বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
■ যাকাত
ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। আল্লাহ তাআলা কুরআনের অধিকাংশ জায়গায় নামাজ আদায়ের
নির্দেশের পাশাপাশি যাকাত আদায়ের কথাও বলেছেন।
ইরশাদ হয়েছে-
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُواْ لأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللّهِ إِنَّ اللّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ.
“তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম
কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর
আল্লাহ তা দেখছেন।” (সূরা বাকারা: ১১০)
■ যাকাত
অনাদায়ে শাস্তি:
যারা যাকাত আদায় করে না, কেয়ামতের দিন তাদের কী কঠিন শাস্তি হবে, তা শুনলেই গা শিউরে উঠে, হৃদয় কেঁপে উঠে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ.
يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ.
যারা স্বর্ণরৌপ্য তথা ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না (যাকাত আদায় করে না, হে রাসূল!) আপনি তাদেরকে সেই দিনের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিয়ে
দিন, যেদিন স্বর্ণরৌপ্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত
করে তাদের চোয়ালে, পৃষ্ঠে ও পার্শ্বে দাগানো হবে। আর বলা হবে, এতো সেই সোনারূপা, যা তোমরা কুক্ষিগত করে রাখতে। সুতরাং আজ সম্পদ
কুক্ষিগত করে রাখার মজা দেখো। (সূরা তাওবা ৯/৩৪-৩৫)
■ কিছু হাদীসে এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার কঠিন শাস্তির কথা এসেছে। আল্লাহ পাক
আমাদের সকলকে তাঁর আযাব ও গজব থেকে হেফাজত করুন।
একটি হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
" مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ ، يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَيْهِ " يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ "
ثُمَّ يَقُولُ:
أَنَا مَالُكَ، أَنَا كَنْزُكَ.
ثُمَّ تَلَا:
لَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ.
الْآيَةَ "
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে যাকাত আদায় করেনি। কেয়ামতের দিন তার ঐ
সম্পদকে কপালে দুটি কালো চিহ্ন বিশিষ্ট সাপের আকৃতি দান করা হবে। ঐ সাপ তার গলা
পেচিয়ে ধরবে। অতঃপর তার উপর চড়ে দংশন করবে আর বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত ধনভাণ্ডার। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এই আয়াতটি) তেলাওয়াত করেন।” (সহীহ বুখারী: ১৪০৩)
■ যাকাতের
সওয়াব ও ফজীলত:
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ.
যারা আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ করে, তাদের খরচকৃত জিনিসের উদাহরণ হলো ঐ শষ্যদানার মতো, যে এক দানা থেকে সাতটি শীষ উদগত হয়, যে শীষগুলির প্রত্যেকটিতে আবার থাকে একশ করে
দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে এর চেয়েও বেশী দান করেন। তিনি সব ধরণের স্বচ্ছলতার
অধিকারী, সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত। (সুরা বাকারা ২/২৬১)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ইসলামের আইনে পরিচালিত দেশে অমুসলিম যারা আছেন তাদের খরচ মুসলিমদের তুলনায় অনেক
কম। বিষয়টা এমন নয়। বরং জিযয়া ও যাকাত প্রদানের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে।
১. যাকাত সব মুসলমানের উপর দেওয়া আবশ্যক নয়। বরং যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে
শুধু তাদের উপর আবশ্যক। পক্ষান্তরে জিযয়া। এক্ষেত্রে তাদের কোন নিসাব নাই। বরং সকল
অমুসলিমকে জিযয়া আদায় করা আবশ্যক।
২. জিযয়া ক্ষেত্র বিশেষ অনেক বেশিও হতে পারে। পক্ষান্তরে যাকাত এর ব্যতিক্রম।
৩. যাকাত শুধু নির্দিষ্ট সম্পদ ও অর্থের ক্ষেত্রে দিতে হয়। সব সম্পদের উপর যাকাত
ফরজ হয় না। কিন্তু জিযয়া সকল অমুসলিমকে আদায় করতে হয়। তার ইনকাম থাকুক বা না থাকুক।
৪. যাকাত আদায় করা এটা একটি ইসলামের বড় বিধান। সুতরাং যাকাত আদায় করলে অনেক
অনেক সওয়াব অর্জিত হয়। সেই হিসেবেও একজন মুসলমানকে পরিপূর্ণভাবে যাকাত আদায় করা
উচিত।