আসসালামু আলাইকুম।
আমি নিচের লেখাটি "সুদ হরাম কর্জে হাসানোর সমাধান" বই থেকে পড়েছি। লেখক- মোহাইমিন হক পাটোয়ারীর। ওস্তাদজী আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে কর্জে হাসানা ও আরিয়াহ বা ধার সম্পর্কে যেই সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং এর মালিকানা সম্পর্কে যেভাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে এটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
(১.কর্জে হাসানা হিসেবে টাকা (যেকোনো প্রকারের মুদ্রা) কিংবা বস্তু/সম্পদ যেকোনোটা দেওয়া যাবে।
অপরদিকে ধার হিসেবে কেবল বস্তু বা সম্পদ দিতে পারবেন। মুদ্রা আরিয়াহ হয় না। তাই যেকোনো প্রকারের মুদ্রা ধার দিলেই সেটা কর্জে হাসানা বা অন্য কোনো প্রজাতির। ঋণ হবে, আরিয়াহ হবে না।
২.মালিকানা: কর্জে হাসানার ক্ষেত্রে বস্তুর মালিকানা পরিবর্তন হয়ে যায়। যে কর্জ নিল, সে সম্পদের মালিক হয়ে যায়। ফলে সে তা অন্যত্র বিক্রি করতে পারে, হেবা করতে পারে ইত্যাদি। তাই যে জিনিসটা কর্জে হাসানা হিসেবে দেওয়া হলো, সেটার মূল বাকি রেখে ব্যবহার করা আবশ্যক না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-যদি কেউ তাঁর বিয়ের গয়না কর্জে হাসানা হিসেবে দেয়, তাহলে যে কর্জে হাসানা নিল, সে এই গয়নার মালিক হয়ে যাবে এবং যেমন করে খুশি বিক্রি ও ব্যবহার করতে পারবে। সে গয়না গলিয়ে সোনার বার বানাতে পারে কিংবা বিক্রি করে টাকা ব্যবহার করতে পারে। গয়নার আসল ডিজাইন ধরে রাখতে সে বাধ্য না, যেহেতু সে এখন এটার মালিক।
অপরদিকে আরিয়াহ বা ধারের ক্ষেত্রে বস্তুর মালিকানার পরিবর্তন হয় না। ফলে যা ধার দেওয়া হলো, মূল বাকি রেখে শুধু উপকার লাভের সুযোগ পাওয়া যায়। যেমন: কেউ একটি জামা ধার দিলে তা শুধু ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু এই জামা বিক্রি করে দেওয়া যাবে না।
৩.হুবহু ফেরত: কর্জে হাসানায় যে বস্তুটি কর্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে, হুবহু সে বস্তুটি ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক নয়। অনুরূপ গুণাবলির একই জাতীয় আরেকটি বস্তু ফিরিয়ে দিলেই হবে। অর্থাৎ আপনার বিয়ের গয়না কর্জে হাসানা দেওয়ার সময় এই শর্ত দিতে পারেন যে, একই পরিমাণ সোনার একই রকম ডিজাইনের গহনা দিতে হবে। তবে এটা কখনোই বাস্তবসম্মত না যে, দুই কারিগরের ডিজাইন বা একই লোকের দুই ডিজাইন একদম হুবহু একই হবে আর কর্জে হাসানার ক্ষেত্রে একেবারে নিখুঁত ও হুবহু কপি ফেরত চাওয়ার কোনো সুযোগও নেই।
তবে আরিয়াহ বা ধারের ক্ষেত্রে যে বস্তুটি ধার নেওয়া হয়েছে, হুবহু সেই বস্তুটিই
ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক। ধরুন, এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে কাজের সুবিধার জন্য এক মাসের জন্য তার মোটরসাইকেল আরিয়াহ দিয়েছে। আরিয়াহ নেওয়া বন্ধুটি সেই মোটরসাইকেল থেকে উপকার নিতে পারবে, অর্থাৎ চালাতে পারবে কিংবা রাইড শেয়ার করে আয় করতে পারবে, কিন্তু সেই মোটরসাইকেলটি অক্ষত অবস্থায় কাজ শেষে ফেরত দিতে হবে। ধার নেওয়া মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিয়ে হুবহু মডেলের আরেকটা কিনে দিলে হবে না। যেটা নেওয়া হয়েছে, সেটাই আমানতদারিতার সাথে। ব্যবহার করে ফেরত দিতে হবে।
৪.আমানত ও জরিমানা: কর্জে হাসানার ক্ষেত্রে প্রদেয় বস্তুটি আমানত নয়। কারণ, এর মালিকানা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। তাই সব অবস্থাতেই সকল ঝুঁকি কর্জগ্রহীতা বহন করবে। কর্জগ্রহীতা বস্তুটি হারিয়ে ফেললেও তাকে কর্জ ফেরত দিতে হবে, কর্মগ্রহীতার কাছে থাকা অবস্থায় নষ্ট হয়ে গেলেও তাকে কর্জ ফেরত দিতে হবে।
অর্থাৎ এই হারিয়ে যাওয়া কিংবা নষ্ট হওয়ার কারণে কর্জগ্রহীতা নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাতে তাঁর কর্জের পরিমাণের কোনো পরিবর্তন আসবে না। সময়মতো মূল কর্জ ফেরত দিতে হবে।
আর আরিয়াহ বা ধারের ক্ষেত্রে প্রদেয় বস্তুটি আমানত। ধারগ্রহীতার কোনো ধরনের সীমালঙ্ঘন না পাওয়া গেলে বা বস্তুটি নষ্ট/ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যদি ধারগ্রহীতার কোনো দোষ/ত্রুটি/দায় পাওয়া না যায়, তাহলে ধারগ্রহীতার কাছে থাকা অবস্থায় বস্তুটি নষ্ট/ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ধারগ্রহীতাকে কোনো ধরনের জরিমানা দিতে হবে না। কিন্তু, যদি বস্তুটি ধারগ্রহীতার কাছে থাকা অবস্থায় নষ্ট/ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য ধারগ্রহীতার কোনো দোষ/ত্রুটি/দায় পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে মূল বস্তুটির পরিবর্তে হুবহু মানের কোনো কপি ফেরত দিতে হবে অথবা মূল বস্তু বা এর কোনো হুবহু মানের কপি পাওয়া না গেলে সেটার পরিবর্তে সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে যিনি ধার দিলেন, তিনি মাফ করে দিলে ভিন্ন কথা।)