আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
87 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
(হয়তো লেখাটা বড়ো হয়ে গেছে,কিন্তু প্রশ্ন করার জন্য উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিল, প্লিজ উত্তর টা দিয়েন শ্রদ্ধেয় উস্তায,উত্তর টা পাওয়া আমার জন্য অনেক প্রয়োজনীয়)

আমি একজন দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার পর আল্লাহর দয়ায় দীনে ফেরা একজন মেয়ে, আমি আগে নামাজ রোজা পর্দা কোনো কিছুই করতাম না ২,৩ বছর হলো দ্বীনের বুঝ পেয়েছি আল্লাহর দয়ায়,

আর আমার পরিবার সম্পর্কে বলি,আমার পরিবারে কেও নামাজ পড়ে না,এমন কি আমি নামাজ পড়লে,কোরআন পড়লে কথা শোনায়, বাকা চোখে দেখে,আমি পর্দা করার চেষ্টা করি,গীবত,ছেলেদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি তাই ওনারা বলেন আমি নাকি পাগল হয়ে গেছি,এমন করলে কক্ষনও বিয়ে হবে না,যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে,পর্দা করার জন্য মারও খেয়েছি অনেক বার,তবুও ছাড়িনি আলহামদুলিল্লাহ্,
অনেক কটু কথা নির্যাতন সহ্য করে এসেছি,কিন্তু আমার বিয়ের ক্ষেত্রে এসে সমস্যা টা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাকি সকল দ্বীনে ফেরা বোনের মতো আমিও চাই একজন দীনদার জীবনসঙ্গী, কিন্তু ওনারা সেটা চান না, ওনারা নামাজ ও পড়ে না এমন কারোর সাথে বিয়ে দিতে চান, ওনারা দীনদার কারোর সাথে আমার বিয়ে দিতে চাই না, আমি তাদের অনেক বলেছি, আমি দীনদার এর কথাও বলিনি,এটুকু বলেছি অন্তত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এমন কথাও বিয়ে দাও,কিন্তু বহু বার বলার পরেও,তারা কোনো গুরুপ্ত দেই না।
তাদের ধারণা ৫ ওয়াক্ত নামাজী কাওকে বিয়ে করলে কাজ করে খাওয়াতে পারব না,তারা যাকে পাই আমাকে দেখানোর জন্য নিয়ে আসে,আমার ছবি তুলে সবাইকে দেই,আমি বারণ করার পরও জোর করে।

আর আমার আগে আমার ছোট বোনের বিয়ে হওয়ায় আমাকে অনেক বোঝা মনে করে।

আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এমন কাওকে ছাড়া বিয়ে করব না বলাই, তারা আমার ওপর রাগ দেখায়, ঠিক মত কথা বলেনা,এমন কি মারে আমাকে,অনেক কটু কথা শোনায়,যা আমি লিখতেও পারবো না, আমার এটুকুই দোস যে আমি নামাজী(দীনদার তো বোলিইনি তাতেই) কাওকে ছাড়া বিয়ে করব না বলেছি। আমি আইওএম এ ক্লাস করি,ইসলামিক বই পড়ি এটার জন্য অনেক কথা শোনায়,বলেছে বইগুলো সব পুড়িয়ে দেবে,আর মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেবে। আর আজ আমার সব বই গুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে, প্রতিটা বই এ কুরআনের আয়াত ছিল, আর একটা কুরআনের তাফসীর ও ছিল,আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। দিন দিন তাদের নির্যাতন বেড়েই চলেছে।

আর কিছু বলতে গেলে, আমি যেতেতু কালো তাই কয়েক জন নামাজী ছেলে আমাকে দেখতে এসেও পছন্দ করেনি,তাই এটা নিয়েও কথা শোনায়,যে তোকে কই তোর নামাজ পড়া ছেলে বিয়ে করলো না ?  এতমবস্তাই আমি কিছুই বলতে পারিনা।

আবার তারা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিতে চাই, বিয়েতে যা যা করা হারাম সেই সব কিছু করতে চাই, আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে কথা শোনায় গায়ে হাত তোলে,বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা তাই বলে। দিন দিন তাদের নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে,আমি আর নিতে পারছি না।(আমার আর আমার পরিবারের দোষ প্রকাশ করার উদ্দেশ্য না, প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি,যেনো বুঝিয়ে বলতে পারি)

এখনও তারা নামাজ টাও পড়েনা এমন কারোর কাছে বিয়ে দিতে চাইছে, মোটা টাকার যৌতুক দিয়ে,হারাম গান বাজনা,বিয়ে তে যা যা হারাম আছে সেই সব কিছু করে।

শ্রদ্ধেয় উস্তায দয়া করে বলুন আমার এতমবস্থাই কি করণীয় ?
আমি কি করবো এমন পরিস্থিতিতে,আমি এটা নিশ্চিত যে সেখানে আমি পর্দা করতে পারব না,এমন কি দীন থেকে ছিটকে পড়ারও সম্ভবনা প্রবল ?

আমি কি তারা যেমনটা চাই তেমন কারোর সাথে বিয়ে করে নিবো ? নাকি তাদের বিরোধিতা করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবো একজন দীনদার কারোর জন্য ?
আমি যে খুব ভয় করি বেদ্বীন কাওকে বিয়ে করে হেদায়েত হারিয়ে ফেলার
আমার কি করা উচিত প্লিজ বলুন

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তা'আলা মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা এবং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।তাদের অবাধ্য হওয়াকে হারাম ঘোষনা দিয়েছেন।এ বিষয়ে সমস্ত উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করে থাকেন।

মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী করা যাবেনা।
তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে।
তারা কষ্ট পায়,এমন কাজ কখনোও করা যাবেনা।

তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)

আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।(সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)

পিতা মাতার বৈধ বিধান তরক করলে গোনাহ হবে।

তবে শরীয়ত বহির্ভূত কোনো আদেশ করলে পিতা মাতা সহ কারো আদেশকে মান্য করা যাবে না।কেননা হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।

ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ

আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)
,
চার মাযহাবের গ্রহণযোগ্য ফেকহী গ্রন্থ 'আল-মা'সুআতুল ফেকহীয়্যায়(২৮/৩২৭)' বর্ণিত রয়েছে,

"طاعة المخلوقين - ممّن تجب طاعتهم – كالوالدين ، والزّوج ، وولاة الأمر : فإنّ وجوب طاعتهم مقيّد بأن لا يكون في معصية ، إذ لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق" انتهى

শরীয়ত কর্তৃক যাদের বিধিনিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।যেমনঃ মাতাপিতা,স্বামী,এবং রাষ্ট্রীয় প্রধান বা তাদের আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ।তাদের বিধিনিষেধ আমলে নেয়া তখনই ওয়াজিব যখন তা শরীয়ত বিরোধী হবে না।কেননা 'সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীতে কোনো সৃষ্টজীবের অনুসরণ করা যায় না'(মর্মে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে)

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহঃ লিখেন,

ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، وهذا فيما فيه منفعة لهما ولا ضرر ، فإن شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا

গোনাহের কাজ ব্যতীত মুবাহ তথা বৈধ কাজে
মাতা পিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।যদি তার ফাসিকও হয়।এটা তখন যখন তাতে মাতাপিতার ফায়দা থাকবে,এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।যদি সন্তানের উপর কষ্টদায়ক হয় তবে ক্ষতিকারক না হয়, তাহলে তখন মাতাপিতার আদেশ মান্য করা ওয়াজিব নয়।(আল-ফাতাওয়াল কুবরা-৫/৩৮১)

★মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।
(১) তাদের আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে।কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না।এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।
(২)যে কাজের আদেশ তারা দিবেন,এতে তাদের ফায়দা থাকতে হবে,বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।
(৩)যে কাজের আদেশ দিচ্ছেন,তা তাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

সুতরাং যদি সন্তানের কষ্ট লাগবের জন্য তারা আদেশ দিয়ে থাকেন,তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/1707

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে পরামর্শঃ-
আপনি প্রতিনিয়ত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন।
পরিস্থিতি আপনার অনুকুলে যেনো আসে,বাবা মা যেনো আপনার কথার গুরুত্ব দিয়ে দ্বীনদার পাত্রের সাথে বিবাহ দেয়,সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চালিয়ে যাবেন।

নিজের পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে আপনার বাবা মাকে আপনার কথার গুরুত্ব বুঝাবেন।

পাশাপাশি আপাতত নিজের সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকতে পারেন।

এরপরেও আপনার বাবা মা আপনাকে জোড় করে বিবাহ দিলে সেক্ষেত্রে পাত্র দেখার সময়েই আপনি পাত্রকে বলবেন যে তার পরিবারে গিয়ে পূর্ণ পর্দা ও পূর্ণ দ্বীন মানার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

যেভাবেই হোক,এই শর্তে তাকে রাজী করাবেন।

তাহলে ইনশাআল্লাহ আর কোনো সমস্যা হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...