আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
67 views
in সালাত(Prayer) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম।

আমি কুরআন শরীফ পড়তে জানি না।তাই আমি এখন কুরআন শরীফ পড়া শিখতে চাই।আমি কয়েক মাস ধরে নামাজ পড়ছি।আগে আমি শুধু সূরা মুখস্ত করে নামাজ পড়তাম। তিলাওয়াত শুদ্ধ না হলে নামাজ হয় না।এই বিষয়টি আমি আগে জানতাম না।তাই ইউটিউব দেখে দেখে তিলাওয়াত একটু শুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এভাবে তিলাওয়াত করতে অনেক কষ্ট হয়। যেহেতু আমি কুরআন শরীফ পড়তে একদম ই জানি না।আবার অনেক সময় ভুল ও হয়।

১) আমি এখন কুরআন শরীফ পড়া শিখতে চাচ্ছি। ইউটিউব দেখে তিলাওয়াত শুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু এভাবে তিলাওয়াত করতে অনেক কষ্ট হয় আর নামাজ পড়তে অনেক সময় লাগে।তাশাহুদ,দরুদ শরীফ, দোয়া মাসূরা পড়তে অনেক সময় লাগে আবার ভুল ও হয়।আবার যেহেতু কুরআন পড়া শিখতে চাচ্ছি তো সব মিলে আমার তেমন সময় হয় না।এ কারণে আগের মতো শুধু মুখস্ত করে নামাজ পড়তে পারব?যাতে কুরআন শরীফ পড়া টা তাড়াতাড়ি শিখতে পারি।

২) আমি যে এতদিন শুদ্ধ তিলাওয়াত ছাড়া নামাজ পড়েছি বা কুরআন শরীফ না শিখা পর্যন্ত পড়ব এগুলো কি কবুল হবে? আবার এতে গুনাহ হবে না তো?এতদিন যে শুদ্ধ তিলাওয়াত ছাড়া নামাজ পড়েছি এর জন্য আমার গুনাহ হয়ে থাকলে কি করবো?

৩) সুবহানাল্লাহ,আল্লাহু আকবর এগুলো কি বলতে পারবো?নাকি এখন বলা বাদ দিব কুরআন শিখে তারপর বলবো?শুদ্ধ তিলাওয়াত ছাড়া দোয়া করলে কি দোয়া কবুল হয়?এতদিন অনেক দোয়া করা হয়েছিল।

৪) আমার ভাই কুরআন শরীফ পড়তে পারে।আমি ভেবেছি তার কাছে শিখবো।আমি চাইলে অন্য কারো কাছে শিখতে পারতাম।কিন্তু আমি ভেবেছি আমার ভাইয়ের কাছে পড়লে তার সওয়াব হবে। আমার ভাইয়ের কাছে পড়লে তার সওয়াব হবে এমনটি মনে করে তার কাছে পড়াটা ঠিক হবে? আমার এমনটি মনে করা বা এই নিয়তের কারণে তার সওয়াব হবে?

এখন তাড়াতাড়ি কুরআন শরীফ পড়া শিখার জন্য নামাজ টা আপাতত কিভাবে পড়তে পারি ?একটু পরামর্শ দিলে ভালো হয়।জাযাকুমুল্লাহ খইর।

1 Answer

0 votes
by (58,380 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব,

https://ifatwa.info/103347/  নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

ফরজ নামাজ পড়ার জন্য যতটুকু সূরা-কেরাআত জানা প্রয়োজন ততটুকু পরিমাণ কোরআন শিক্ষা করা ফরজ। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, এর তরজমা ও তাফসীর অধ্যয়ন এবং কোরআন শরীফ হেফজ বা মুখস্থ করা অনেক পূণ্যের কাজ। মুসলিম জাতির যোগ্য ও মেধাবী সদস্যদের পক্ষে আল কোরআন নিয়ে গবেষণা করা একটি অপরিহার্য কর্তব্য। ইসলামী বিধানের আলোকে জীবনযাপন করার জন্যে যতটুকু ইলমে দীন বা কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান শিক্ষা করা দরকার ততটুকু হাসিল করা প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ।

https://www.ifatwa.info/3782   নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,

ইবনে আবেদীন শামী রাহ,জ্ঞান শিক্ষা ফরয সম্পর্কিত একটি মূলনীতি তুলে ধরেন।যাকে আমাদের সামনে আসলে,ভবিষ্যৎ অনেক অস্পষ্টতা দূরবিত হয়ে যাবে ইনশা'আল্লাহ।

তিনি বলেনঃ

وَكُلُّ مَنْ اشْتَغَلَ بِشَيْءٍ يُفْرَضُ عَلَيْهِ عِلْمُهُ وَحُكْمُهُ لِيَمْتَنِعَ عَنْ الْحَرَامِ فِيهِ اهـ

যে বক্তি কোনো জিনিষ বা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করজে, তার উপর উক্ত বিষয় সম্পর্কে ইলম অর্জন করা ফরয।যাতে করে উক্ত বিষয় ও বিষয় সংশ্লিষ্ট সমস্ত হারাম থেকে সে অনায়াসে বেছে থাকতে পারে। (রদ্দুল মুহতার-১/৪২)..................বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/1893   

আপনি জানতে চাচ্ছেন যে, কতোটুকু জ্ঞান অর্জন করাটা ফরয?কী কী জিনিষ এই ফরজ ইলমের অন্তর্ভুক্ত? এবং কোন কোন বিষয়? বা কতটুককু জ্ঞানার্জন করলে কেউ ধরে নিতে পারবে যে,তার ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জিত হয়ে গেছে।

এর উত্তর হচ্ছে, আল্লাহর ফরয হুকুমকে ঠিক ঠিক ভাবে অনুসরণ করতে এবং নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বাঁচতে যত বিষয় সম্পর্কে যতটুকু ইলমের প্রয়োজন ততটুকু ইলম শিক্ষা ফরয।যেমন,নামায আল্লাহর ফরয বিধান,নামায পড়ার জন্য পবিত্রতা অর্জন শর্ত।তাই পবিত্রতার ইলম অর্জন ফরয।ঠিকতেমনি কেরাত ফরয, তাই কেরাত শিক্ষা ফরয।ঈমান আনয়নের জন্য শিরক মুক্ত হয়ে মনেপ্রাণেএকমাত্র আল্লাহকে বিশ্বাস করা ও তার বিধি-বিধান কে মান্য ফরয।তাই এ সম্পর্কীয় ইলম অর্জন ফরয।এবং রোযা আল্লাহর ফরয বিধান।রোযা রাখতে হলে তার করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ পরিমাণ ইলম অর্জন ফরয।অর্থাৎ যতটুকু ইলম হলে রোযাকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়,ততটুকু পরিমাণ ইলম অর্জন ফরয।ইত্যাদি ইত্যাদি।

যেকোনো ভাবেই হোক ফরয সমপরিমাণ ইলম অর্জন করতে হবে। সর্বোত্তম মাধ্যম হল, সরাসরি উস্তাদের নিকট উপস্থিত হয়ে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করা। যদি সরাসরি উস্তাদের নিকট উপস্থিত হওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে তখন ইউটিউবের মাধ্যমে কুরআন শিখার চেষ্টা করতে হবে। ইউটিউবে ভিডিও দেখতে গিয়ে যদি কখনো কোনো হারাম এ্যড চলে আসে, তাহলে সাথে সাথে চোখকে ফিরিয়ে নিতে হবে।এবং অতিদ্রুত স্কিপ করতে হবে।এই এ্যাড আসার কারণে কুরআন শিখাকে পরিত্যাগ করা যাবে না। কেননা জরুরত অনেক জিনিষে শেষ পর্যন্ত রুখসত নিয়ে আসে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

১-২. প্রিয় বোন!  আপনার জন্য  কোরআন তেলাওয়াত অশুদ্ধ হওয়ার কারণে সালাত ত্যাগ করা মোটেই জায়েজ হবে না। আপনার জন্য আবশ্যক হলো যেঅনতিবিলম্বে  ছোট ছোট পাঁচ ছয়টি সূরা  বিশুদ্ধভাবে মুখস্ত করবেন এবং সালাত আদায় করবেন। আপনার সাধ্যানুযায়ী তেলাওয়াত সহিহ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে এবং সালাতও আদায় করতে হবে।  বিষয়টি মোটেও এমন নয় যেআগে কোরআন তেলাওয়াত সহিহ করতে হবে অতপর সালাত আদায় করতে হবে। কারণ, আপনার উপরে নামাজ পড়া যেমন ফরজ ঠিক তেমনি ভাবে একই সময় ফরজ পরিমাণ কোরআন শিক্ষা করাও আবশ্যক।

 বিধায় তেলাওয়াত সহিহ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে এবং সালাতও ত্যাগ করা যাবে না।  সুতরাং আপনি নিয়মিত নামাজ পড়বেন এবং  সাধ্য অনুযায়ী বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করার চেষ্টা করবেন। আশা করি দ্রত আপনার পড়া শুদ্ধ হয়ে যাবে ইশাআল্লাহ।  উত্তম হবে যদি স্থানীয় কোন আলেমা, হাফেজা বা দ্বীনি বোনের কাছ থেকে  তেলাওয়াত শিখেন।  যদি আপনার আশেপাশে পরিচিত এমন কেউ না থাকে এমতাবস্থায় অনলাইনেও  কোরআন শিখতে পারেন। কিন্তু আপনার উপরে নামাজ পড়া যেহেতু ফরজ তাই নামাজ ত্যাগ করা যাবে না। তবে পূর্বে যেসকল নামাজ এমন অশুদ্ধ তেলাওয়াতে পড়া হয়েছে যাতে অর্থ বিক্রিত হয় সেই নামাজগুলো ধীরে ধীরে পুনরায় আনুমানিক হিসেব অনুপাতে কাযা করতে হবে।

৩. জ্বী এজাতীয় তাসবীহ পাঠ করা এবং দোয়া করাও জায়েয আছে। তবে আপনি আপনার অবস্থান থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন বিশুদ্ধ উচ্চারণ করার চেষ্টা করবেন। এরপরও যদি কোন ত্রুটি থাকে আশা করি আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ। তবে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

৪. আপনার ভাইয়ের তেলাওয়াত যদি সহিহ থাকে তাহলে তার নিকট থেকে তেলাওয়াত শিখতে কোন সমস্যা নেই। আপনি তার নিকট থেকে তেলাওয়াত শিখতে পারবেন। আপনার জন্য আবশ্যক হলো যেঅনতিবিলম্বে  ছোট ছোট পাঁচ/ছয়টি সূরা  বিশুদ্ধভাবে মুখস্ত করবেন এবং সালাত আদায় করবেন। সেই সাথে তেলাওয়াত সহিহ করার জন্য ধীরে ধীরে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...