জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হল সতর ঢাকা।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْءَاتِكُمْ وَرِيشًا ‘
হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ (সূরা আ’রাফ ২৬)
পুরুষের সতর হল নাভির নিচ থেকে নিয়ে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। পক্ষান্তরে মহিলাদের হাত, পা, মুখ ছাড়া পূর্ণ শরীরই সতর।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে জামার হাতা কব্জির নিচে নামলে কোন সমস্যা নেই।
মহিলাদের জন্য এটি আরো ভালো।
,
(০২)
ইসলামে জামাআতের সহিত নামাজ পড়ার অনেক অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-
لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلَاةِ إِلَّا مُنَافِقٌ قَدْ عُلِمَ نِفَاقُهُ، أَوْ مَرِيضٌ، إِنْ كَانَ الْمَرِيضُ لَيَمْشِي بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلَاةِ.
আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, নামায (-এর জামাত) থেকে পিছিয়ে থাকত কেবল এমন মুনাফিক, যার নিফাক স্পষ্ট ছিল অথবা অসুস্থ ব্যক্তি। তবে আমরা অসুস্থদেরকেও দেখতাম, দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর করে তারা নামাযের জন্য চলে আসত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৮৫
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
صَلاَةُ الجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلاَةَ الفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً.
অর্থাৎ একাকী নামায পড়া অপেক্ষা জামাতে নামায আদায় করা সাতাশ গুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৭৫
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنِ الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْطَبَ ثُمَّ آمُرَ بِالصَّلاَةِ فَيُؤَذَّنَ لَهَا ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً فَيَؤُمَّ النَّاسَ ثُمَّ أُخَالِفَ إِلَى رِجَالٍ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ يَعْلَمُ أَحَدُهُمْ أَنَّهُ يَجِدُ عَرْقًا سَمِينًا أَوْ مِرْمَاتَيْنِ حَسَنَتَيْنِ لَشَهِدَ الْعِشَاءَ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই, অতঃপর সালাত কায়েমের আদেশ দেই, অতঃপর সালাতের আযান দেয়া হোক, অতঃপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামত করার নির্দেশ দেই। অতঃপর আমি লোকদের নিকট যাই এবং তাদের (যারা সালাতে শামিল হয়নি) ঘর জ্বালিয়ে দেই। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! যদি তাদের কেউ জানত যে, একটি গোশ্তহীন মোটা হাড় বা ছাগলের ভালো দু’টি পা পাবে তাহলে অবশ্যই সে ‘ইশা সালাতের জামা’আতেও হাযির হতো।
(সহীহ বুখারী ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪; মুসলিম ৫/২৪, হাঃ ৬৫১, আহমাদ ৭৩৩২) (আ.প্র. ৬০৮, ই.ফা. ৬১৬)
,
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শোনার পর নামাজের জামাআতে (মসজিদে) উপস্থিত হয় না এবং জামাআতে উপস্থিত না হওয়ার কোনো ওজর বা কারণও না থাকে; এমতাবস্থায় যদি সে একাকি নামাজ আদায় করে, তবে ওই ব্যক্তির (একাকি) নামাজ কবুল হবে না।একজন সাহাবা জানতে চাইলেন, ওজর বা কারণ বলতে কি বোঝায়? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ভয় অথবা অসুস্থতা। (আবু দাউদ)
আরো জানুনঃ
★সুতরাং পুরুষদের জন্য শরয়ী ওযর ব্যাতিত জামাআত ছাড়া নামাজ পড়া জায়েয নেই।
এতে নামাজ আদায় হয়ে গেলেও গুনাহ হবে।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীস সুনানে ইবনে মাজাহ এর ৭৯৩ নং হাদীসে এসেছে
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ بَيَانٍ الْوَاسِطِيُّ، أَنْبَأَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ إِلاَّ مِنْ عُذْرٍ " .
ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি আযান শুনলো এবং তার কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও জামাআতে উপস্থিত হল না, তার সালাত নাই।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আবূ দাঊদ ৫৫১ তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: ইরওয়াহ ৩৩৭, সহীহ আবূ দাউদ ৫৬০।
.
ব্যাখ্যা: (فَلَمْ يُجِبْهُ) ‘‘সে ডাকে সাড়া দিলো না’’। অর্থাৎ মাসজিদে উপস্থিত হলো না। (فَلَا صَلَاةَ لَه) ‘‘তার সলাত নেই’’। অর্থাৎ তার ঐ সলাত আদায় হলো না যদিও সে অন্যত্র ঐ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে থাকে। এ হাদীসের প্রকাশমান অর্থ হলো, যে মাসজিদে আযান হয়েছে সেখানে জামা‘আতে সলাত আদায় করা সলাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। যদি আযান শ্রবণকারী ঐ জামা‘আত ত্যাগ করে তাহলে তার সলাত বাতিল। কিন্তু জমহূর ‘আলিমগণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাই তারা এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ তার সলাত পূর্ণ হলো না। অর্থাৎ পূর্ণ সাওয়াব পেলো না অথবা এ সলাতে তার সাওয়াব অর্জিত হলো না যদিও সলাত পরিত্যাগ করার অপরাধ থেকে রেহাই পেল।
,
★মুখে আযানের আওয়াজ যেহেতু ধর্তব্য বলে ফতোয়া দিয়েছেন,আর ইসলামের বিধান মতে আযান উঁচু স্থানে দিতে হয়,যাতে মহল্লা,উক্ত গ্রামের সকলেই শুনতে পারে।
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সেই হিসেবে উঁচু মুখে যদি আযান দেওয়া হয়,তাহলে উক্ত আযান দাতার আওয়াজের ভিত্তিতেই বলা যাবে যে কত দুর পর্যন্ত আসলে সেটি পৌছবে।
,
সাধারণত যখন মুখে আযান দেওয়া হতো,তখন উঁচু আওয়াজের লোকেরাই মুয়াজ্জিন হতো,তখন এক মহল্লায় আযানের কিছু আওয়াজ হলেও শোনা যেতো।
সেই হিসেবে এখানে আপনি মহল্লা বা গ্রাম উদ্দেশ্য নিবেন,যে মুখে যানা দিলে এতটুকু পর্যন্ত পৌছবে।