় অপমান করেন আমাকে।  রুমের বারান্দায় সারাদিন প্রাইভেট পড়ায় আর আমার রুম দিয়ে যাওয়াআসা করে। আমার কোন প্রাইভেসি নেই নিজের রুমে। আমার বাবা বিয়ের পর তেমন কিছু দেয় নি শ্বশুরবাড়িতে এসব নিয়ে কয়েকদিন পর পর কথা শোনায় আমাকে। বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের হয়ে যেতেও বলেছে। এমতাবস্থায় আমার শ্বশুড়বাড়িতে যেতেই ইচ্ছা করে না। আমি যদি শ্বশুড়ির সাথে না থাকতে চায় আমি কি গুনাহগার হবো?? ২. আমি প্রেগনেন্ট। আমি শ্বাশুড়ি আমার কণ খেয়াল রাখে না। আমি কিছুই খেতে পারি না। বাবার বাড়িতে থাকলে আমার মা সারাদিন এটা ওটা রান্না করে, কোনরকম একটু খেতে পারি।এছাড়া আমার শ্বশুড়বাড়িতে ওয়াশরুম অনেক দূরে। হাইকমোড নেই আমার অসুবিধা হয়।, আমার রুমের বারান্দায় আমার শ্বাশুড়ি সারাদিন প্রাইভেট পড়ায়, আমার রুমের মধ্যে দিয়ে সারাদিন যাওয়া আসা করে। আমি বিশ্রাম নিতে পারি না। আমরা ভাড়া বাড়িতে থাকি, বিয়ের আগে আমার বাবা কথা বলেছিলো আমার স্বামী বলেছিলো বাসা পরিবর্তন করবে। কিন্তু এখন আর পরিবর্তন করবে না। এমন অবস্থায় আমার স্বামী চায় আমি ওখানেই থাকি কিন্তু আমার বাবা পাঠাতে চায় না। আমি আমার বাবার বাড়ি থাকলে কি গুনাহগার হবো?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
স্বামীর উপর স্ত্রীরও কিছু অধিকার ও হক্ব রয়েছে যেমন, বিয়ের পর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করে স্ত্রীকে একটি বাসস্থান ও খাদ্য এবং বস্র দান করা।এটা স্বামীর উপর  স্ত্রীর অধিকার ও হক্ব এবং শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব। 

এ সম্পর্কে কোরআনের ঘোষনা হলঃ
ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ

বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

تجب السكني لها عليه في بيت خال

মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৬০৪)

قَوْلُهُ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ إلَخْ) ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَرَّرُ بِمُشَارَكَةِ غَيْرِهَا فِيهِ؛؛ لِأَنَّهَا لَا تَأْمَنُ عَلَى مَتَاعِهَا وَيَمْنَعُهَاذَلِكَ مِنْ الْمُعَاشَرَةِ مَعَ زَوْجِهَا وَمِنْ الِاسْتِمْتَاعِ إلَّا أَنْ تَخْتَارَ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهَا رَضِيَتْ بِانْتِقَاصِ حَقِّهَا هِدَايَةٌ )

স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দান করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব,যা স্বামীর পরিবার থেকে খালি থাকবে,কেননা সে অন্যর উপস্থিতির ধরুণ কষ্ট উপভোগ করবে,এবং তার মাল সামানা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে না।তৃতীয় কারো উপস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন ও একান্ত সময় অতিবাহিত করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এ জন্য একটি পৃথক বাসস্থান স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।তবে যদি সে তার নিজ অধিকার বিসর্জন দিতে রাজি হয় যায় তাহলে তার জন্য অনুমিত রয়েছে (যদি এক্ষেত্রে গোনাহের কোনো সম্ভাবনা না থাকে)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/430

ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।

যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।

আরো জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
শশুর শাশুড়ির সাথে থাকা আপনার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।আপনার জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর কতর্ব্য। 

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি আপনার স্বামীর  আলাদা বাসা নিয়ে থাকার সামর্থ থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার স্বামীর জন্য  আলাদা বাসস্থানে ব্যবস্থা করা ওয়াজিব।
আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা না করলে তার গুনাহ হবে।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যদি শ্বশুড়ির সাথে না থাকতে চান,আলাদা বাসায় থাকতে চান,সেক্ষেত্রে আপনি গুনাহগার হবেননা।
বরং এটা আপনার অধিকার। 

(০২)
সার্বিক দিক বিবেচনা করে এই মুহুর্তে আপনাকে বাবার বাসায় থাকার অনুমতি দেয়া আপনার স্বামীর নৈতিক দায়িত্ব। 
মানবতার তাকিদে হলেও আপনাকে এখন আপনার বাবার বাসায় থাকার অনুমতি দেয়া উচিত।

তিনি রাজী না হলে আপনার বাবা মা তাকে বুঝিয়ে রাজী করবেন।

তদুপরি আপনার স্বামী যদি কোনো ক্রমেই রাজি না হোন,বরং আপনাকে তার বাসায় থাকতে চাপ দেন,সেক্ষেত্রে বিষয়টি উভয় পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ থাকবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...