বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
জবাব,
আল্লাহ তাআলা কুবা এলাকার সাহাবীদের প্রশংসা করে বলেছেন, তারা পাক-পবিত্রতা পছন্দ করেন। তাদের সে পবিত্রতা কী ছিল? এ সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী রহ. বর্ণনা করেন, আবু আইয়ূব রা., জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. ও আনাস বিন মালেক রা.-এই আনসারী সাহাবীগণ বলেন,
فِیْهِ رِجَالٌ یُّحِبُّوْنَ اَنْ یَّتَطَهَّرُوْا وَ اللهُ یُحِبُّ الْمُطَّهِّرِیْنَ
আয়াতটি নাজিল হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনসারীদের দল! আল্লাহ তোমাদের পবিত্রতার উত্তম প্রসংশা করেছেন। তোমাদের ঐ পবিত্রতা কী? তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা নামাজের জন্য অজু করি এবং গোসল ফরজ হলে গোসল করি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর সাথে কি আরো কোনো বিষয় আছে? তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আর কোনো বিষয় নেই, তবে শৌচাগার থেকে বের হলে আমাদের প্রত্যেকেই পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতে পছন্দ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই সেই পবিত্রতা (আল্লাহ যার কারণে তোমাদের প্রসংশা করেছেন)। সুতরাং এটাকে তোমরা গুরুত্বের সাথে ধরে রাখবে। -(সুনানে কুবরা, বায়হাকী ১/১০৫, মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৫৫৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৫৫)
প্রিয় ভাই!
প্রস্রাব পায়খানা করার পর শুধুমাত্র ঢিলা বা শুধুমাত্র পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যাবে।এমনকি পানি থাকাবস্থায়ও ঢিলা ব্যবহার করা যাবে।এবং ঢিলা ও পানি উভয়টিকে একসাথেও ব্যবহার করা যাবে। শুধুমাত্র ঢিলা ব্যবহার করে পবিত্রতা অর্জন করা সম্পর্কে যেমন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ( من توضأ فليستنثر ، ومن استجمر فليوتر )
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ব্যক্তি অজু করতে যাবে সে যেন তিনবার নাকে পানি দেয়ার পর নাককে জেড়ে পরিস্কার করে।আর যে ব্যক্তি ঢিলা ব্যবহার করতে যাবে সে যেন বেজোড় সংখ্যার ঢিলা ব্যবহার করে।(সহীহ বোখারী-১৫৯,সহীহ মুসলিম-২৩৭)
ইবনুল কাইয়্যুম রাহ বলেন, শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল উভয় কালে ঢিলা ব্যবহার করা যাবে। এর উপর সমস্ত উলামায়ে কেরাম একমত।(এগাছুল-লাহফান-১/১৫১)
ঢিলা কয়বার ব্যবহার করা হবে,এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে।কেউ বলেন,উদ্দেশ্য হল পরিস্কার সুতরাং একটি ঢিলা দ্বারা পরিস্কার করে নিলেই সেটা যথেষ্ট হয়ে যাবে।কেউ বলেন,তিনটি ঢিলা ব্যবহার করা পবিত্রতা অর্জনের জন্য শর্ত। যেমন হযরত সালমান ফারসি রাযি থেকে বর্ণিত,
عن سلمان الفارسي رضي الله عنه قال : ( نهانا النبي صلى الله عليه وسلم أن نستنجي بأقل من ثلاثة أحجار )
তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাদেরকে তিনটি ঢিলার চেয়ে কম ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।(সহীহ মুসলিম-২৬২)
তবে পানি ব্যবহার করে পবিত্রতা অরজন করাই উত্তম। হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أَنَس بْن مَالِكٍ رضي الله عنه قال : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْخَلاءَ أَحْمِلُ أَنَا وَغُلامٌ مَعِي نَحْوِي إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ ، فَيَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ .
যখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বাথরুমে প্রবেশ করতেন,আমি এবং আমার সাথের একটি ছেলে আমরা পানির পাত্রকে বহন করে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্য নিয়ে যেতাম।রাসূলুল্লাহ সাঃ পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতেন।(সহীহ মুসলিম-২৭১)
ইবনে কুদামা রাহ বলেন,
" وإن أراد الاقتصار على أحدهما فالماء أفضل ; لما روينا من الحديث ; ولأنه يطهر المحل , ويزيل العين والأثر , وهو أبلغ في التنظيف
যদি কেউ দু'টির কোনো একটিকে নির্দিষ্টকরে ব্যবহার করতে চায়,তবে উত্তম হল পানি ব্যবহার করা।কেননা পানি মহলকে পবিত্র করে,নাজাসত ও তার আছরকে দূর করে এবং পানি পবিত্রতা অর্জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।(আল-মুগনি-১/২০৬)
কেউ যদি শুধুমাত্র ঢিলা ব্যবহার করতে চায় তবে সেটাও জায়েয রয়েছে।কেননা এর উপর সাহাবাগণের ইজমা রয়েছে। ঢিলা এবং পানিকে একসাথে ব্যবহার করা,এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বিদআত বলেন।এবং কেউ কেউ উত্তম বলেন। ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যায় বর্ণিত রয়েছে, মাঠির ঢিলা ব্যবহার করে অতপর পানি ব্যবহার করে পবিত্রতা অর্জন করা উত্তম।তবে শুধুমাত্র ঢিলা বা টিস্যু দ্বারাও পবিত্রতা অর্জন করা যাবে। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-৫/২৯১)