আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
68 views
in পবিত্রতা (Purity) by (13 points)
২৮০১। জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন ইযার (লুঙ্গি) পরিহিত অবস্থা ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে। আল্লাহ তা’আলা এবং পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে গোসলখানায় প্রবেশ না করায়। আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন এমন দস্তরখানে (খাদ্যের মাজলিসে) না বসে যেখানে মদ পরিবেশন করা হয়।

প্রশ্ন ১ঃ কোথাও বেড়াতে গেলে মেয়েদের গোসলের হুকুম কী? কোথায় করবে? যদি সেই বাড়িতে একটাই গোসলখানা থাকে যেখানে ঐ পরিবারের পুরুষ নারী উভয়েই গোসল করে।

প্রশ্ন ২ঃ এখানে সে যেন তার স্ত্রীকে গোসলখানায় না ঢুকায় দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে? যদি নিজের বাড়িতে কমন গোসলখানা থাকে যেখানে স্বামীর বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই গোসল করে, সেখানে গোসল করা যাবে কিনা?

প্রশ্ন ৩ঃ সফরে মেয়েদের গোসলের হুকুম কী? কোনো হোটেলে থাকলে সেক্ষেত্রে কী করবে?

প্রশ্ন ৪ঃ যে কোন মহিলা তার মায়ের ঘর ছাড়া অন্য কোন স্থানে কাপড় খুলে... হাদিসের এ অংশের ক্ষেত্রে হুকুম কী? সফরকালে স্বামীর সঙ্গে থাকাবস্থায় হুকুম কী? তখন কী করবে?

1 Answer

0 votes
by (583,410 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
হাদীসের মূল পাঠ নিম্নরূপ।
) ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﺃَﻥَّ ﻧِﺴْﻮَﺓً ﻣِﻦْ ﺃَﻫَﻞْ ﺣِﻤْﺺَ ﺍﺳْﺘَﺄْﺫَﻥَّ ﻋَﻠَﻴﻬﺎ ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ : ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻦَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟﻠَّﻮَﺍﺗِﻲ ﻳَﺪْﺧُﻠْﻦَ ﺍﻟْﺤَﻤَّﺎﻣَﺎﺕِ ؟ ! ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ( ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﻭَﺿَﻌَﺖْ ﺛِﻴَﺎﺑَﻬَﺎ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِ ﺑَﻴْﺖِ ﺯَﻭْﺟِﻬَﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﻫَﺘَﻜَﺖْ ﺳِﺘْﺮَ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ) ﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺢ ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ)ﺭﻭﻯ ﺃﺣﻤﺪ ( 6/173)، ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ( 4010 ) ﻭﺍﻟﺘِّﺮﻣِﺬﻱ ( 2803
হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, হিমস শহরের কিছু মহিলা উনার সাথে  সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে,তিনি তাদেরকে বলেন, সম্ভবত তোমরা ঐ সমস্ত মহিলা যারা (স্বামীগৃহ ব্যতীত) বিভিন্ন বাথরুমে(বেপর্দা হয়ে) প্রবেশকারী।আমি নবীজী সাঃ কে বলতে শুনেছি,
যে নারী স্বামীগৃহ ব্যতীত অন্য কোথাও বিবস্ত্র হবে, আল্লাহ তার গোপনীয়তা(পর্দাকে) নষ্ট করে দেবেন(তাকে বেপর্দা করে দিবেন)।”(মুসনাদে আহমদ,৬/১৭৩,আবু-দাউদ,হাদীস নং৪০১০,তিরমিযি, হাদীস নং২৮০৩)
উক্ত হাদীসকে ইমাম তাবারানী, হাকীম,বায়হাক্বী হযরত আবু-উমামা রাঃ থেকে বর্ণনা করেন।

অনুরূপ আরেকটি হাদীস,
জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে,
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يَدْخُلِ الْحَمَّامَ بِغَيْرِ إِزَارٍ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَيُدْخِلْ حَلِيلَتَهُ الْحَمَّامَ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يَجْلِسْ عَلَى مَائِدَةٍ يُدَارُ عَلَيْهَا بِالْخَمْرِ "
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন ইযার (লুঙ্গি) পরিহিত অবস্থা ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে। আল্লাহ তা’আলা এবং পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে গোসলখানায় প্রবেশ না করায়। আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন এমন দস্তরখানে (খাদ্যের মাজলিসে) না বসে যেখানে মদ পরিবেশন করা হয়।(তিরমিজি-২৮০১,মিশকাত-৪৪৭৭)

وفي عمدة القاري شرح صحيح البخاري (3/ (338 باب من اغتسل عريانا وحده في الخلوة ومن تستر فالتستر أفضل أي: هذا باب في بيان جواز غسل العريان وحده إلا أن التستر أفضل، ،
[সহীহ বুখারী ১/৬৪, সুনানে আবু দাউদ, হা/ ৪০১৭, উমদাতুল ক্বারী ৩/৩৩৮, আল মাবসূত লিসসারখসী ৩০/২৬৫]।

وفي مرقاة المفاتيح
وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُدْخِلُ) : مِنْ بَابِ الْإِدْخَالِ أَيْ فَلَا يَأْذَنُ بِالدُّخُولِ (حَلِيلَتَهُ) : أَيْ زَوْجَتَهُ (الْحَمَّامَ) : وَفِي مَعْنَاهُمَا كَرِيمَتَهُ، مِنْ أُمِّهِ وَبِنْتِهِ وَأُخْتِهِ وَغَيْرِهَا مِمَّنْ يَكُنْ تَحْتَ حُكْمِهِ، فِي الْإِحْيَاءِ: 

হাদীসের উদ্দেশ্যঃ
স্বামীগৃহ ব্যতীত অন্যকোথাও ঐ সময় কাপড় খোলা নিষিদ্ধ যখন তাকে অপরিচিত পুরুষ দেখে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।অথবা ফেৎনার আশঙ্কা থাকবে বা কোনো হারাম কাজে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যেমন আজকাল গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করা হয়ে থাকে।অন্যথায় মহিলা স্বামীগৃহ ব্যতীত অন্যকোথাও প্রয়োজনে নিজ কাপড় খুলতে পারবে।
এ সম্পর্কে ইমাম মানাওয়ী রাহ বলেন।

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﻨﺎﻭﻱ ﻓﻲ " ﻓﻴﺾ ﺍﻟﻘﺪﻳﺮ " ( 3/176 ) :
" ( ﻭﺿﻌﺖ ﺛﻴﺎﺑﻬﺎ ﻓﻲ ﻏﻴﺮ ﺑﻴﺖ ﺯﻭﺟﻬﺎ ) ﻛﻨﺎﻳﺔ ﻋﻦ ﺗﻜﺸﻔﻬﺎ ﻟﻸﺟﺎﻧﺐ ، ﻭﻋﺪﻡ ﺗﺴﺘﺮﻫﺎ ﻣﻨﻬﻢ ،
"স্বামীগৃহ ব্যতীত অন্যকোথাও কাপড় খোলা"দ্বারা ইঙ্গিত করা হচ্ছে অপরিচিত পুরুষদের সামনে সতর খোলা থেকে নিজেকে হেফাজত করা।

তিনি আরও বলেন,
( ﻓﻘﺪ ﻫﺘﻜﺖ ﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻬﺎ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ) ﻷﻧﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺃﻧﺰﻝ ﻟﺒﺎﺳﺎ ﻟﻴﻮﺍﺭﻳﻦ ﺑﻪ ﺳﻮﺃﺗﻬﻦ ، ﻭﻫﻮ ﻟﺒﺎﺱ ﺍﻟﺘﻘﻮﻯ ، ﻭﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺘﻘﻴﻦ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﻛﺸﻔﻦ ﺳﻮﺃﺗﻬﻦ ، ﻫﺘﻜﻦ ﺍﻟﺴﺘﺮ ﺑﻴﻨﻬﻦ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ،
আল্লাহ তা'আলা পোষাক দিয়েছেন যাতে করে মানুষ তার গোপানাঙ্গকে ঢেকে রাখে,এবং এই কাপড় হচ্ছে তাকওয়ার মানদণ্ড। এখন যখন সে আল্লাহকে ভয় করবে না।বরং তার গোপানাঙ্গকে প্রকাশ করে দিবে, তাই সে যেন তার গোপনীয়তাকে নষ্ট করে দিল।
(ফয়জুল ক্বাদির, ৩/১৭৬)

তিনি আরও বলেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﺃﻳﻀﺎ ( 3/189 ) :
" ﻷﻧﻬﺎ ﻟﻤﺎ ﻟﻢ ﺗﺤﺎﻓﻆ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﺃﻣﺮﺕ ﺑﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﺴﺘﺮ ﻋﻦ ﺍﻷﺟﺎﻧﺐ ، ﺟﻮﺯﻳﺖ ﺑﺬﻟﻚ ، ﻭﺍﻟﺠﺰﺍﺀ ﻣﻦ ﺟﻨﺲ ﺍﻟﻌﻤﻞ ، ﻭﺍﻟﻈﺎﻫﺮ ﺃﻥ ﻧﺰﻉ ﺍﻟﺜﻴﺎﺏ ﻋﺒﺎﺭﺓ ﻋﻦ ﺗﻜﺸﻔﻬﺎ ﻟﻸﺟﻨﺒﻲ ﻟﻴﻨﺎﻝ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻟﺠﻤﺎﻉ ﺃﻭ ﻣﻘﺪﻣﺎﺗﻪ ، ﺑﺨﻼﻑ ﻣﺎ ﻟﻮ ﻧﺰﻋﺖ ﺛﻴﺎﺑﻬﺎ ﺑﻴﻦ ﻧﺴﺎﺀ ﻣﻊ ﺍﻟﻤﺤﺎﻓﻈﺔ ﻋﻠﻰ ﺳﺘﺮ ﺍﻟﻌﻮﺭﺓ ، ﺇﺫ ﻻ ﻭﺟﻪ ﻟﺪﺧﻮﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻮﻋﻴﺪ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
যেহেতু  তাকে যা নির্দেশ করা হয়েছিল, সে তা পালন করেনি,বিধায় তাকে এই বেপর্দা দিয়েই পরবর্তিতে  শাস্তি দেয়া হবে।অর্থ্যাৎ প্রতিদান কৃতকর্মের মধ্য থেকেই দেয়া হবে। প্রকাশতব্য যে,অপরিচিত স্থানে অপরিচিত মানুষের বাড়িতে বা সামনে কাপড় খোলা তাকে যিনার এবং তার আনুষাঙ্গিক জিনিষের প্রতি আহ্বান করার মত।এজন্য হাদীসে ধমকিস্বরূপ হুশিয়ারী এসেছে।
তবে যদি কোনো মহিলা মু'মিনা মহিলাদের সামনে সতর টিক রেখে কাপড় খুলে তাহলে সে এই ধমকির আওতাধীন হবেনা।(ফয়জুল ক্বাদির, ৩/১৮৯)



সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
উপরোক্ত হাদীসে নারীদের সম্মাণের কথা বলা হচ্ছে, 
(১) কোথাও বেড়াতে গেলে মেয়েরা গোসল করতে পারবে।তবে ফ্রিমিক্সিং পরিবেশের কোনো বাথরুমে গোসল করা যাবে না । 

(২)  যদি নিজের বাড়িতে কমন গোসলখানা থাকে যেখানে স্বামীর বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই গোসল করে, তাহলে সেখানে গোসল করা যাবে। তবে মেয়দের জন্য নির্ধারিত গোসলখানায় গোসল করাই উত্তম

(৩) সফরে মেয়েরা গোসল করতে পারবে। 

(৪) যে কোন মহিলা তার মায়ের ঘর ছাড়া অন্য কোন স্থানে কাপড় খুলে... এই হাদীসে  নারীদের সম্মানের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বিনা জরুরতে স্বামীর ঘর অন্যত্র যাওয়া অনুচিৎ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...