বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
446 নং ফাতাওয়ায় বলেছি যে,
জন্মনিয়ন্ত্রণ বা এ্যাবর্শন(গর্ভপাত) সাধারণত চার ধরণের হয়ে থাকে।যথাঃ-
(১)(চিরস্থায়ী)জন্মনিরোধ পদ্ধতিঃ
অর্থাৎ-এমন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করা যার ফলশ্রুতিতে চিরস্থায়ীভাবে সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
(২)(অস্থায়ী)জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ
অর্থাৎ এমন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করা যার ফলশ্রুতিতে সন্তান জন্মানোর ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকা সত্বেও বর্তমানে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর সন্তান জন্ম নিবে না।
(৩)চারমাস পূর্বে গর্ভপাতঃ
অর্থাৎ-গর্ভাশয়ে সৃষ্ট সন্তান চারমাস অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে ঔষধের মাধ্যমে বিনষ্ট করে দেয়।
(৪)চারমাস পর গর্ভপাতঃ
অর্থাৎ-গর্ভাশয়ে সৃষ্ট সন্তানকে চারমাস অতিবাহিত হওয়ার পর ঔষধের মাধ্যমে বিনষ্ট করে দেয়া।
প্রথম প্রকার সর্বাবস্থায় নাজায়েজ ও হারাম।
যদিও তাতে বাহ্যিকভাবে অনেক ফায়দা দৃষ্টিগোচর হয়?
দ্বিতীয় প্রকার শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত মাকরুহে তানযিহি।তবে শরীয়ত সম্মত নিম্নোক্ত প্রয়োজনে বৈধ রয়েছে।
(ক)মহিলা এত দুর্বল যে, গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
(খ)মহিলা নিজ বাসস্থান থেকে এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপতত কোনো মনোবাসনা নেই।আবার নিজ বাসস্থানে আসতেও কয়েক মাস লেগে যাবে বা কয়েক মাসের প্রয়োজন।
(গ)স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক চূড়ান্ত নিম্ন পর্যায়ের,এমনকি উভয়ের অন্তরে বিচ্ছেদের চিন্তাভাবনা চলছে।
(ঘ)পূর্বের বাচ্চার সু-সাস্থ্যর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
(ঙ)স্থান-কালের ফাসাদ অর্থাৎ দ্বীনী পরিবেশের চূড়ান্ত পর্যায়ের অবনতির ধরুন বাচ্চা বদ-আখলাক বা অসচ্চরিত্র এবং মাতাপিতার বে-ইজ্জতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করলে।
বিঃদ্রঃ
সম্পদ কমে যাবে বা মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে সমাজে লজ্জিত হতে হবে মনেকরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ কখনো বৈধ হবে না।
তৃতীয় পদ্ধতি শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত নাজায়েজ ও হারাম।
বিশেষ কিছু কারণে শরীয়ত অনুমোদন প্রদান করে থাকে।
(ক)বর্তমানে কোলে দুধের একটি শিশু রয়েছে,অপরদিকে উক্ত মহিলার গর্ভাশয়ে নতুন সন্তানও উৎপাদিত হচ্ছে। গর্ভের ধরুন দুধ একেবারে শুকিয়ে গেছে।অপরদিকে উক্ত সন্তানকে অন্যকোনো উপায়ে লালনপালন করা যাচ্ছেনা। মায়ের দুধ ব্যতীত অন্যকিছুতে সে মূখই দিচ্ছে না।এমতাবস্থায় চারমাস হয়নি এমন গর্ভকে গর্ভপাত করা বৈধ রয়েছে।
(খ)কোনো মুসলমান বিজ্ঞ ডাক্তার উক্ত গর্ভবতী মহিলাকে পরিদর্শন করে বলে যে,গর্ভপাত না করলে মহিলার জান বা কোনো অঙ্গ বিনাশের আশঙ্কা রয়েছে।
চতুর্থ পদ্ধতি সর্বাবস্থায় নাজায়েজ ও হারাম।তা কোনো অবস্থায়-ই বৈধ হবে না।
(আহসানুল ফাতাওয়া-৮/৩৪৭।(এইচ,এম,সাঈদ-করাচী)কিতাবুন নাওয়াযিল-১৬/২৬৭।(আল-মারকাযুল ইলমী)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
কোন মুসলিম যদি দুইটা বা তিনটা সন্তান নেয়ার পর আর কোন সন্তান না নেয় অথবা নিতে না চায় সে ক্ষেত্রে যদি সেইরকম আকিদা রাখেন যে, আল্লাহ রিজিকের মালিক, তিনি সন্তান টাকা পয়সা সব কিছু দিয়ে থাকেন,কিন্তু উপরে বর্ণিত শরয়ী কোনো উযর না থাকে,তাহলে মাকরুহে তানযিহি হবে।তাওহীদ ভঙ্গ করে কাফের হবে না।
(২)
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَالطُّورِ
কসম তূরপর্বতের,
وَكِتَابٍ مَّسْطُورٍ
এবং লিখিত কিতাবের,
فِي رَقٍّ مَّنشُورٍ
প্রশস্ত পত্রে,
وَالْبَيْتِ الْمَعْمُورِ
কসম বায়তুল-মামুর তথা আবাদ গৃহের,
وَالسَّقْفِ الْمَرْفُوعِ
এবং সমুন্নত ছাদের,
وَالْبَحْرِ الْمَسْجُورِ
এবং উত্তাল সমুদ্রের,(সূরা তুরের সুচনা)
উক্ত আয়াত সমূহে বর্ণিত বায়তুল মা'মুর সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে
তাফসীরে ইবনে কাসিরে উক্ত আয়াতে ব্যখ্যায় তথা সূরা তুরের ৪ নং আয়েতের ব্যাখায় বলা হয়েছে
"আকাশস্থিত ফেরেশতাদের কাবাকে বায়তুল মামুর বলা হয়। এটা দুনিয়ার কা'বার ঠিক উপরে অবস্থিত। হাদীসে আছে যে, মে'রাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বায়তুল মামুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এতে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদতের জন্যে প্রবেশ করে। এরপর তাদের পুনরায় এতে প্রবেশ করার পালা আসে না। প্রত্যহ নতুন ফেরেশতাদের নম্বর আসে। [বুখারী: ৩২০৭, মুসলিম: ১৬২] সপ্তম আসমানে বসবাসকারী ফেরেশতাদের কা'বা হচ্ছে বায়তুল মামুর। এ কারণেই মেরাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে পৌছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে বায়তুল মামুরের প্রাচীরে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখতে পান। [বুখারী: ৩২০৭] তিনি ছিলেন দুনিয়ার কা'বার প্রতিষ্ঠাতা। আল্লাহ তা'আলা এর প্রতিদানে আকাশের কা'বার সাথেও তাঁর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। প্রতি আসমানেই ফেরেশতাদের জন্য একটি ইবাদতঘর রয়েছে। প্রথম আসমানের ইবাদতঘরের নাম ‘বাইতুল ইযযত’৷"
বায়তুল মকাদ্দাস সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।(সূরা বনি ইসরাঈল-১৭)
বায়তুল মুকাদ্দাস যা পূর্ববর্তী অনেক নবীদের ইবাদত স্থল।অনেক ধর্মের কিবলা।এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা।এর মর্যাদা অনেক।বায়তুল্লাহ মসজিদে নববীর পরেই এর মর্যাদা।
(৩)
মাওলানা মুহসিনুদ্দীন খান লিখেন,
জাগ্রত অবস্থায় এ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার দর্শন সম্ভব নয়। অবশ্য আল্লাহ পাক অনেক সময় স্বপ্নে দর্শন করিয়ে দেন। কীভাবে করান এটা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।
ইমাম আবূ হানীফা রাহ. থেকে এ কথা সহীহ সনদে প্রমাণতি কি না? সেটা বিশুদ্ধভাবে কেনো রেফারেন্সের আলোকে পাওয়া যায় না।