আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
67 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আমার স্বামী,শ্বশুরবাড়ির সাথে নানাবিধ ঝামেলা & পর্যায়ক্রমে আমার ঈমান & আখলাক দুর্বল হয়ে যাওয়ায় আমি বিচ্ছেদ নিয়ে চিন্তা করি।& ইস্তেখারা করি আল্লাহর ফয়সালা র জন্যে।কিন্তু আমি ঠিক ঠাক বুঝতে পারছিনা।শুধু একদিন আমার দেবর কে স্বপ্নে দেখি!এশার নামাজের পর ইস্তেখারার নামায পড়ে।
উল্লেখ্য আমি মাহরাম মেনে চলি,& শ্বসুরবাড়িতে মোটামুটি সাপোর্টিভ ছিল এই ব্যাপারে।কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ৩/৪ বার আমার দেবরের সামনে পড়ে যেতে হয় সেখানে থাকাকালীন।এখন এই স্বপ্নে দেবরকে দেখা ইস্তেখারার পর,এইটা কি মিন করছে আমি বুঝতে পারছিনা।

আমি বিয়ের আগে যখন ইস্তেখারা করেছিলাম তখন আমি আমার স্বামীকে স্বপ্নে দেখেছিলাম না কিন্তু তার মতই কাউকে দেখেছিলাম(মানে দাড়িওয়লা),যিনি আমার গায়ে হাত তুলেছিল স্বপ্নের মাঝেই,মেয়ে দেখতে এসেই আমাকে টাচ করেছিল(স্বপ্নে)কিন্তু তারপরো এই বিয়েটা হয় খুব দ্রুততার সাথেই।বিবাহিত জীবনে কখনই ঝামেলা কমেনি যদিও(স্বপ্নের সাথে মিল ছিল,মারধোর,অন্য নারীর প্রতি আকর্ষন)।

আমি দ্বীনকে আকড়ে ধরার জন্যে শুধুই দ্বীনদার ফ্যামিলি দেখে বিয়ে করেছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে আমার স্বামীর আমলে গাফিলতি,ঠিকমত খোরপশ না দেয়া,আখলাক এর দুর্বলতার প্রভাবে আমি নিজেও দ্বীন থেকে সরে যেতে থাকি।যদিও তারা তাবলীগ করে,& সময় লাগায়।এটা দেখে আমার মনে তাবলীগ সম্পর্কেও কুধারনা জন্মে।(আল্লাহুম্মাগফিরলী)কারন তারা বাইরে সব ঠিক কিন্তু ভিতরে এত অবিচার করেছে।আর অপরদিকে আমি ছিলাম সদ্য দ্বীনে ফেরা,অন্তর ছিল ভিষন নরম।তাদের এহেন আচরনে ভিষন অবাক হতাম আর আল্লাহর উপর অভিমান জমাতাম(আস্তাগফিরুল্লাহ)

আলহামদুলিল্লাহ আমি আবার হেদায়েতের প্রতি ফিরে আসার চেষ্টা করতেছি,ঈমান আমলের দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু আমার মাঝে একটা বুঝ আসতেছে যে আমি বিয়ে কে আল্লাহর উপরে প্রাধান্য দিয়েছিলাম(আল্লাহুম্মাগফিরলি)তাই আমার এই অবস্থা হয়েছিল কিনা!এখন আবার ওই সম্পর্কে যেতে আমার ভয় হয় আমি আবার দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে যাই কিনা।তাই বিচ্ছেদের সিদ্বান্তে ইস্তেখারা করেছি।কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা।মানসিকভাবে আমি ভিষন বিপর্যস্ত।
ওই সম্পর্কে ফিরে গেলে আমি তার হক সঠিকভাবে আদায় করতে পারব কিনা এটা নিয়েও সন্দিহান।আমি তার উপর জুলুম করতে চাইনা,আল্লাহর লানত ও পেতে চাইনা।
আমাকে সদুপদেশ দিবেন দয়া করে।আমি একবার আল্লহকে পেয়ে হারিয়ে ফেলেছিলাম,পুনরায় আর চাইনা।বাকি জীবনটা শুধু আমার আল্লহর জন্যেই নিবেদন করতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

স্বামীর জন্য জরুরি হলো স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করা, তার সাথে সদব্যবহার করা।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

ألا واستوصوا بالنساء خيرا، فإنما هن عوان عندكم ليس تملكون منهن شيئا غير ذلك

শোন হে! তোমরা আমার পক্ষ হতে নারীদের প্রতি সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ কর। তারা তো তোমাদের কাছে আটকে আছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে এছাড়া আর কিছুর অধিকার রাখো না। (জামে তিরমিযী, হাদীস: ১০৮৩


https://ifatwa.info/91615/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-

ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ

নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)


হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)


স্বামীর উপর আবশ্যক হলোঃ- স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা। স্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনে একান্তে বসা ও খোশগল্প করা।

অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করা, তার মনের কথা জানা-বোঝা, তার কোনো চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য জরুরি।  প্রয়োজন মাফিক স্ত্রীকে সময় দেয়া।

বিস্তারিত জানুনঃ-

https://ifatwa.info/26084/


স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও একটি ইবাদত । যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

 হযরত আবু যর রাযি থেকে বর্ণিত,

 

عَنْ أَبِي، ذَرٍّ أَنَّ نَاسًا، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالُوا لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالأُجُورِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ . قَالَ " أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُونَ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ " أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ " .

কিছু সাহাবা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে। তিনি বললেন, আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।

সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে? তিনি বললেন, কী রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? (নিশ্চয় হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে। (সহীহ মুসলিম ২৩৭৬)

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!


১. স্বামীর উপর আবশ্যক হলোঃ- স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা। স্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনে একান্তে বসা ও খোশগল্প করা।

অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করা, তার মনের কথা জানা-বোঝা, তার কোনো চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য জরুরি।  প্রয়োজন মাফিক স্ত্রীকে সময় দেয়া।

এর পরও যদি আপনাকে আপনার স্বামী সময় না দেয় বা আপনার সাথে খারাপ আচরণ করে তাহলে তার গোনাহ হবে।


২. বোন, প্রথমত আমাদের পরামর্শ থাকবে যে, আপনি আপনার পরিবারের মুরুব্বী ও তাদের পরিবারের মুরুব্বীদের মাঝে বিষয়টি জানিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করতে পারেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে খুব বেশী বেশী দুআ করতে থাকবেন। বিশেষ করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। অন্তরকে পরিবর্তন করে দেওয়ার মালিক তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। 

তারপরও যদি তারা পরিবর্তন না হয় এবং আপনার ওপরে জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতন করতে থাকে তাহলে আপনি আপনার পরিবারের লোকদের সাথে পরামর্শ ক্রমে আবার ইস্তেখারা করে ডিভোর্স বা অন্য কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...