আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
42 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (11 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

আমার দুইটি প্রশ্ন আছে -

১। ব্যাংকে ডিপোজিট করে কিছু টাকা জমানো হয়েছিলো। ডিপোজিট ভাঙ্গার পর কিছু মুনাফা দেওয়া হয়েছিলো, যা মূলত সুদ।
টাকাগুলো আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই, গরিব-মিসকিনদের দেওয়া হচ্ছে। সওয়াবের নিয়ত না করে।
আমার কিছু আত্মীয় আছে, যাদের ইনকাম নেই। পর নির্ভরশীল বা ইনকাম থাকলেও তা এতো কম যে খুবই কষ্ট দিন কাটাতে হচ্ছে। উনাদের কী দেওয়া যাবে টাকাগুলো?

২। অন্তরের যিনা ব্যাপারটা কখন ঘটে? আর ঘটলে সেটা কী সরাসরি যিনা'র অপরাধ এর মত? মানে, অবিবাহিতরা তো বিয়ে সংক্রান্ত অনেককিছু কল্পনা করে। এগুলো কী অন্তরের যিনা হিসেবে ধরা হয়?
অথবা, আমরা তো মাঝেমধ্যে কল্পনায় এমন অনেককিছু ভেবে ফেলি, যা আসলে অন্তরের গুনাহ হয়ে যায়! এরকম যদি কারো হয়, সেটা কি সরাসরি যারা যিনা করার মতো হয়ে গেলো?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: ٥١] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: ١٧٢] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ "

 তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা'আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।" (সূরা আল মু'মিনূন ২৩ঃ ৫১)তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও”— (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু'আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?”(সহীহ মুসলিম-১০১৫)

হারাম টাকার বিধান হল, তা প্রাথমিকভাবে মূল মালিকের কাছে ফেরত দেয়া।নতুবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের মাঝে সদকা করে দেয়া।

 من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء
 (معارف السنن، كتاب الطهارة، باب ما جاء لا تقبل صلاة بغير طهور-1/34، الفتاوى الشامية، باب البيع الفاسد، مطلب فى من ورث مالا حراما-7/301، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/554، بذل المجهود، كتاب الطهارة، باب فرض الوضوء- 1/37

যদি কারো নিকট কোনো হারাম মাল থাকে,তাহলে ঐ মালকে তার মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলে সেটি ফকিরদেরকে সদকাহ করে দিতে হবে।
(মাআরিফুস সুন্নাহ ১/৩৪)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
যেসব আত্মীয়কে যাকাত দেয়া যায়না,তাদেরকে এই সুদের টাকাও দেয়া যাবেনা।

যেসব আত্মীয়কে যাকাত দেয়া যায়,তাদেরকে এই সুদের টাকা দেয়া যাবে।

কোন কোন আত্মীয়কে যাকাত দেয়া যায়না,এ সংক্রান্ত জানুনঃ- 

আপনার আত্মীয়দের মধ্যে যারা যাকাত গ্রহনের হকদার,তাদেরকে আপনি উক্ত সুদের টাকা ছওয়াবের নিয়ত ছাড়া দিতে পারেন।

(০২)
মনে মনে যেনার আকাঙ্খা করা,অশ্লীল চিন্তা ভাবনা অন্তরে নিয়ে আসা,নারীকে নিয়ে মনের মধ্যে কামনা বাসনা করা এগুলো অন্তরের যেনার অন্তর্ভুক্ত। 

তবে এর শাস্তি সরাসরি যিনা'র অপরাধ এর শাস্তির মতো নয়।

https://ifatwa.info/86069/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত, নবীজী সাঃ বলেনঃ

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : " ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺘﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﺑﻦ ﺁﺩﻡ ﺣﻈﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺰﻧﺎ ، ﺃﺩﺭﻙ ﺫﻟﻚ ﻻ ﻣﺤﺎﻟﺔ ، ﻓﺰﻧﺎ ﺍﻟﻌﻴﻦ ﺍﻟﻨﻈﺮ ، ﻭﺯﻧﺎ ﺍﻟﻠﺴﺎﻥ ﺍﻟﻤﻨﻄﻖ ، ﻭﺍﻟﻨﻔﺲ ﺗﻤﻨَّﻰ ﻭﺗﺸﺘﻬﻲ ، ﻭﺍﻟﻔﺮْﺝ ﻳﺼﺪﻕ ﺫﻟﻚ ﻛﻠﻪ ﻭﻳﻜﺬﺑﻪ "

নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা লাওহে মাহফুযে আদম সন্তানদের জন্য (নিম্নোক্ত কারণে) যিনার একটা অংশ লিখে রেখেছেন,যার শাস্তি সে অবশ্যই উপভোগ করবে।চোখের যিনা হচ্ছে বেগানা নারীর দিকে দৃষ্টি দেওয়া।জবানের যিনা হচ্ছে উক্ত মহিলার সাথে কথা বলা।অন্তরের যিনা হচ্ছে মনে মনে যিনার আশা-আকাঙ্খা করা।আর লজ্জাস্থান কখনো যিনাকে বাস্তবায়িত করে আবার কখনো করে না।(সহীহ বুখারী-৫৮৮৯; সহীহ মুসলিম-২৬৫৭;মিরকাত-৮৬;)

মোল্লা আলী ক্বারী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় বলেনঃ

وفيه دلالة على أن التمني إذا استقر في الباطن، وأصر صاحبه عليه، ولم يدفعه يسمى زنا، فيكون معصية، ويترتب عليه عقوبة، ولو لم يعمل فتأمل.

এত্থেকে বুঝা গেলো যদি যিনার আশা-আখাঙ্কা মনের গভীরে স্থান করে নেয়,এবং সে নিয়মিত উক্ত চিন্তাকে মনের ভিতর লালন-পালন করে, বিসর্জন দেয়না, তাহলে এটাও যিনা বলে সাব্যস্ত হবে,এবং গুনাহ হবে। এ জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে,যদিও সে তার উক্ত চিন্তাকে বাস্তবায়িত করেনি। (মিরকাত ৮৬ হাদীসের আলোচনা দ্রষ্টব্য) এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/510

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/4094


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...