আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
71 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম।

যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায়,এরপর স্ত্রীর মনে হয় সেখানে স্বামীর হক ঠিকঠাক পালন করতে পারেনাই & জবানের দ্বারা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে এক্ষেত্রে উক্ত স্বামীর কাছে ক্ষমা চাইলেও যদি ক্ষমা না করে তাহলে তাওবা করলেও তো সমাধান হচ্ছেনা,আর অতীতের হক তো আদায়ও সম্ভব না।

এক্ষেত্রে কি কোন কাফফারা আছে?/স্ত্রী কি করতে পারে যাতে বান্দার হকের জন্যে পাকড়াও না হতে হয়?

(স্বামীও যথাযথ হক আদায় করতে পারেনি,কিন্তু আল্লহর জন্যে মাফ করে দেয়ার নিয়ত করেছে।)

আর জবানের হেফাজতের জন্যে কি করনীয়?

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/62174?show=62204#a62204 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

ক্ষমাশীল মানুষ সর্বোত্তম ব্যবহারকারী ও ধৈর্যশীল। যিনি উদারপ্রকৃতির, তিনিই ক্ষমাশীল। যাদের এ ধরনের গুণাগুণ রয়েছে, তারা আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামতপ্রাপ্ত। ক্ষমাকারী ধৈর্যবান ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। যে অন্যকে ক্ষমা করে তাকেও ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সম্বরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)

জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ অন্যের রূঢ় বা কটু কথাবার্তা কিংবা অশোভনীয় আচার-আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকেন। ফলে একে অপরে মতবিরোধ তৈরি হয়। অনেক সময় মতবিরোধ ও মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে পরস্পরের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে আদেশ দিয়েছেন, যেন একে-অপরকে ক্ষমা করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

إِن تُبْدُوا خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ أَوْ تَعْفُوا عَن سُوءٍ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِيرًا

 ‘যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান। ’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১৪৯)

ক্ষমাকারীকে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে পুরস্কার দেবেন। পরস্পরের মধ্যে বিরোধ নিষ্পন্নকারীও আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا ۖ فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ

 ‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না। ’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৪০)

ক্ষমা করলে কারও মর্যাদা কমে না। বরং বহু গুণে ক্ষমাশীল ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন করেছেন, সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে, তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। (মুসলিম, হাদিস: ২৫৮৮)

ইসলামের দৃষ্টিতে যবানের হেফাজত:-কিছু মানবিক উত্তম গুণের সমন্বিত একটি রূপকে ইসলামের দৃষ্টিতে যবানের হেফাজত বা বাক সংযম বলা হয়। এবার সে সব গুণাবলীর কিছু জেনে নেই: ১.কথা বলায় সাবধানতা: হযরত বিলাল বিন হারিস (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ

(সা:) বলেছেন -মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির এমন ও কথা বলে যার কল্যাণের কথা সে ধারনাই করতে পারেনা অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তার সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন । আবার মানুষ আল্লাহর অসুন্তুষ্টির এমন ও কথা বলে যার অকল্যাণের কথা সে ধারনাই করতে পারেনা অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তার অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন (তিরমিযি,মুয়াত্তা মালেক)। হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ(সা:)বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে (বুখারী ও মুসলিম)। অন্য হাদিসে হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত । তিনি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছেন: কোন বান্দা ভাল-মন্দ বিচার না করে এমন কোন কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে পদস্খলিত হয়ে জাহান্নামের এতদূর গভীরে চলে যায় , যা পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দূরত্বের সমান (বুখারী) ।

২. মিষ্টভাষী হওয়া: হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: নিশ্চয় জান্নাতে বালাখানা থাকবে , যার ভেতরের সব কিছু বাহির থেকে দেখা যাবে।একজন বেদুঈন দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ঐ বালাখানা কাদের জন্য হবে ? রাসূলুল্লাাহ (সা:) বললেন- যারা মিষ্টবাষী হবে, অভাবীদের আহার করাবে, রাতের গভীরে নামাজ পড়ে (তরিমিযী)।

৩. নাজাতের পথ বাকসংযম: হযরত উকবা ইব্ন আমের (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নাজাত পাওয়ার উপায় কি ? তিনি জবাব দিলেন: তোমার কথাবার্তা সংযত রাখ, তোমার ঘরকে প্রশস্ত কর (মেহমানদারী করা) এবং তোমার কৃত অপরাধের জন্য আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি কর (তিরমিযী) । হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: সকালে মানুষ যখন ঘুম থেকে উঠে, তখন তার দেহের সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ যিহবাকে অনুনয়-বিনয় করে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, আমরা তোমার সাথে সম্পৃক্ত । তুমি যদি সঠিক পথে থাক, আমরা ও সঠিক পথে থাকতে পারি । আর তুমি যদি বাঁকা পথে চল, তাহলে আমরা ও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য (তিরমিযী) ।

৪. সর্বোত্তম মুসলিম: এ বিষয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি,যার হাত ও মুখ থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে (বুখারী) ।

৫. জান্নাতের জিম্মাাদারী: যবানের হেফাজত এত বড় আমল যার বিনিময় স্বরুপ রাসূলুল্লাহ (সা:) জান্নাতের জিম্মাদার হয়ে যান, হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দু‘চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু , অর্থাৎ যিহবা এবংতার দু‘উরুর মধ্যবর্তী তথা লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো (বুখারী) । যবানের হেফাজত না করার কারণে জাহান্নাম ঠিকানা হতে পারে , যেমনি ভাবে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত মুয়ায ইব্ন যাবাল (রা:) একবার বললেন,হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! আমরা যা বলি তা নিয়ে কি আমাদের পাকড়াও করা হবে ? তখন রাসূলুল্লাহ (সা:)বললেন, হে মুয়ায যবানের হেফাজত না করার কারণে মানুষকে উপর করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে (তিরমিযী,ইব্ন মাজাহ) ।

৬. মিথ্যা পরিহার করা: হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: যখন কোন বান্দা মিথ্যা বলে তখন এর দুর্গন্ধে ফেরেস্তারা তার নিকট থেকে এক মাইল দূরে চলে যায় (তিরমিযী)। অন্য হাদিসে হযরত মুয়াবিয়া ইব্ন হাইদাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছি: দুর্ভোগ তার জন্য, যে লোকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা (গল্প বানিয়ে ) বলে। দুর্ভোগ তার জন্য, দুর্ভোগ তার জন্য (আবু দাউদ)।

৭. দোষ চর্চা পরিহার করা: আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুর‘আনে ইরশাদ করেছেন “তোমরা একে অপরের গীবত (পরনিন্দা) করনা । তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? তোমরাতো তা অপছন্দ করে থাক । আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক তওবা কবুলকারী অসীম দয়ালু (সূরা হুজরাত:১২)। রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, গীবত (পরনিন্দা) যিনার (ব্যভিচার) চেয়ে জগন্য অপরাধ(বায়হাকী)

সর্বত্র যবানের হেফাজত করা মূমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। বাসায়, পরিবার, পরিজনের সাথে, ছাত্র -শিক্ষকের সাথে, মালিক- কর্মচারীদের সাথে, নেতা-কর্মীদের সাথে । এক কথায় প্রত্যেকে তার অধীনস্থদের সাথে। তাই আসুন ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির উদ্দেশ্যে কম কথা বলি এবং যবানের হেফোজতের জন্য প্রাণ পনে সর্বদায় চেষ্টা করি। আল্লাহপাক তৌফিক দান করুন।

 প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার জন্য উচিত যদি উক্ত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয় তাহলে আপনি নিজেই তার নিকট বিনয়ের সাথে নিজের অতীত ভুলের কারণে ক্ষমা চাইবেন। প্রয়োজনে তাকে হাদিয়া বা গিফট দিবেন যেন তিনি আপনাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন। এমতাস্থায় তার উচিত আপনাকে ক্ষমা করা। এরপরও যদি সে ক্ষমা না করে তাহলে আপনি আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশী বেশী ইস্তেগফার ও ক্ষমা চাইবেন, আশা করা যায় তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ। কিন্তু প্রথমত বান্দার নিকট মাফ নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার দায়িত্ব ছিল ক্ষমা চাওয়া। যাকে কষ্ট দিয়েছেন তার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। সেই সাথে তওবা করা। এর দ্বারাই ইনশাআল্লাহ আপনার দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বাকি সর্বদা চেষ্টা করা উক্ত ব্যক্তিকে খুশি করতে চেষ্টা করা। তারপরও যদি সে ক্ষমা না করে, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন। কারণ আপনার সাধ্যে যা ছিল তা আপনি করেছেন। সাধ্যের বাইরে কিছু করার জন্য শরীয়ত ব্যক্তিকে বাধ্য করে না। জবান হেফাজতের আমল উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by
আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম।
যাদের হক নষ্ট হয়েছে তাদের নিয়তে দান/সদকা করা যাবে কোন রকম সওয়াবের আশা ছাড়াই?
তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ এর সুযোগ না থাকলে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...