আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
68 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (11 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম।
আমি একজন বিবাহিত নারী। স্বামীর চাকরি সূত্রে স্বামী এবং এক সন্তান নিয়ে নিজের জেলা থেকে দূরবর্তী জেলায় বাসা ভাড়া থাকি। আমার কিছু প্রশ্ন -

১.একজন নারী হিসেবে আমার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া,রমজানের রোজা রাখা,স্বামীর আনুগত্য করা, এবং লজ্জা স্থানের হেফাজত করা ছাড়াও আর কি কি করতে হবে যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সাহায্য করবে?
২.বাসায় থেকে আমি কিভাবে আমার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবো? কোন কোন আত্মীয়-স্বজনের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং কতদিন পর পর যোগাযোগ করতে হবে?
৩.সাধারণত আমার কারো সাথে ফোনে কথা বলতে ভালো লাগে না। মানুষের সাথে অপ্রয়োজনে ফোনে বা সরাসরি কথাবার্তা বললেই সারাদিন সেই বিষয়গুলো আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক করে। এক্ষেত্রে আমি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ফজিলত মাথায় রেখে তাদের সাথে কথা বলি যদিও আমার আসলে মন থেকে বলতে ইচ্ছা করে না। আমি তাদের সাথে ফোনে কথা না বললে কি আল্লাহ আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন??
৪.কেন জানি কোন প্রয়োজন ছাড়া মানুষের সাথে কথাবার্তা বলা  আমার কাছে সময়ের অপচয় মনে হয়। আবার অনেকে আছে যাদের সাথে যোগাযোগ না করলে কষ্ট পায় অথবা পরবর্তীতে আমার সাথে রাগারাগি হতে পারে ঝামেলা হতে পারে সেই ভয় তাদের সাথে যোগাযোগ করি। এক্ষেত্রে কি আমার আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য না হয়ে মানুষের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য হবে??
প্লিজ শায়খ,আমাকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে উপকার করবেন আমি খুবই পেরেশানের মধ্যে দিন কাটাই এইসব ভেবে।
closed

1 Answer

0 votes
by (62,670 points)
selected by
 
Best answer

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/4223/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মূল কথা হলো-‘পরস্পরের সঙ্গে মেহেরবানী করা ও অনুগ্রহ করা।’

আত্মীয়তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেহেরবাণী ও অনুগ্রহ সম্পর্কে আল্লামা কুরতবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি যথার্থই বলেছেন, রাহেম বা আত্মীয়তার সর্ম্পক দুই ধরনের হয়-

>> সাধারণ সম্পর্কএ সম্পর্কটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। যাকে বলা হয় দ্বীনি সম্পর্ক। একজন মানুষের সঙ্গে ঈমানি বন্ধনের কারণে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। ঈমানদারদের সঙ্গে ভালবাসা রাখা। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা। সব সময় তাদের কল্যাণে কাজ করা।


তাদের ক্ষতি হয় এমন কাজকে তাদের থেকে প্রতিহত করা। তাদের জন্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। লেন-দেন ও যাবতীয় ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করা এবং তাদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ তাদের হকগুলো আদায় করা।

যেমন- অসুস্থদের দেখতে যাওয়া; তাদের হকসমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা; তাদের গোসল দেয়া; জানাযার নামাজ আদায় করা; দাফন-কাফন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা।

,

>> বিশেষ সম্পর্কমাতা-পিতা উভয় দিক থেকে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়তা রক্ষা করা। তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

যেমন- পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা।

আর যখন অনেক আত্মীয়ের অধিকার একত্রিত হয়; তখন নিকটাত্মীয় হওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাবে। পর্যায়ক্রমে তারপর যেটি তুলনামূলক কাছের সেটি অগ্রাধিকার পাবে।

,

নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ধরন আল্লাম ইবনু আবি জামরাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

>> আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক সময় মালামাল ও ধন-সম্পদ দ্বারা হয়;

>> প্রয়োজনের সময় সাহায্য করার দ্বারা হয়;

>> ক্ষতিকে প্রতিহত করার মাধ্যমে হয়;

>> পরস্পরের সঙ্গে হাসি-খুশি ও ব্যবহারের মাধ্যমে হয়;

>> দোয়া করার দ্বারাও হয়;

>> সাধ্যানুযায়ী কারো কাছে কল্যাণকর কিছু পৌঁছানো দ্বারাও হয়;

>> সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী ক্ষতি থেকে বাঁচানোর দ্বারাও হয় এবং তাদের উপকার করার দ্বারাও হয়।

,

সুতরাং সময় সুযোগ তেমন না মিললে শুধু ফোনে কথা বলেও আত্মীয়তা সম্পর্ক ঠিক রাখা যাবে।

তবে সময় সুযোগ হলে মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও নিকটতম আত্মীয়দের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা দরকার।


কেউ যদি মনে মনে কোনো আত্মীয়ের প্রতি বিদ্বেষ না রাখে, কিন্তু সে হয়ত মাসে একবারও তাদেরকে ফোন করেনা, তাদের সাথে ৬ মাসে একবার বা বছরে একবার বা ২-৩ বছর পর একবার দেখা করে তবে সে সম্পর্ক ছিন্নকারীর দলভুক্ত হবে না।

,

এখানে কথা বন্ধ রাখার মাসয়ালা স্পষ্ট করছিঃ

শরীয়তের বিধান হলো কাহারো সাথে শরয়ী ওযর ব্যাতিত  তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা, সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই। (কিতাবুল ফাতওয়া ৬/২১৭)


এটা যদি তাদের সামনা সামনি না হওয়ার কারনে হয়,যে সামনা সামনি,দেখা সাক্ষাৎ  যেহেতু আমাদের  হচ্ছেনা,তাই কথা বলার সুযোগও হচ্ছেনা।

তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই।

তবে দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার পরেও বিনা কারনে কাহারো সাথে কথা বার্তা বলা বন্ধ করে দেওয়া,সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই।


হাদীস শরীফে এসেছে 

عن أبي أیوب رضي اللّٰہ عنہ أن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: لا یحل لمسلم أن یہجر أخاہ فوق ثلاث لیال یلتقیان فیعرض ہذا و یعرض خذت وخیرہما الذي یبدأ بالسلام۔ (رواہ مالک في الموطا ۲؍۹۰۷، صحیح البخاري رقم: ۶۲۳۷، الترغیب و الترہیب رقم: ۴۱۸۹)

যার সারমর্ম হলো কোনো মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সাথে ৩ দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা,সম্পর্ক ছিন্ন রাখা জায়েজ নেই।

,

বিদ্বেষ পোষন না করে এমনিতেই দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হলে কোনো সমস্যা নেই। তবে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খোজ খবর নেওয়া জরুরি।

,

আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, তা হলোঃ 

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح

জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

(বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ১৯-(২৫৫৫), আবূ দাঊদ ১৬৯৬, তিরমিযী ১৯০৯,


হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ " . قَالَ ابْنُ أَبِي عُمَرَ قَالَ سُفْيَانُ يَعْنِي قَاطِعَ رَحِمٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (জুবাইর) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  কর্তনকারী (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী) জান্নাতে যেতে পারবে না। (সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৮), সহীহ আবূ দাউদ (১৪৮৮), বুখারী, মুসলিম।

এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে সম্পর্ক ছিন্ন করাই হলো মূল দোষ।

সম্পর্ক ছিন্ন না করে এমনিতেই যদি দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হয়, এটা কোনো সমস্যা নয়।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!


১. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা, তাহাজ্জুদ, ইশরাক ও আওয়াবীন সালাত আদায় ইত্যাদি করতে পারেন।


২-৪. সময় সুযোগ তেমন না মিললে শুধু ফোনে কথা বলেও আত্মীয়তা সম্পর্ক ঠিক রাখা যাবে। প্রয়োজনে মাসে একবার বা দুই মাসে একবার তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন।

তবে সময় সুযোগ হলে মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও নিকটতম আত্মীয়দের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা দরকার।

কেউ যদি মনে মনে কোনো আত্মীয়ের প্রতি বিদ্বেষ না রাখে, কিন্তু সে হয়ত মাসে একবারও তাদেরকে ফোন করেনা, তাদের সাথে ৬ মাসে একবার বা বছরে একবার বা ২-৩ বছর পর একবার দেখা করে তবে সে সম্পর্ক ছিন্নকারীর দলভুক্ত হবে না।


এখানে কথা বন্ধ রাখার মাসয়ালা স্পষ্ট করছিঃ

শরীয়তের বিধান হলো কাহারো সাথে শরয়ী ওযর ব্যাতিত  তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা, সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই। (কিতাবুল ফাতওয়া ৬/২১৭)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...