ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লহির রহমানির রহীম
জবাব,
https://www.ifatwa.info/1893
নং ফাতাওয়ায়
বলা হয়েছে যে, জ্ঞানার্জন
সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত এবং হাদীসে তাগিদ এসেছে। আপাতত আপনাদের সামনে একটি হাদীস উল্লেখ
করছি।
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত,নবীজী সাঃ বলেনঃ
ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲِّ
ﺻﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋﻠﻴﻪِ ﻭﺳﻠَّﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝَ : ( ﻃَﻠَﺐُ ﺍﻟﻌِﻠْﻢِ ﻓَﺮِﻳْﻀَﺔٌ ﻋَﻠَﻰْ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ
) . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ( 224 )
জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। এখন প্রশ্ন হল কতটুকু
জ্ঞানার্জন একজন মুসলমানের উপর ফরয? এ সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রাহ, বলেনঃ
لَا شَكَّ فِي فَرْضِيَّةِ عِلْمِ
الْفَرَائِضِ الْخَمْسِ وَعِلْمِ الْإِخْلَاصِ؛ لِأَنَّ صِحَّةَ الْعَمَلِ
مَوْقُوفَةٌ عَلَيْهِ وَعِلْمِ الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ وَعِلْمِ الرِّيَاءِ؛
لِأَنَّ الْعَابِدَ مَحْرُومٌ مِنْ ثَوَابِ عَمَلِهِ بِالرِّيَاءِ، وَعِلْمِ الْحَسَدِ
وَالْعُجْبِ إذْ هُمَا يَأْكُلَانِ الْعَمَلَ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ،
وَعِلْمِ الْبَيْعِ وَالشِّرَاءِ وَالنِّكَاحِ وَالطَّلَاقِ لِمَنْ أَرَادَ
الدُّخُولَ فِي هَذِهِ الْأَشْيَاءِ
দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ফারাইয(ভিত্তি) তথা
কালেমা,নামায,রোযা,হজ্ব,যাকাত সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন ফরয। এতে কোনো প্রকার সন্দেহের
অবকাশ নেই। কেননা উপরোক্ত ফারাইযের উপর আমল করা সে সম্পর্কে জানাশোনা এবং হালাল-হারাম
ও রিয়া সম্পর্কে জানাশোনার উপর নির্ভরশীল। কারণ এবাদত কারী রিয়ার কারণে তার কৃত আমলের
সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
এবং হিংসা-নিন্দা ও অন্যের ভালোতে অপছন্দনীয় মনোভাব
সবই আ'মলের সওয়াব বিনষ্টকারী। এমনভাবে যে, যেমনভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে দেয়। এবং ক্রয়-বিক্রয়
ও বিবাহ-তালাকে প্রবেশকারী ব্যক্তিবর্গের জন্য সে সম্পর্কে জ্ঞানার্জন ফরয।
দৈনন্দীন জীবনে একজন মুসলিম
হিসেবে যা কিছু দায়িত্ব রয়েছে, ওই বিষয়গুলো যথাযথভাবে
পালন করতে গেলে যতটুকু ইলমের প্রয়োজন হয়,
ততটুকু ইলম অর্জন করা
ফরজ। সে নারী হোক বা পুরুষ হোক এতটুকুর মধ্যে সকলেই সমান।
যেমন আপনার ওপর নাময ফরজ।
তো নামাযের যাবতীয় মাসআলা, তেলাওয়াত, তাসবিহাত, তাশাহুদ,দুরুদ, দোয়া ইত্যাদি আপনাকে জানতে
হবে।
এমনিভাবে আপনার ওপর রোজা
ফরজ। তো রোজার যাবতীয় পালণীয় এবং বর্জনীয়,
রোজা ভঙ্গের কারণ এবং
কোন কারণবশত রোজা ভেঙ্গে গেলে তার কাজা- কাফফারার বিধান, ইত্যাদি বিষয় আপনাকে জানতে হবে। এভাবে যাকাতের মাসাআলা। কতটুকু সম্পদ থাকলে যাকাত ওয়াজিব হয়, তার কত পারসেন্ট যাকাত দিতে হবে। কাকে যাকাত দেওয়া যাবে কাকে
দেওয়া যাবে না ইত্যাদি বিষয়।
এমনিভাবে হজের মাসায়েল, কোরবানির মাসায়েল,
আপনি যদি ব্যবসা করতে
যান। তখন ব্যবসার ক্ষেত্রে হালাল-হারাম বাছাই করে চলার মাসাশেল। চাকরি বাকরি, মোয়ামেলা মুয়াশয়া,
লেনদেন চলাফেরা জন্য যতটুকু
ইলম প্রয়োজন আপনাকে তা জানতে হবে।
এভাবে আপনার জীবনে প্রতিটি
ক্ষেত্রে একজন মুসলিম হিসেবে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি তা অর্জন করতে হবে। এছাড়া আরো
কিছু বিষয় আছে যেগুলো প্রয়োজন অনুপাতে ওলামায়ে কেরাম থেকে জেনে নিতে হবে।
ইসলামের উপর চলতে গেলে যে যেই বিধানের সম্মুখিন হবে
তার উপর সে বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করা জরুরী। সুতরাং সাধারণ মানুষের কোনো বিষয় জানার প্রয়োজন
হলে বিজ্ঞ আলেমদের থেকে জেনে আমল করবে। যেমন ধরুন,
কেউ ছালাত আদায় করবে, তাহলে তাকে ছালাত বিষয়ে জানতে হবে, কেউ যাকাত দিবে তাকে যাকাত বিষয়ে জানতে হবে, কেউ ব্যবসা করবে তাকে ব্যবসার হালাল-হারাম সম্পর্কে জানতে হবে, কেউ বিবাহ করবে তাকে বিয়ের মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে জানতে হবে।
আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিটি মুসলিমের উপর জ্ঞান অন্বেষন করা ফজর’ (ইবনু মাজাহ, হা/২২৪; মিশকাত, হা/২১৮)।
এ হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম
বাগাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ইবাদত পালন করা শরীআ
বান্দার উপর আবশ্যক করে দিয়েছে সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা বান্দার উপর ফরজ। যেমন:
যাকাত প্রসঙ্গে জ্ঞান অর্জন করা যদি নিছাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, হজ্জ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা ফরয, হজ্জে যাওয়া সামর্থ্য হলে (শারহুস সুন্নাহ, ১/২৯০ পৃ.)।
★★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
একজন ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম পালন করার ক্ষেত্রে যতটুকু ইলম অর্জন
করতে না পারলে বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর হুকুম পালন করতে সক্ষম হবে না সেই পরিমাণ অর্জন
করা তার নিজের উপরে ফরজ। অন্য ব্যক্তির জন্য
ইলম অর্জন করা ফরজ নয়। বরং যারা জানে না তারা বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের কাছ থেকে জেনে
আমল করবেন। তাদেরকে দ্বীন শিখানো সাধারণ মুসলমানের উপর ফরজ নয়।