আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
55 views
in পবিত্রতা (Purity) by (1 point)
ঘুমানো- চিৎ হয়ে; কাত হয়ে; হেলান দিয়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেস দিয়ে ঘুমালে যা সরিয়ে ফেললে ঘুমন্ত ব্যক্তি পড়ে যাবে।
ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত,  রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لَيْسَ عَلَى مَنْ نَامَ سَاجِدًا وُضُوءٌ، حَتَّى يَضْطَجِعَ، فَإِنَّهُ إِذَا اضْطَجَعَ، اسْتَرْخَتْ مَفَاصِلُهُ

সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অযু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা, চিৎ বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে]।  (মুসনাদে আহমাদ ২৩১৫ আবু দাউদ ২০২)


এইটা একটু বুঝিয়ে বলবেন কতটুকু ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবে।আর প্রশ্ন হলো সকালে হেলান দিয়ে বসে মাসনূন দোয়া গুলো পড়ার সময় একটু ঝিমুনি আসছিলো, অল্প।এজন্য কি ওযু ভঙ্গ হয়েছে?

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব,

চিত বা কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে নিশ্চিতভাবেই অজু ভেঙে যায় এবং নামাজের জন্য পুনরায় অজু করতে হয়। কিন্তু কেউ যদি চিত বা কাত হয়ে না ঘুমায়, বরং হেলান দিয়ে ঘুমায় এবং এ সময় যদি নিতম্ব মাটি থেকে পৃথক না হয় তাহলে কি অজু ভাঙবে? এর উত্তরে অনেক ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে ‘হেলান দিয়ে ঘুমানোর সময় যদি নিতম্ব মাটি থেকে পৃথক না হয় তাহলে অজু ভঙ্গ হবে না। (হিন্দিয়া: ১/১২, আল মুহিতুল বুরহানি: ১/৬৮, রদ্দুল মুহতার: ১/১৪৩, আহসানুল ফতোয়া: ২/২২-২৩, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৩/৫৬)

ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিতরাসুলুল্লাহ বলেছেন,

لَيْسَ عَلَى مَنْ نَامَ سَاجِدًا وُضُوءٌ، حَتَّى يَضْطَجِعَ، فَإِنَّهُ إِذَا اضْطَجَعَ، اسْتَرْخَتْ مَفَاصِلُهُ

সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অযু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা, চিৎ বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে]।  (মুসনাদে আহমাদ ২৩১৫ আবু দাউদ ২০২)

এখানে অজু না ভাঙার মূল যে কারণটি দেখা যাচ্ছে, সেটি হলোনিতম্ব মাটি থেকে পৃথক না হওয়ার কারণে কোমরের নিচের অংশ মাটি, ফ্লোর, চেয়ার ইত্যাদির সাথে ভালোভাবে এঁটে লেগে থাকা।

যদি ঘুমন্ত অবস্থায় কোমরের নীচের অংশ মাটি, ফ্লোর, চেয়ার ইত্যাদি থেকে পৃথক হয়, তাহলে অজু নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে নামাজের জন্য পুনরায় অজু করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৩৫; ফতোয়া খানিয়া: ১/৪১; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১৯)

নামাজের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে অজু ভঙ্গ হবে কি হবে নাএ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কেউ বলেছেন, সুন্নত নিয়মে নামাজ পড়া অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না। যেমন আল্লামা ইবনে হুমাম (রহ.) বলেন- ‘দাঁড়ানো অবস্থায়, বসে, রুকু-সেজদা অবস্থায় চাই তা নামাজের ভেতরে হোক বা বাইরে হোক ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, কারণ তখনও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ধারণ ক্ষমতা কিছুটা হলেও অবশিষ্ট থাকে। কিছুই না থাকলে তো পড়ে যেত। (ফাতহুল কাদির: ১/৩৮)

হানাফি মাজহাবের ইমামদের মতে, নারীরা তাদের জন্য নির্ধারিত নিয়মে নামাজ পড়া অবস্থায় সেজদায় ঘুমিয়ে পড়লে অজু ভঙ্গ হবে। কারণ তারা যে তরিকায় সেজদা করে তাতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়াগুলো ঢিলে থাকে। তবে কিছুসংখ্যক ফকিহ নামাজের ভেতর সেজদারত অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ না হওয়ার কথা বলেন। চাই সেজদা সুন্নত তরিকায় করুক বা না করুক। এর কারণ হিসেবে তারা ওই হাদিসকে পেশ করেন যাতে সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ না হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। আর সে হাদিসে সুন্নত তরিকায় সেজদা করতে হবে এমন কোনো কথা উল্লেখ নেই।

ফকিহগণের মতভেদের ব্যাপারে আল্লামা শামী (রহ.) বলেন, সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হবে কি নাএ ব্যাপারে ফকিহগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ বলেন, নামাজের ভেতরে হোক বা বাহিরে হোক সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হবে না। তুহফাতুল ফুকাহা কিতাবে এটিকে সহিহ আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং খুলাসাতুল ফতোয়ায় এটিকে জাহিরুল মাজহাব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। খানিয়া কিতাবে এটিকে জাহিরুর রিওয়ায়াহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু যাখীরা কিতাবে প্রথম মতটিকেই প্রসিদ্ধ মত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সুন্নত তরিকায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হবে না। অন্যথায় ভঙ্গ হয়ে যাবে। বাদায়েউস সানায়ে কিতাবে এটিকে আকরাব ইলাস সওয়াব (সঠিকতার নিকটতম) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নামাজের ভেতর সুন্নত তরিকায় না ঘুমালেও অজু ভঙ্গ না হওয়ার কথা যে বলেছি তা আমরা হাদিসের কারণে বলেছি। ইমাম যায়লাঈ (রহ.) বাদায়েউস সানায়ের মতটিকেই প্রাধান্য দিয়ে বলেন- নামাজের ভেতরে হলে অজু ভঙ্গ হবে না কারণ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন ওই ব্যক্তির উপর অজু ওয়াজিব নয় যে দাঁড়িয়ে বা বসে অথবা সেজদারত অবস্থায় ঘুমিয়েছে। আর নামাজের বাহিরে হলে সুন্নত তরিকায় ঘুমালে হলে অজু ভঙ্গ হবে না। আর সুন্নত তরিকায় না হলে অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইবনে নুজাইম আল বাহরুর রায়েকে এবং আল্লামা হালাভী (রহ.) শরহুল মুনয়াতে উক্ত অভিমতকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। (ফতোয়ায়ে শামী: ১/১৪২(সাঈদ), আল বাহরুর রায়েক: ১/৭৩(থানবী)

হেলান দিয়ে ঘুমানোর ক্ষেত্রেও ফুকাহায়ে কেরামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। আল্লামা হাসকাফি (রহ.) আব্দুররুল মুখতার কিতাবে লেখেন, জমিনে নিতম্ব স্থির রেখে ঘুমালে অজু ভঙ্গ হবে না যদিও ঘুম অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত হয়। অন্যত্র তিনি বলেন, যদিও সে কোনো কিছুর সাথে হেলান দিয়ে ঘুমায়।

কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত সবগুলো ফতোয়ার ওপর আমল করা উচিত হবে না বলে মনে করেন অনেক ফুকাহায়ে কেরাম। নামাজে বা নামাজের সেজদায় ঘুমালেও সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে অজু ভেঙে যাওয়ার কথা বলেছেন তারা।

এ ব্যাপারে গাঙ্গুহী (রহ.) এবং আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.) বলেন, বর্তমানে যেহেতু মানুষ শারীরিকভাবে দুর্বল এবং তারা প্রচুর পরিমাণে আহার করে থাকে ফলে পেটের ভেতর গ্যাস ইত্যাদি সৃষ্টি হয় এবং ঘন ঘন বায়ু বের হয় তাই ঘুমিয়ে পড়লে কখন যে তার বায়ু বের হয়ে যায় সে টেরও পায় না। এজন্য ঘুমের সব অবস্থায় অজু ভেঙে যাবে। তাদের মতে, নামাজের বাহিরে ইমাম তাহাবি (রহ.) এবং কুদুরি (রহ.)- এর মতামত অনুযায়ী ফতোয়া দেওয়াই সর্তকতা হিসেবে বিবেচিত হবে অর্থাৎ কেউ যদি জমিন বা যানবাহনের আসনে বসে এমনভাবে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে হেলান দেয়া বস্তু সরিয়ে ফেললে সে পড়ে যাবে তাহলে তার অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।

হেলানে অজু ভঙ্গ প্রসঙ্গে কাশ্মীরী (রহ.) বলেন, স্থান-কাল ও পাত্রভেদে এবং মানুষের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখেই ফতোয়া প্রদান করা হয়। তাই বর্তমান যুগে ঘুম অজু ভঙ্গকারী হওয়ার বিষয়ে পূর্ববর্তী ফুকাহায়ে কেরামের মতো বেশি ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এ যুগের লোকেরা অধিক পরিমাণে আহার করে থাকে (যার দরুন পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয় এবং ঘন ঘন বায়ু বের হয়) ফলে নিতম্ব জমিনে স্থির থাকা অবস্থায়ও তাদের ওজু ছুটে যায়। (ফয়জুল বারি: ১/৪০৮, মাকতাবায়ে আশরাফিয়া)

রশিদ আহমদ গাংগুহী রহ.বলেন, আমাদের এই বর্তমান সময়ের হানাফি মাজহাব অনুসারীদের জন্য উচিত হবে, তাদের মাজহাবে গৃহীত পূর্ব সিদ্ধান্ত নামাজের হালতে ঘুমালে অজু ভঙ্গ হবে নাথেকে সরে আসা। কেননা আমরা অনেক মানুষকে দেখেছি আসন পেতে ঘুমন্ত অবস্থায় তার অজু ছুটে গেছে অথচ সে তা টেরই পায়নি। (আলকাউকাবুদ্দুররী: ১/৫০)

★★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন

অজু না ভাঙার মূল যে কারণটি দেখা যাচ্ছে, সেটি হলোনিতম্ব মাটি থেকে পৃথক না হওয়ার কারণে কোমরের নিচের অংশ মাটি, ফ্লোর, চেয়ার ইত্যাদির সাথে ভালোভাবে এঁটে লেগে থাকা।

যদি ঘুমন্ত অবস্থায় কোমরের নীচের অংশ মাটি, ফ্লোর, চেয়ার ইত্যাদি থেকে পৃথক হয়, তাহলে অজু নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে নামাজের জন্য পুনরায় অজু করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৩৫; ফতোয়া খানিয়া: ১/৪১; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১৯)

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত বসে সামান্য ঘুম, এতে যদি কোনো কিছুর সাথে হেলান দেওয়া না হয়, তাহলে অযু ভেঙ্গে যাবেনা।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 156 views
...